- হোম
- >
- শিল্প-সাহিত্য
- >
- নড়াইলে পুঁজির অভাবে বিলুপ্তির পথে মৃৎশিল্প
নড়াইলে পুঁজির অভাবে বিলুপ্তির পথে মৃৎশিল্প
একসময় নড়াইলে জেলা মৃৎশিল্পের জন্য সুপ্রসিদ্ধ ছিল। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা এখানে এসে মাটির তৈরী জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যেত। এমন এক সময় ছিল যখন, বাংলার ঘরে ঘরে মাটির তৈরী হাড়ি পাতিল, কলসি, থালা, বাটি, ফুলের টব, ফুলদানি, ব্যাংক, খাবার টেবিল, টালি, টাইলস, খেলনা, সৌখিন সামগ্রীসহ নানা জিনিসপত্রের ব্যবহার হত। কিন্তু সরকারি পৃষ্টপোষকতা ও পর্যাপ্ত পুঁজির অভাবে দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে নড়াইলের মৃৎশিল্প।
মৃৎশিল্পের বিভিন্ন উপাদানে গ্রামীন বাংলার হাসি কান্না, সুখ-দুঃখের রোমাঞ্চকর, মনোমুগ্ধকর ছবি ফুটিয়ে তুলতেন শিল্পীরা। মৃৎশিল্পীরা এই শিল্পের উপর ভিত্তি করে এক সময় শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত করে তোলে। দেশের অর্থনীতিক বাজার চাঙ্গা রাখতে মৃৎশিল্পের কোন বিকল্প ছিল না। তবে বর্তমান দৈনন্দিন জীবনে প্লাস্টিক, স্টিল, ম্যালামাইন, চিনামাটি, সিলভারসহ বিভিন্ন ধরনের ধাতব পদার্থের তৈরী হাড়ি-পতিল, খেলনা, সৌখিন জিনিসপত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় ধ্বংসের মুখে প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও পর্যাপ্ত পুঁজির অভাবে অনেক শিল্পী বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশা বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
এক সময় পহেলা বৈশাখী মেলাসহ বছরের অন্যান্য সময়ে অনুষ্ঠিত মেলা পূজা-পার্বনে মাটির তৈরি খেলনা, মনোমুগ্ধকর সৌখিন জিনিসপত্র তৈরিতে পাল পাড়ায় মহাধুম পড়ে গেলেও বর্তমানে তা শুধুই স্বপ্ন। তবে গত বছরগুলোর তুলনায় এবার আসন্ন বৈশাখী মেলাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে মৃৎ শিল্পের বিভিন্ন উপাদান যোগান দিতে শিল্পীদের মাঝে দেখা যায়নি উৎসাহ ও উদ্দীপনা। জেলার বিভিন্ন বেশির ভাগ শিল্পী ব্যবসা ধরে রাখতে এ বছর শুধুমাত্র হাড়ি পাতিল, ফুলের টব তৈরীতেই ব্যস্ত সময় পার করছেন। মৃৎশিল্পীরা অনেকটা ভালবেসেই শতকষ্টের মধ্যেও এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। শিল্পীদের মাঝে উৎসাহ, উদ্দীপনার অভাব মৃৎ শিল্পের অস্তিত্বকে ক্রমান্বয়ে সংকটাপন্ন করে তুলছে। পুঁজির স্বল্পতা, আর্থিকভাবে ক্রমাগত লোকসান মৃৎ শিল্পের স্থায়ীত্ব ও প্রসারকে ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্থ করছে। মৃৎ শিল্পের প্রতি সরকারের উদাসীনতা, মৃৎ শিল্প-বান্ধব ব্যাংক ঋণের কোন ব্যবস্থা না থাকায় অনেক শিল্পীই তাদের বাপ-দাদার রেখে যাওয়া পুরাতন পেশা ছেড়ে দিচ্ছে।
নড়াইল উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম বিভিন্ন পাল পাড়া মৃৎ শিল্পের জন্য বিখ্যাত। তিন সন্তানের জননী অর্চনা দাস- তার বাড়িতে ঢুকতেই চোখে পড়ল, বারান্দায় দরজার সামনে বসে মা মেয়ে চানাচুর প্যাকেটিং করছেন। মৃৎ শিল্পের দুরাবস্থার কারণে বিকল্প পেশা হিসেবে চানাচুর ভেজে মোড়কজাত করে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালান। তিন মেয়ের পড়ালেখা ও ভরন-পোষনের অর্থ জোগাড় করতে অনিচ্ছা সত্তেও তিনি অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হচ্ছেন। তার মত অবস্থা এ গ্রামের অনেকেরই। কেউ বা কৃষিকাজ, ড্রাইভারী, ব্যবসাসহ অন্যপেশায় জীবিকা অর্জনের চেষ্টা করছেন। এখানে, প্রায় প্রতিটি পরিবারই মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত। বংশানুক্রমে তারা এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। মৃৎ শিল্পের বর্তমান অবস্থা নাজুক হলেও আনেকেই আবার এই শিল্প ছেড়ে অন্য কোন কোন পেশা গ্রহন করার কথা ভাবতেই পারেন না।
মৃৎশিল্পী আনন্দ মোহন জানান, বর্তমানে মৃৎ শিল্পের বাজার খুবই খারাপ। কোন রকমে খেয়ে পড়ে চলে। শিল্পী না বাঁচলে শিল্প বাঁচে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার এই শিল্পের জন্য আলাদা ব্যাংক ঋণ, সরকারি বেসরকারি অনুদানের ব্যবস্থা করলে মৃৎ শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব।
নড়াইল সদরের নলদী এলাকার কার্তিক পাল জানান, পূর্বে এখানকার সকল পরিবারের লোকজন মৃৎ শিল্পের সাথে জড়িত ছিল। কিন্তু বর্তমানে সেখানে ৭-৮টি পরিবার কোন রকমে মৃৎ শিল্পের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত রেখেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, নানা উদ্যেগ গ্রহন করা প্রয়োজন। তা না হলে অচিরেই বাংলার বুক থেকে হারিয়ে যাবে একসময়ের জনপ্রিয়, ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্প।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।