অর্থ পাচার, করফাঁকির তথ্য সংগ্রহ করছে এনবিআর
রবিবার দৈনন্দিন খবরাখবরে দুনিয়ার গণমাধ্যম হঠাৎ আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠল যেন এক প্রচণ্ড ঝাঁকিতে। ধাক্কার নাম— দ্য পানামা পেপারস। আর সেই পানামা পেপারস বাংলাদেশের ২৫ ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদের অর্থ পাচার, করফাঁকি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সম্প্রতি ওয়াশিংটনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) পানামা নথিতে ১৪০ জন ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদের তথ্য প্রকাশ হয়। সে নথিতে বাংলাদেশের ২৫ ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদের নাম প্রকাশ করা হয়, তারা তথ্য গোপন করে করফাঁকি দিয়ে অর্থপাচার করে সে অর্থ বিনিয়োগ করেছেন।
পানামার লিগ্যাল ফার্ম ‘মোসাক ফনসেকা’ থেকে এসব গোপন নথি ফাঁস হয়। যা নিয়ে বর্তমান বিশ্ব নেতারা নড়ে চড়ে বসেছেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি), শুল্ক গোয়েন্দাসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সংস্থা ইতোমধ্যে এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এর আগে বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অর্থপাচারের বিষয়টি তদন্ত করতে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে।
এনবিআর থেকে জানা যায়, অর্থপাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার তারা। যেসব দেশে করফাঁকি দিয়ে অর্থপাচার হয়েছে তা নিয়ে জোরালোভাবে কাজ শুরু হয়েছে। পানামা নথিতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদের নাম প্রকাশ হওয়ায় নড়েচড়ে বসা; যার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করা হচ্ছে।
তবে যে তথ্য প্রকাশ পেয়েছে তাতে কীভাবে অর্থপাচার হলো, কারা এর সঙ্গে জড়িত, এর বাইরেও আরও কোনোভাবে পাচার হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, ২৫ রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ছাড়াও এ নথিতে আসার বাইরেও কারা কারা জড়িত তাদের তথ্য সংগ্রহ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেকেন্ড হোম ও আমদানির নামে দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ অর্থপাচার হয়েছে। প্রতিনিয়ত হচ্ছেও, ইতোমধ্যে সে বিষয়েও জোরালো কাজ করছে রাজস্ব বোর্ড।
সূত্র আরও জানায়, অফসোর কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ, স্ত্রী নিলুফার জাফর এমপি ও পরিবার।
সামিট ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড মার্কেন্টাইল করপোরেশন কোম্পানির চেয়ারম্যান আজিজ খান, স্ত্রী আঞ্জুমান আজিজ খান, কন্যা আয়েশা আজিজ খান, ভাই জাফর উমেদ খান ও ভাজিতা মোঃ ফয়সল করিম খান। এছাড়া ইউনাইটেড গ্রুপের হাসান মাহমুদ রাজা, খন্দকার মইনুল আহসান(শামীম), আহমেদ ইসমাইল হোসেন, আখতার মাহমুদ নামও রয়েছে।
তালিকায় নাম রয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি এ এমএম খানের, মোমিন টি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজমল মইন, পাট ব্যবসায়ী দিলিপ কুমার মোদি।
সি পার্ল লাইন্সের চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ সিরাজুল হক, বাংলা ট্রাক লিমিটেডের মোঃ আমিনুল হক, নাজিম আসাদুল হক, তারিক একরামুল হক, ওস্টোর্ন মেরিনের পরিচালক সোহেল হাসান, মাসকট গ্রুপের চেয়ারম্যান এফএম জুবাইদুল হক ও স্ত্রী সালমা।
সেতু করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহতাবুদ্দিন চৌধুরী, স্ত্রী উম্মেহর, স্কাপর্ক লিমিটেড, অমনিকেম লিমিটেডের চেয়ারম্যান ইফতেখারুল আলম ও পুত্রবধু ফওজিয়া।
এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মোঃ নজিবুর রহমান বলেন, এসব বিষয়ে এনবিআর খুবই সক্রিয় রয়েছে। তথ্য সংগ্রহ ও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।