প্রতিবন্ধীদের কাজে নিয়োগ দিন: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অটিজমসহ সব ধরনের প্রতিবন্ধী শিশুদেরও বেঁচে থাকার অধিকার আছে। তাদের মেধা ও যোগ্যতা প্রকাশেরও অধিকার আছে। তাদেরকে সে সুযোগ দিতে হবে।
তাদেরকে সুরক্ষা দেওয়া এবং বিকশিত করা রাষ্ট্রেরও একটি কর্তব্য বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেটা আমরা করছি এবং করবো। এজন্য প্রত্যেক জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে প্রতিবন্ধী কেন্দ্র খোলার ঘোষণা দেন তিনি।
শনিবার (২ এপ্রিল) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে নবম বিশ্ব অটিজম দিবসের আলোচনা সভায় বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন উৎসবের শুভেচ্ছা কার্ড তিনি এসব শিশুদের আঁকা ছবি দিয়ে করে থাকেন বলেও তাঁর বক্তব্যে জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিবন্ধীরাও মানুষ, তারাও আমাদের সমাজের অংশ। একটি দেশ গড়তে হলে সব ধরনের মানুষকে নিয়েই এগোতে হবে।
প্রতিবন্ধীদের কাজের প্রতি একাগ্রতা থাকে অনেক বেশি এবং কর্মক্ষেত্রে তাদের উপস্থিতিও অন্যদের তুলনায় সন্তোষজনক তাই অটিজমসহ সকল ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়োগে বেসরকারি সংস্থার প্রতি আহ্বানও জানান প্রধানমন্ত্রী।
সকলের সমন্বিত উদ্যোগ ও উপযোগী পরিবেশ অটিজম ব্যক্তিদেরকে সাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে আগে অটিজম সম্পর্কে কোনো সচেতনতাই ছিলো না। বাবা-মায়েরা তাদের সন্তান অটিস্টিক হলে লুকিয়ে রাখতেন। এমনকি যে মায়ের অটিস্টিক সন্তান জন্ম নিতো, তাদেরকে সামাজিকভাবে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সইতে হতো। অথচ এজন্য বাবা-মা দায়ী নন। তবে এখন আর সে অবস্থা নেই। এখন এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি হয়েছে। আজ বিশ্বব্যাপী সে বিষয়ে সচেতনতা এসেছে। জাতিসংঘ রেজুলেশন নিয়েছে।
তিনি বলেন, এসব বিশেষ শিশুদের বাবা-মা যখন থাকবে না, তখন তাদের দেখার কেউ থাকবে না। কেননা, বিশেষ করে মায়েরাই তাদের দেখাশোনা করে থাকেন। এ বিষয় বিবেচনা করে অভিভাবকহীন প্রতিবন্ধী শিশুদের রাখা, সুরক্ষা, চিকিৎসাসেবাসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। এর আরও সম্প্রসারিত হবে।
অটিস্টিকসহ প্রতিবন্ধী শিশু ও ব্যক্তিদের কল্যাণে তার সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রতিবন্ধীদের জন্য সেনানিবাসগুলোতে প্রয়াস নামে একাডেমি করা হয়েছে। এ ধরনের একাডেমি আরও তৈরি করার কাজ চলছে। বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবন্ধীদের জন্য স্কুল রয়েছে। বেসরকারি খাতেও এদের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য আমরা ব্রেইল বই দিচ্ছি। প্রতিবন্ধীদের জন্য পরীক্ষায় ৩০ মিনিট বেশি সময় দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা শিশু হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন শিশুদের বিশেষ সুবিধাসহ যথাযথ চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিবন্ধীদের জন্য সফটওয়্যার ডেভেলপ করা হচ্ছে।
তিনি জানান, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তিদের জীবন-মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইনস্টিটিউট ফর পেডিয়াট্রিক নিউরো-ডিজঅর্ডার এন্ড অটিজম’ এর মাধ্যমে উপজেলা পর্যায়ে ডাক্তারদের অটিজম ও স্নায়ু-বিকাশজনিত সমস্যা বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর ও আইসিডিডিআরবি’র মাধ্যমে অটিস্টিক শিশুদের প্রাথমিক পরিচর্যাকারী হিসেবে মায়েদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। অটিজম ও স্নায়ু-বিকাশজনিত সমস্যা প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করার জন্য বিশেষজ্ঞ গ্রুপের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের উপযোগী করে স্ক্রিনিং টুলস প্রণয়ন কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উপযোগী বা প্রতিবন্ধীবান্ধব সফটওয়্যার-হার্ডওয়্যার ও ওয়েবসাইট ডেভেলপ করতে নির্মাতাদের আহ্বান জানান তিনি।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অটিজমের শিকার বা প্রতিবন্ধীরা বাংলাদেশের জন্য সুনাম বয়ে আনছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা প্রতিবন্ধীদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে এসেছে। বিশেষ অলিম্পিকে অসংখ্য স্বর্ণপদকসহ দেশের জন্য সম্মান বয়ে এনেছে। লেখাপড়ায়ও অটিজম শিশুরা ভালো ফলাফল করে যাচ্ছে। এসব শিশুদের মেধা বিকাশের সুযোগ দিলে তারা দেশের জন্য আরও অনেক কিছু করতে পারবে। দেশকে উন্নত করতে হলে প্রতিবন্ধীদের তাই অবহেলা করা যাবে না। মেধা বিকাশের মাধ্যমে তারাও দেশের জন্য কিছু করুক, সে সুযোগ দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই শিশুদের জন্য আমরা একটা স্থায়ী কিছু করে রেখে যেতে চাই। সরকার পরিবর্তিত হলে এসব উদ্যোগ যেন বন্ধ করে দেওয়া না হয়, সেই ব্যবস্থা করা হবে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।