পয়লা বৈশাখে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা
পয়লা বৈশাখে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান নির্বিঘ্ন অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য পুলিশ, র্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বাঙালির প্রাণের উৎসবকে ঘিরে রমনা পার্ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার পুরোটাই সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, সারাদেশই নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে বলে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক জানান, কোনো সমস্যা ছাড়াই নববর্ষ পালন করতে পারবেন নগরবাসী। তবে বিকেল ৫টার মধ্যেই সব ধরনের অনুষ্ঠান শেষ করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া আগের চেয়ে প্রযুক্তিগতভাবে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি বসিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে নিরাপত্তা দেওয়া হবে। এ ব্যবস্থা শুধু রাজধানীতে নয়, সারাদেশে থাকবে। তবে এ জন্য সকলকে সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে।
জানা যায়, গত বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে এবার নববর্ষে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। বিকেল ৫টার মধ্যে সব ধরনের অনুষ্ঠান শেষ করে সূর্যাস্তের আগেই সবাইকে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করতে বলা হয়েছে। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তায় মাঠে কাজ করছে, যাতে কেউ নববর্ষের অনুষ্ঠানস্থলগুলোতে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে। রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যারা প্রবেশ ও ঘোরাঘুরি করছেন, তাদের ওপর বাড়তি নজরদারি রাখা হবে। শতাধিক সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে এসব স্থানে। র্যাবের পক্ষ থেকে বিশেষ পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছে।
বুধবার বিকেলে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, সবদিক বিবেচনা করে নগরবাসীর নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে নববর্ষ উদযাপনে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই জনগণ নিরাপদে নববর্ষ পালন করতে পারবেন। দেশে বড় ধরনের নাশকতা ঘটানোর ক্ষমতা জঙ্গিদের নেই। কারণ, পুলিশের সক্ষমতা অনেকখানি বেড়েছে।
একটি গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও তার আশপাশের স্থান, জাতীয় জাদুঘর, ধানমন্ডির ৩২ নম্বর, সচিবালয়, আদালত, মন্ত্রিপাড়া, গুলশান, বানানী, বারিধারাসহ কূটনৈতিক এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। আর গুরুত্বপূর্ণ মোড়, প্রধান প্রধান সড়কে বুধবার সন্ধ্যার পর থেকেই অস্থায়ী চেকপোস্ট বসিয়ে সন্দেহভাজনদের দেহ তল্লাশি শুরু করে পুলিশ।
গোয়েন্দা সূত্রটি আরো জানায়, অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ সময় কোনো গোষ্ঠী নাশকতা করতে পারে, গোয়েন্দারা এ ধরনের তথ্য দিয়ে সতর্ক থাকতে বলেছে। কারা এ ধরনের কাজ করতে পারে তাদের একটি তালিকাও সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা ইতিমধ্যেই করেছে। আপৎকালীন মুহূর্ত মোকাবিলায় র্যাবের হেলিকপ্টারসহ সব ধরনের প্রস্তুতি রাখতেও সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়েছে। সিসি ক্যামেরা বসানোর পরও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ, র্যাবসহ সরকারের সবগুলো বাহিনীর সমন্বয় করে নিরাপত্তা তদারকি করা হচ্ছে। পর্যাপ্তসংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে। আর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যেন শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব অনুষ্ঠান সন্ধ্যার আগেই শেষ করতে অনুরোধ করেছেন মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
এদিকে আজ পয়লা বৈশাখের দিন রমনা এলাকা দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। পুলিশ পল্টন মোড়ে কাঁটাতারের ব্যারিকেড দিয়েছে। এর বিকল্প হিসেবে চারটি রুট খোলা থাকবে। প্রথমটি বাংলামোটর, মগবাজার, রমনা থানা ক্রসিং হয়ে বেইলি রোড-কাকরাইল চার্চ ক্রসিং হয়ে রাজমনি-নাইটিংগেল মোড় হয়ে ফকিরাপুল; দ্বিতীয়টি কাঁটাবন, হাতিরপুল, বাংলামোটর, সোনারগাঁও হয়ে ফার্মগেট ও মগবাজার; তৃতীয়টি কাঁটাবন, নীলক্ষেত মোড়, পলাশী, ঢাকেশ্বরী মন্দির, বকশীবাজার, চাঁনখারপুল, ফুলবাড়িয়া হয়ে গুলিস্তান ও সদরঘাট এবং চতুর্থটি মিরপুর রোড, সায়েন্স ল্যাব, নিউমার্কেট ক্রসিং, আজিমপুর, ঢাকেশ্বরী মন্দির, বকশীবাজার, চানখাঁরপুল ও ফুলবাড়িয়া। আর উত্তর দিক থেকে যারা আসবেন তাদের যানবাহন নেভি হাউস থেকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের রাস্তায় পার্কিং করতে পারবেন। পূর্ব দিক থেকে যারা আসবেন তারা জিরো পয়েন্ট থেকে আব্দুল গণি রোড, মৎস্য ভবন ও সেগুনবাগিচার কার্পেট গলিতে পার্কিং করতে পারবেন। দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে যারা আসবেন তারা জগন্নাথ হল থেকে পলাশীর রাস্তায় এবং পশ্চিম দিক থেকে যারা আসবেন তারা আজিজ সুপার মার্কেটের পাশের রাস্তায় গাড়ি রাখতে পারবেন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।