এরা মুসলিম জ্বেহাদি
(১)
মহাকবি আল্লামা ইকবালের নামে পার্কটা। বাচ্চাদের জন্যে নানারকম রাইড আছে সেই পার্কে। সেখানে ইস্টার উপলক্ষে খৃস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে জড়ো হয়েছে। খৃস্টানরাই যে শুধু এসেছে তা নয়, অ-খৃস্টান মানুষজনও এসেছে। একদল লোক বাচ্চাদেরকে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছে টিকেট কিনবে বলে- খেলনা রেল গাড়ীতে চড়ার টিকেট। এমন সময় বোমাটা ফেটেছে। মুহূর্তের মধ্যে রক্তে ভেসে গেল এলাকাটা।
এখন পর্যন্ত খবরে বলছে ৭২ জন মানুষ মারা গেছে, আহত আড়াইশর মত। এই ৭২ জনের মধ্যে ৩৬ জনই শিশু। চিন্তা করতে পারেন! ৩৬টা শিশুকে মুহূর্তের মধ্যে হত্যা করে ফেললো ওরা! এর ঠিক কি ধরনের মানুষ? এদেরকে কি আপনি মানুষ বলবেন?
না, এরা মুসলিম জ্বেহাদি। এদের দলের নাম তেহরিকে তালিবান পাকিস্তান- জামায়াতে আহরার (TTP-JA)। আনুষ্ঠানিকভাবেই এরা দায় দায়িত্ব স্বীকার করেছে। এদের নেতা এহাসানুল্লাহ এহসান কি বলেছে জানেন? আমেরিকার এক টেলিভিশন চ্যানেলের সাথে তিনি বলছিলেন, 'আমাদের মুল টার্গেট ছিল খৃস্টানরা, যারা ওখানে ইস্টার পালন করতে জড়ো হয়েছিল। বিশেষ করে বয়স্ক খৃস্টানরা। মুসলমানদেরকে বা নারী ও শিশুদেরকে আমরা মারতে চাইনাই।'
আহা, কি ভাল মানুষ। মুসলমান মারতে চায় নাই। নারী ও শিশু মারতে চায়নাই। ওদের লক্ষ্য ছিল খৃস্টানরা। তবে খৃস্টান মারতে গিয়ে যদি দুই চারজন মুসলমানও মরে অসুবিধা কি? দিয়েছে বোমা ফাটিয়ে। সেই ৩৬ জন শিশুর মধ্যে কতজন খৃস্টান শিশু ছিল জানেন? ১০ জন। বাকি ৩৬ জন মুসলমান।
(২)
পাকিস্তানের লাহোরে ঘটেছে এই ঘটনা। আপনারা হয়তো জানেন পাকিস্তানে যে পঁচিশ লাখের মত খৃস্টান আছে তাঁর মধ্যে ষোল লাখই বাস করে পাঞ্জাব প্রদেশে। আর পাঞ্জাবের রাজধানী হচ্ছে লাহোর। সেখানে এই ঘটনা।
আমি পাকিস্তানীদেরকে যে বিশেষ পছন্দ করিনা সে তো জানেনই। কিন্তু তাই বলে শিশুদের মেরে ফেলবে এটা কি ধরনের কথা রে ভাই! বাচ্চা তো বাচ্চাই। আরে বিড়াল কুকুরের বাচ্চা দেখলেও তো মানুষের একটু মায়া দয়া লাগে নাকি? আর এগুলি তো মানুষের বাচ্চা। এর আগেও একটা স্কুলে নির্বিচারে গুলি করে মেরেছে কতোগুলি বাচ্চাকে।
আপনি চিন্তা করতে পারেন যে আপনি আপনার বাচ্চাকে নিয়ে গেছেন ঈদের দিনে বা পূজার দিনে বা ক্রিসমাসের দিনে পার্কে বেড়াতে। আমাদের এখানেও তো ঈদের পার্বণে যায় বাচ্চারা পার্কে। আপনি চিন্তা করেন তো ঢাকায় বা লন্ডনে বা নিউ ইয়র্কে বা রোমে আপনি বাচ্চাদেরকে নিয়ে গেছেন আর সেখানে আপনার বাচ্চাদেরকে কেউ মেরে ফেললো বোমা ফাটিয়ে আপনার কেমন লাগবে?
আমি টেলিভিশনে খবরটা দেখলাম বেশ কয়েকটা চ্যানেলে। যারা এইভাবে বাচ্চাদেরকে মেরেছে এরা সেরকম নিষিদ্ধ কোন সংগঠন না। পাকিস্তানে ওরা মোটামুটি একটা স্বীকৃত রাজনৈতিক দলই। এর আগে পাকিস্তানের কোন কোন রাজনৈতিক নেতা এদেরকে সমর্থনও করেছে 'গুড টেররিস্ট' ও 'ব্যাড টেররিস্ট' এইসব যুক্তিতে। এদের মধ্যে আমাদের পরিচিত ইমরান খান নিয়াজিও আছে।
(৩)
আজকে পাকিস্তানের এই ঘটনা ঘটেছে। দুদিন আগে ব্রাসেলসে কতজন মানুষকে মেরেছে। এর আগে তুরস্কে। তার আগে প্যারিসে। বোকো হারাম নামে একটা গ্রুপ কি করছে এটা কে না জানে? আল শাবাব নামে একটা গ্রুপ আছে। আইসিস তো আছেই। এরা কীজন্যে এইভাবে মানুষ মারছে সে তো আপনি জানেন। জানেন না? এরা ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
আপনি হয়তো বলবেন এরা সহি মুসলিম না, বা ওদের দৃষ্টিভঙ্গি বা কাজের ধরন ইসলামে অনুমোদন করে না। এটা আপনি লাহোরে মৃত বা আহত সেই শিশুদেরকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন? কিংবা বোকো হারামের হাতে আটক মেয়েগুলিকে? ওরা তো আবার উল্টা বলে যে ওদেরটাই সহি ইসলাম, আপনাদেরটা না। আমরা কোনটাকে সঠিক ধরবো? আর যার ইসলামই সহি হোক না কেন, বোমা তো মারছে ইসলামেরই নামে।
আমার আশঙ্কা তো অন্যখানে।
আমার গাড়ী চালায় এক খৃস্টান যুবক। গত কয়েকদিন ধরে সে ছুটিতে। বউ বাচ্চা নিয়ে নাকি দেশের বাড়ি গোপালগঞ্জে যাবে ইস্টার করতে। আজকেও ফিরেনাই। সকালে আমি আমার স্ত্রীকে বলছিলাম, ইস্টারের এত লম্বা ছুটি, এটা কিরকম কথা? আমার স্ত্রী বলছিলেন, আহা থাক, ইস্টার তো ওদের বড় উৎসব। আসুক একদিন পরে। আগামী কয়েকবছর পর কি এই ছেলে এই দেশে ইস্টার উৎসব পালন করতে পারবে?
(৪)
দেখেন, পাকিস্তানের জনসংখ্যা আমাদের চেয়ে একটু বেশী- সতের কোটির মত। সেখানে পঁচিশ ছাব্বিশ লাখের মত খৃস্টান, এরাই দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় গ্রুপ। এইরকম ইনসিগনিফিকেন্ট সংখ্যক খৃস্টান জনসংখ্যাকেও ওরা শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। আমাদের এখানে যারা রাষ্ট্রের সর্বস্তরে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করতে চায় ওরাই বা কেন আমাদের এখানে খৃস্টান আর হিন্দুদেরকে ছেড়ে দেবে?
এই আশঙ্কা কিভাবে দুর করবেন? এইভাবে নির্বিচারে শিশু হত্যা করে যারা ওদেরকে তো মুক্তকণ্ঠে আপনি নিন্দাও করছেন না।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।