ছাতকে আ.লীগের প্রতিদ্বন্দ্বি দলীয় বিদ্রোহীরা
ছাতকে ৩১ মার্চ (বৃহস্পতিবার) ১৩টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। উপজেলা নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ইতোমধ্যে সকল ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। পাঁচ স্তরের নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
গত ২ মার্চ মনোনয়পত্র দাখিল করে প্রার্থীরা। ১৪ মার্চ প্রতীক বরাদ্ধের পর শুরু হয় নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনা। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে উৎসবমূখর পরিবেশে প্রার্থীরা প্রচারাভিযান চালায়। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট চেয়ে তারা মাঠ চষে বেড়ান। ভোটাররাও তাদের পছন্দের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারনায় অংশ গ্রহণ করেছেন। নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারনা মঙ্গলবার রাত ১২টায় শেষ হয়েছে।
উপজেলার আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত ও জাপার প্রার্থীসহ ৬৫ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী, সাধারণ সদস্য পদে ৫২৮ এবং সংরক্ষিত আসনে ১২৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে প্রচারনায় এগিয়ে রয়েছে ৭টিতে আওয়ামী লীগ, ২টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, ২টিতে বিএনপি, ১টিতে জাপা ও ১টিতে জামায়াত। ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টি ইউনিয়ন বাদে ৯টিতে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি দলীয় বিদ্রোহীরা। দলীয় বিদ্রোহীদের কারণে আরো একাধিক ইউনিয়নে ভরাডুবি হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ছাতক উপজেলা আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত রয়েছে। একটি স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক এবং অপরটি ছাতক পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই কারণে জাতীয় সংসদ, পৌরসভা ও স্থানীয় নির্বাচন একপক্ষ নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে আসলে অপরপক্ষ বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে মাঠে নামে।
ছাতক সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাইফুল ইসলাম(নৌকা)ও বিদ্রোহী প্রার্থী সেলিম মিয়া (ঘোড়া) প্রতীকের মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করছে ভোটাররা। কালারুকা ইউনিয়নে- ঐক্যের হাওয়ায় দোলছে ধানের শীষ আর বিদ্রোহীর আগুনে পুড়ছে নৌকা। নৌকার বিদ্রোহীর কারণে এ ইউনিয়নে নৌকার ভরাডুবির সম্ভাবনা দেখছেন ভোটাররা। বিএনপির দুবলয়ে বিভক্ত থাকলেও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এক মঞ্চে উভয় বলয় এসে দাঁড়িয়েছেন। অপরদিকে, আওয়ামী লীগের দুবলয় দুস্থানে দাঁড়িয়ে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপির প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল হক (ধানের শীষ), আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান অদুদ আলম (নৌকা) ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন আফতাব উদ্দিন (আনারস)। নোয়ারাই ইউনিয়নে- আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আফজাল আবেদীন আবুল (নৌকা), বিএনপির মনোনীত সাবেক চেয়ারম্যান জোয়াদ আলী তালুকদার (ধানের শীষ)ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী দেওয়ান আবদুল খালিক পীর রাজা (চশমা) প্রতীকের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে আওয়ামী লীগের আফজাল আবেদীন আবুল ও বিএনপির জোয়াদ আলী তালুকদার আপন মামা-ভাগনা। গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বর্তমান চেয়ারম্যান সুন্দর আলী (নৌকা) ও বিদ্রোহী প্রার্থী আখলাকুর রহমানের(আনারস) প্রতীকের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এ ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী রয়েছেন বর্তমান মেম্বার দিলোয়ার হোসেন নজমুল(ধানের শীষ)। সিংচাপইড় ইউনিয়নে- আওয়ামী লীগের সাহাব উদ্দিন সাহেল(নৌকা), বিদ্রোহী প্রার্থী যুবলীগ নেতা মোজাহিদ আলী(আনারস) ও আশিকুল ইসলাম আশিক(চশমা)প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এখানে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকা ও আনারস প্রতিকের মধ্যে।
ইসলামপুর ইউনিয়নে- আওয়ামী লীগের আবদুল হেকিম(নৌকা), বিএনপির ২০দলীয় জোটের খেলাফত মজলিসের মাওলানা আকিক হোসাইন(ধানের শীষ), বিদ্রোহী প্রার্থী বাবুল মিয়া(আনারস) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াত নেতা বর্তমান চেয়ারম্যান এডভোকেট সুফি আলম সুহেল(টেলিফোন) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এখানে বিএনপির বিদ্রোহি প্রার্থী থাকার কারণে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইটি হবে নৌকা ও টেলিফোন প্রতীকের মধ্যে। জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান এডভোকেট সূফি আলম সুহেলের টেলিফোন প্রতীকের বিজয় নিশ্চিত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। জাউয়াবাজার ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম(নৌকা), বিএনপির এনামূল হক(ধান), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রেজা মিয়া তালুকদার(আনারস), বশির আহমদ(ঘোড়া)ও মুরাদ আহমদ(মোটরসাইকেল)প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এখানে আওয়ামী লীগের ৩জন বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় ধানের শীষ প্রতীকের পাল্লা ভারি হয়েছে বলে ভোটাররা মন্তব্য করছেন। ছৈলা-আফজলাবাদ ইউনিয়নে- আওয়ামী লীগের সাবেক চেয়ারম্যান গয়াছ আহমদ(নৌকা), বিএনপির ছায়েদ মিয়া(ধানের শীষ) ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল খালিক(আনারস)প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এখানে নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। উত্তর খুরমা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বর্তমান চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদ(নৌকা), বিএনপির আবদুল আলিম(ধানের শীষ)ও আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী শামছুল ইসলাম খাঁন(আনারস)প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এখানে নৌকা ও আনারস প্রতীকের মধ্যে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই হবে। দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুল মছব্বির(নৌকা), বিএনপির জাহাঙ্গীর আলম(ধানের শীষ) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রবাসী আফরোজ আলী(আনারস)প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ইউনিয়নে লড়াই হবে নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে। ১৩টি ইউনিয়নের ন্যায় এ ইউনিয়নেও ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে বিএনপির দুই ‘ম’ মিলন-মিজান একত্র হয়ে মাঠে কাজ করেছেন। চরমহল্লা ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা কদর মিয়া(নৌকা), বিএনপির আবুল হাসনাত (ধানের শীষ)। আলয়ামী লীগ বিদ্রোহী আজাদ মিয়া(চশমা)ও সিরাজুল ইসলাম (ঘোড়া), বিএনপির বিদ্রোহি প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ (আনারস) প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এখানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে। দোলারবাজার ইউনিয়নে- আওয়ামী লীগের শায়েস্তা মিয়া (নৌকা), বিএনপির নুরুল আলম(ধানের শীষ) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কয়েছ মিয়া রিপন(আনারস)প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুই মিয়ার মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
এছাড়া ভাতগাঁও ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান আওলাদ হোসেন মাস্টার (নৌকা), বিএনপির এসএম ছমরু মিয়া(ধানের শীষ)ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জাপার মনোনীত প্রার্থী গিয়াস মিয়া (লাঙ্গল) প্রতীকের মধ্যে ভোট যুদ্ধ হবে। এখানে নৌকা ও লাঙ্গল প্রতীকের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইর আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এখানে লাঙ্গল প্রতীকের বিজয় নিশ্চিত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে জাপা।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।