পিরোজপুরে হিন্দু ডাক্তার পরিবার অপহৃত: ক্লিনিক দখল
রঞ্জন বকসী নুপু
প্রিন্টঅঅ-অ+
পিরোজপুরে একটি অত্যাধুনিক দখলের উদ্যেশ্যে ক্লিনিক মালিক এক চিকিৎসক ও তার পরিবারের সদস্যদের অপহরণ করার ঘটনা ঘটেছে।
পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য এবং হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের হস্থক্ষেপে উদ্ধার পাওয়ার ৫দিন পর অপহরণ ঘটনায় পিরোজপুর সদর থানায় একটি মামলা হয়েছে।
মামলার বাদী ওই চিকিৎসকের স্ত্রী পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক গীতা রানী। এতে প্রধান আসামী ব্যবসায়ী ওবায়দুল হক পিন্টু। এ মামলায় ৩০/৪০ জন অজ্ঞাত আসামী আছে।
জানা গেছে, শহরের বাইপাস সড়কস্থ সার্জিকেয়ার ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনিষ্টক সেন্টারের মালিক ডাঃ বিজয় কৃষ্ণ হালদার, তার মা, স্ত্রী ও কলেজ পড়ুয়া মেয়ে গত ২১ মার্চ অপহৃত হন। এদিন গভীর রাতে একদল দুর্বৃত্ত সিনেমার শ্যুটিং করার কথা বলে ক্লিনিকে ঢুকে তাদেরকে প্রথমে মারপিট করে পরে চোখ ও হাত-পা বেঁধে শহরতলীর একটি নির্জন বাড়িতে রেখে আসে। পরে সেখানকার লোকজন তাদেরকে উদ্ধার করে শহরের পাল পাড়ায় তাদের এক আত্মীয়ের বাসায় পৌছে দেয়। ইতোমধ্যে ওই ক্লিনিকসহ ভবনের সম্পূর্ণ মালিকানা দাবী করে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল সম্পুর্ণ দখল করে নেয়। এ মতাবস্থায় ক্লিনিক মালিক হিন্দু সম্প্রায়ের বিধায় প্রান ভয়ে নিশ্চুপ থাকেন।
ঘটনাটি স্থানীয় সংসদ সদস্য এ কে এম এ আউয়াল জানতে পেরে পালপাড়ার আত্মীয়ের বাসা থেকে ডাঃ বিজয় ও তার পরিবারকে ক্লিনিক ভবনের বাসায় ফিরিয়ে আনেন এবং ঘটনার ৫দিন পর এমপির হস্তক্ষেপে পুলিশ থানায় মামলা নেয়।
ক্লিনিকটির মালিক বিজয় কৃষ্ণ হালদারের স্ত্রী পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের উপাধ্যক্ষ গীতা রাণী মজুমদার জানান, ২২ মার্চ রাত ২টার দিকে মুখে কাপড় বাঁধা ৪০ জনের একটি সসস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী হঠাৎ করে তাদের ক্লিনিকের ৫ম তলার ঘরে প্রবেশ করে। এর আগে ক্লিনিকের দুই কর্মচারি ঘরের দরজা খুলে দিতে বলে তারা জানায় সিনেমার শুটিংয়ের লোকেরা এসেছে, তাই ঘর খুলে দিতে হবে। এর আগেও সিনেমার নায়ক জায়েদ খান মনু অভিনিত “অন্তরজালা” সিনেমার শুটিং হওয়ায় তাদের কথা বিশ্বাস করে দরজা খুলে দেই। কিন্তু ভিতরে তারা অস্ত্রশস্ত্রসহ প্রবেশ করে আমাদের মার ধোর শুরু করে। আমার বৃদ্ধ শাশুড়ি এবং আমাকেও মারে। আমার মেয়েকেও মারে। এরপর কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে শহর থেকে দুরে ঝাটকাঠি এলাকার একটি পরিত্যাক্ত বাড়িতে ফেলে আসে। পরে সেখানকার লোকজন আমাদের উদ্ধার করে শহরের পাল পাড়ায় আমার ভাইয়ের বাসায় দিয়ে যায়।
এ সময় ওই বিভৎস ঘটনার বর্ননা দিতে গিয়ে কলেজ পড়ুয়া মেয়ে অনন্যা হালদার বলেন, ঘরে ঢুকে সন্ত্রাসীরা আমার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে দুই হাত বেঁধে মারপিট করে এবং শ্লীলতাহানির হুমকি দেয়। পরে চোখে কালো কাপড় বেঁধে গাড়িতে করে ওই স্থানে ফেলে আসে। এই ক্লিনিক আমার বাবার। বাবার জীবনের সব সঞ্চয় দিয়ে এ ক্লিনিক গড়া। লোন শোধ করতে না পারায় ওবায়দুল হক পিন্টুকে শেয়ার দেওয়া হয়েছে। আমার বাবাকে এর আগেও নির্যাতন করা হয়েছে। এখন সে অসুস্থ। সেই সুযোগে রাতের অন্ধকারে পুরোটা দখলে নেওয়ার এ নোংরা চেষ্টা তারা চালিয়েছে। এ বর্ননা দেয়ার সময় অনন্যা তার ও মায়ের ওপর আঘাতের চিহ্নগুলো সাংবাদিকদের দেখান। বাসায় ফিরতে পারলেও আতঙ্ক কাটেনি ওই পরিবারটির। স্থানীয় এমপি একে এম এ আউয়াল নিজে উপস্থিত হয়ে অভয় ও বিচারের আশ্বাস দিলেও এখনও তারা আতঙ্কে ভুগছে। এ সময় এমপি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে ডেকে তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে কথা বলেন।
সংসদ সদস্য একেএম এ আউয়াল বলেন আমারও একটি কন্যা সন্তান আছে। মেয়েটার শরীরে যে দাগ দেখলাম আমি তাতে মর্মাহত। রাতের অন্ধকারে এ কেমন পৈশাচিক আচরণ। এর সাথে যারা জড়িত তাদের বিচার হবে।
এদিকে এ ঘটনায় জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার সমীর কুমার বাচ্চু বলেন, এই ভাবে মধ্য যুগীয় কায়দায় যে পরিবারটিকে উচ্ছেদের পায়তারা করা হলো। আমি এর বিচার চাই।
এ ব্যাপারে পিরোজপুর সদর থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদ উজ জামান বলেন, মামলা হয়েছে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনায় অভিযুক্ত পিন্টু একজন ব্যবসায়ী। তার একভাই বাংলা সিনেমার নায়ক জায়েদ খান মনু আরেক ভাই পুলিশের ওসি। এলাকায় কথিত আছে নায়ক মনুর পুলিশের অনেক উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে রয়েছে সখ্য।
এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে পিন্টু সাংবাদিকদের বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা। তাদের কেউ কিছু বলে নাই। নিজেদের শরীরে নিজেরা আঘাত করে এখন সবাইকে দেখাচ্ছে। ২ কোটি টাকা দিয়ে এ ক্লিনিকের অর্ধেক মালিকানা আমি নিয়েছি। এর পরও প্রায় আরও ৮০ লক্ষ টাকা দিয়েছি। মূলত পুরো মালিকানা এখন আমার।
তবে তিনি কেন এমডির রুম দখল করেছেন এবং নিজের নাম ফলক লাগিয়েছেন সে বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।