কারাগারে নিজামীর স্ত্রী, সন্তানসহ তিন পুত্রবধূ
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রকাশ : ২৪ মার্চ, ২০১৬
প্রিন্টঅঅ-অ+
মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত একাত্তরের বদর প্রধান জামায়াত আমির মতিউর রহমান নিজামীর সঙ্গে দেখা করতে কাশিমপুর কারাগারে গিয়েছেন তার স্ত্রী সামছুন্নাহার, দুই ছেলে ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান ও ডা. নাঈমুর রহমান এবং তিন পুত্রবধূ সুর্বণা, রায়য়ান ও ফালুয়া।
আজ বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে মতিউর রহমান নিজামীর সঙ্গে দেখা করতে কারাগারে যান তারা।
কাশিমপুর কারাগার পার্ট-২ এর জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক জানান, দুপুর ১২টার দিকে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর সঙ্গে দেখা করতে তার পরিবারের লোকজন কারাগারে আসেন। পরে তাদের দেখা করা সুযোগ করে দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা, গণহত্যা, হত্যা ও ধর্ষণের দায়ে আলবদর নেতা নিজামীর ফাঁসির সাজা বহাল রেখে ৬ জানুয়ারি রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ। ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর নিজামীকে ফাঁসির আদেশ দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বলেছিলেন, নিজামী যে ঘৃণ্য অপরাধ করেছেন, মৃত্যুদণ্ড ছাড়া আর কোনো সাজা তার জন্য যথেষ্ট নয়।
নিজামী রাজাকারের বিরুদ্ধে যতো অভিযোগ
নিজামীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২)(এ), ৩(২)(সি), ৩(২)(জি), ৩(২)(এইচ), ৪(১), ৪(২) ধারায় মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, লুট, ধর্ষণ, উস্কানি ও সহায়তা, পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ মোট ১৬টি ঘটনায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে ৪(১) ও ৪(২) ধারায় আনা হয় বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ও সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির (উর্ধতন নেতৃত্বের দায়) অভিযোগ।
১ ম অভিযোগে বলা হয়েছে, পাবনা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাওলানা কছিমুদ্দিন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচার চালাতেন। একাত্তরের ৪ জুন পাকিস্তানি সেনারা তাকে অপহরণ করে নূরপুর পাওয়ার হাউসের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে নিজামীর উপস্থিতিতে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। ১০ জুন তাকে ইছামতী নদীর পাড়ে অন্যান্য ব্যক্তির সঙ্গে হত্যা করা হয়।
২য় অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ১০ মে বেলা ১১টার দিকে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়ি গ্রামের রূপসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকারদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ওই সভায় নিজামী বলেন, শিগগিরই পাকিস্তানি সেনারা শান্তি রক্ষার জন্য আসবে। ওই সভার পরিকল্পনা অনুসারে পরে বাউশগাড়িসহ দু’টি গ্রামের প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে পাকিস্তানি সেনারা হত্যা করে। প্রায় ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ করে রাজাকাররা।
৩য় অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের মে মাসের শুরু থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্প ছিল। রাজাকার ও আলবদর বাহিনীও সেখানে ক্যাম্প স্থাপন করে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাতে থাকে। নিজামী ওই ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র করতেন।
৫ম অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ১৬ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে নিজামীর সহযোগিতায় পাকিস্তানি সেনারা ঈশ্বরদী উপজেলার আড়পাড়া ও ভূতের বাড়ি গ্রামে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় ২১ জন নিরস্ত্র মানুষ মারা যায়।
৮ম অভিযোগে বলা হয়েছে, ৩০ আগস্ট নিজামী নাখালপাড়ার পুরোনো এমপি হোস্টেলে গিয়ে সেখানে আটক রুমী, বদি, জালালদের হত্যার জন্য পাকিস্তানি সেনাদের প্ররোচনা দেন।
১০ম অভিযোগে বলা হয়েছে, পাবনার সোনাতলা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা অনিল চন্দ্র কুণ্ডু প্রাণ বাঁচাতে ভারতে চলে যান। নিজামীর নির্দেশে রাজাকাররা তার বাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে দেয়।
১১ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ৩ আগস্ট চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউটে ইসলামী ছাত্রসংঘ আয়োজিত সভায় নিজামী বলেন, পাকিস্তান আল্লাহর ঘর। সেনাবাহিনীর মাধ্যমে তিনি প্রিয় ভূমির হেফাজত করছেন। দুনিয়ার কোনো শক্তি পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে পারবে না।
১২ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, ২২ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক একাডেমি হলে আল মাদানীর স্মরণসভায় নিজামী বলেন, পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করতে শত্রুরা অস্ত্র হাতে নিয়েছে। তিনি পাকিস্তানের শত্রুদের সমূলে নির্মূল করার আহ্বান জানান।
১৩ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, ৮ সেপ্টেম্বর প্রতিরক্ষা দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে ছাত্রসংঘের সভায় নিজামী বলেন, হিন্দুস্তানের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানতে রাজাকার, আলবদররা প্রস্তুত।
১৪ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, ১০ সেপ্টেম্বর যশোরে রাজাকারদের প্রধান কার্যালয়ে এক সুধী সমাবেশে নিজামী প্রত্যেক রাজাকারকে ইমানদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আল্লাহর পথে কেউ কখনো হত্যা করে, কেউ মারা যায়।
এসব বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ছাত্রসংঘের সদস্য, রাজাকার ও অন্যদের মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের উসকানি ও প্ররোচনা দেন নিজামী।
১৫ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের মে মাস থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাঁথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে রাজাকার ক্যাম্প ছিল। নিজামী প্রায়ই ওই ক্যাম্পে গিয়ে রাজাকার সামাদ মিয়ার সঙ্গে ষড়যন্ত্র করতেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়।
১৬ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের প্রাক্কালে অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে আলবদর বাহিনী। দেশের বুদ্ধিজীবী শ্রেণীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার জন্য পরিকল্পিতভাবে আলবদর সদস্যরা ওই গণহত্যা ঘটায়। জামায়াতের তত্কালীন ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ ও আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে ওই গণহত্যার দায় নিজামীর ওপর পড়ে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।