হাজারীবাগে কাঁচা চামড়া ঢুকবে না
সরকার বাধ্য করলেও সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে একটি ট্যানারিও চালু করার অবস্থায় নেই। কয়েকটি ট্যানারি অবকাঠামো নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে। তবে সেখানে এখনো গ্যাস-সংযোগ দেয়নি সরকার। ফলে আজ শুক্রবার থেকে শিল্পনগরীর কোনো ট্যানারি চামড়া প্রক্রিয়াজাত শুরু করা যাচ্ছে না।
শিল্প মন্ত্রণালয় চাইছে, ট্যানারির মালিকেরা হাজারীবাগের বদলে সাভারে কাঁচা চামড়া নেওয়া শুরু করুন। কাজ শুরু হলে যেসব সমস্যা সামনে আসবে সেগুলোর একে একে সমাধান করা হবে। এ কারণে আজ থেকে হাজারীবাগে কাঁচা চামড়া ঢুকতে না দেওয়ার সিদ্ধান্তটি বহাল রেখেছে সরকার। এ জন্য ঢাকা জেলা প্রশাসন ও পুলিশকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
রাজধানীতে দূষণ রোধে হাজারীবাগ থেকে সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে ট্যানারি স্থানান্তরে শিল্প মন্ত্রণালয় কয়েক দফা আলটিমেটাম দিলেও তা কাজে আসেনি। ২০১৩ সালে প্লটের নকশা অনুমোদনের পর ট্যানারি স্থানান্তরের জন্য প্রকল্প পরিচালক ২৮ বার তাগিদ দিয়েছেন। নৌ ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে বেশ কয়েকবার আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ শিল্প মন্ত্রণালয়ের দেওয়া আলটিমেটামের সময়সীমা গতকাল শেষ হলেও যেতে পারেনি কোনো ট্যানারি।
এদিকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আলটিমেটাম অনুযায়ী, গত রবিবার স্বরাষ্ট্র সচিব, ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, পুলিশের ডিআইজি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ট্যানারি মালিকদের দুটি সংগঠন বিএফএলএলএফইএ ও বিটিএকে এক চিঠি দিয়ে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, শুক্রবার (আজ) থেকে কাঁচাচামড়া হাজারীবাগে আর ঢুকতে দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে নিয়মিত তা তদারকি করা হবে।
তিনি বলেন, শিল্পমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। যদিও ট্যানারি মালিকরা স্থানান্তরের জন্য সময় চেয়ে আসছেন। কিন্তু তারা নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি।
তিনি বলেন, ট্যানারি দ্রুত স্থানান্তরের জন্য ক্ষতিপূরণের অর্থ দেওয়ার ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করে দেওয়া হবে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে প্রকল্প পরিচালককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সাবেক সভাপতি বেল্লাল হোসেন বলেন, ট্যানারি মালিকরা দ্রুত স্থানান্তরের জন্য কাজ করছেন। অর্থ সংকটের কারণে পারছেন না। এ জন্য ক্ষতিপূরণের অর্থ দেওয়ার ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, সরকারের কঠোর অবস্থানে না থেকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত। ট্যানারি স্থানান্তরের জন্য জুন পর্যন্ত সময় দেওয়ার দরকার। আগামী তিন মাস সময় দিলে সব ট্যানারি যেতে পারবে।
বেল্লাল হোসেন বলেন, ব্যবসায়ীদের প্রতি কঠোর হলে তারা সংকটে পড়বেন। এতে ট্যানারি মালিকরা আন্দোলনে যেতে পারেন। চামড়া ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে জটিলতার তৈরি হবে। অন্যদিকে হাজারীবাগে চামড়া না এলে তা পাচার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে চামড়া খাতের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সে জন্য তারা সময় বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে যেতে পারেন।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ট্যানারি স্থানান্তরের জন্য মালিকরা কাজ করছেন। আগামী জুনের মধ্যে বেশিরভাগ ট্যানারি স্থানান্তর হবে। জুন পর্যন্ত সময় দিলে আর কোনো জটিলতা তৈরি হবে না।
তিনি বলেন, সরকারের কঠোর অবস্থানে হতাশ ব্যবসায়ীরা। হাজারীবাগে কাঁচাচামড়া ঢুকতে না দেওয়ার সিদ্ধান্তে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন কাঁচাচামড়া ব্যবসায়ীরা। এতে ট্যানারি মালিকরাও চামড়া পাবেন না। তা পাচার হবে।
সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ব্যবসায়ীরা দ্রুত যেতে চান। এ জন্য তারা কাজ করছেন। এখন তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সময় নির্ধারণ করে স্থানান্তর প্রক্রিয়া সহজ করার দাবি জানান তিনি।
সাভার শিল্পনগরীতে এখন পর্যন্ত ১৫৫টির মধ্যে মাত্র ৫টি ট্যানারি স্থানান্তরের প্রস্তুতি রয়েছে। এক মাসের মধ্যে ৩০টির মতো স্থানান্তর করতে পারবে। অন্যান্য ট্যানারির মধ্যে ৮৪ ট্যানারির কারখানা ভবন নির্মাণের জন্য কলাম ঢালাই ও মাটির নিচের অংশের কাজ হচ্ছে। ২৯টি ট্যানারি ভবন উপরের অংশের নির্মাণকাজ করছে। আইনি জটিলতার কারণে ১২টি ট্যানারির কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে সরকারের অংশের কাজে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। ইতোমধ্যে সিইটিপির দুটি মডিউল পরীক্ষামূলক চালু করা হয়েছে। অন্যান্য কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।