ছুটিতে পর্যটকের ভীড়ে সরগরম কক্সবাজার
এবার সপ্তাহিক ও স্বাধীনতা দিবসে ছুটিতে দেশের প্রধান পর্যটন এলাকা কক্সবাজার পর্যটকে সরগরম হয়ে উঠেছে। ভীড় বেড়েছে সৈকতসহ দর্শনীয় স্থানগুলোয়। এতে কক্সবাজার শহরের বিপনী কেন্দ্র, রাস্তাঘাটসহ জেলার অন্যান্য পর্যটন স্পটসমূহ প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠেছে। পাশাপাশি শহর ও সাগরপাড়ের রাস্তাঘাটে দেখা দিচ্ছে মারাত্মক ট্রাফিক জ্যাম। এর ফলে শহরে বিশৃঙ্খল অবস্থা দেখা দিয়েছে।
শুক্রবার বিকালে সাগরপাড়ে গিয়ে দেখা গেছে, শহরের কলাতলী থেকে ডায়াবেটিক পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার সৈকত জুড়ে মানুষ আর মানুষ। বেড়াতে আসা পর্যটকদের মধ্যে কেউ কেউ সৈকতে হাঁটছেন, কেউবা চেয়ারে বসে গল্পগুজব করছেন, আবার কেউ কেউ সাগরে গোসলে মত্ত। অনেকেই বীচ বাইক ও ওয়াটার বাইকে চড়ে বীচ স্পোর্টস উপভোগ করছেন।
গত ফেব্রুয়ারির বন্ধের পরে একদিনে এত সংখ্যক মানুষ আর আসেনি বলে জানান রবি লাইফ গার্ড কর্মী ছৈয়দ নূর।
ছৈয়দ নূর জানান, রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত থাকায় মৌসুমের শেষ সময়ে এসেও এখনও প্রচুর সংখ্যক পর্যটক বেড়াতে আসছেন কক্সবাজারে।
কক্সবাজার গেস্ট হাউসস্থ দীগন্ত ট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক(এমডি)ইয়ার মুহাম্মদ বলেন, সপ্তাহিক ও স্বাধীনতা দিবসের ছুটি মিলে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শহর ও সাগরপাড়ের সকল হোটেলের প্রায় সমস্ত কক্ষ আগাম বুকিং হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত শহরের কোন হোটেলেই নতুন কোন অতিথিকে ঠাঁই দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে বলে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ভ্রমণ পিপাসুরা সমান তালে সেন্টমার্টিন দ্বীপেও ঘুরতে যাচ্ছেন।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি ওমর সোলতান জানান, শহরের আবাসিক হোটেল, গেস্ট হাউস, কটেজ ও সরকারী রেস্ট হাউসে প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার মানুষের রাত যাপনের সুবিধা রয়েছে। কিন্তু শুক্রবার থেকে কক্সবাজারে পর্যটকদের ভীড়ে আগামী শনিবার পর্যন্ত শহরের সকল আবাসিক হোটেল-মোটেল ও রেস্টহাউস আগাম বুকিং হয়ে গেছে। কেউ আগাম বুকিং বাতিল না করলে শনিবার পর্যন্ত নতুন করে রুম বুকিং দেওয়া সম্ভব নয়।
এদিকে কক্সবাজারে পর্যটকদের এই ভীড়কে পুঁজি করে একশ্রেণির হোটেল মালিক ও কক্ষ দালালরা ব্রবসার ফাঁদ পেতেছে। তারা আসল ভাড়ার থেকে ৩/৪ গুণ বেশি হারে পর্যটকদের কাছ থেকে ভাড়া নিচ্ছে।
ঢাকা থেকে বুকিং না করে আসা পর্যটক দম্পতি ডেইজি হাসান ও রেজাউল হাসান চলতি পর্যটন মৌসুমের শেষ সময়ে সপরিবারে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন দুইদিনের জন্য। শনিবার রাতে আবারও ফিরে যাবেন ঢাকায়। আগাম বুকিং না দেওয়ায় হোটেলে কক্ষ না পেয়ে ফ্ল্যাটে থাকতে হয়েছে তাদের। তবে আগাম হোটেল বুকিং না দেওয়ার মাসুল হিসেবে বেশি ভাড়া গুণতে হযেছে বলে অভিযোগ করেন এ দম্পতি।
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার বেড়াতে এসেছেন মামুনুল কাদের ও শাফিয়া খাতুন দম্পতি। রাতে থাকার ইচ্ছে প্রকাশ করলেও হোটেলে কক্ষ না পেয়ে রাতেই চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে গাড়িতে উঠেন তারা।
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশনের (টোয়াক) সভাপতি রেজাউল করিম জানান- শুক্রবার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ছাড়াও সেন্টমার্টিন, হিমছড়ী, দরিয়ানগর, ইনানী, সাফারী পার্ক, ন্যাশনাল পার্ক ও মহেশখালীর আদিনাথে ছিল পর্যটকদের ঢল।
পর্যটকদের এমন ভীড়ের সুযোগে কোন দুর্বৃত্ত যাতে অঘটন ঘটাতে না পারে তার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশও সতর্ক রয়েছে বলে জানান কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার কাজেমী।
তিনি জানান, পর্যটকদের চাপ থাকায় তাদের নিরাপত্তা বিধানে পর্যটন স্পটসমূহে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।এছাড়া কক্সবাজার সৈকতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলে পর্যটকদের রাতদিন ২৪ ঘন্টা নিরাপত্তা বিধান করছে পুলিশ।
এদিকে অতিরিক্ত পর্যটকের চাপে এবং শহরের রাস্তায় রাস্তায় যত্রতত্র গাড়ী পার্কিং করে রাখায় তীব্র যানজটে নগরবাসীর বেহালদশা। পাশাপাশি দুর্ভোগ ও চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন পর্যটকরাও। যানজট নিয়ে শহরে এমন বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়ায় স্থানীয়রা পুলিশের উপর চরম ক্ষুব্দ।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।