হবিগঞ্জে মায়ের কোল থেকে শিশুকে ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রকাশ : ২১ মার্চ, ২০১৬
প্রিন্টঅঅ-অ+
হবিগঞ্জ সদরের মশাজান নোয়াবাদ গ্রামে বালু তোলা নিয়ে সংঘর্ষে মায়ের কোল থেকে তাসফিয়া আক্তার প্রমি নামে তিন মাসের এক শিশুকে ছিনিয়ে নিয়ে খুনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল রবিবার রাত ১২টার দিকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গভীর রাতে নোয়াবাদ গ্রামের আবদুল কাদিরের স্ত্রী শাহিদা আক্তারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নিহত শিশু তাসফিয়া আক্তার প্রমীর বাবা নোয়াবাদ গ্রামের আম্বর আলী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মশাজান নোয়াবাদ এলাকায় খোয়াই নদীর পাড়ে আজমত আলীর একটি জায়গা লিজ নেন শহরের ছাত্রলীগ নেতা নূরুজ্জামান জাকির, ফরহাদ, মুসা আহমেদ রাজু ও রনি। তারা বেশ কিছু দিন ধরে ওই স্থানটি থেকে বালি উত্তোলন করে আসছিলেন। কিন্তু শনিবার বিকেলে একই এলাকার মন্নর আলী ও মোস্তর আলী বালি উত্তোলনে বাধা দেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনে।
হামলা চলাকালে দুর্বৃত্তরা আশরাফ আলীর স্ত্রী আছমা খাতুনের কোল থেকে তার শিশু কন্যা প্রমি আক্তারকে ছিনিয়ে নিয়ে ছুড়ে মেরে হত্যা করে। আছমা খাতুন নিজে হাসপাতালে সাংবাদিকদের একথা জানান।
তিনি বলেন, 'দুর্বৃত্তরা যখন বাড়িঘরে হামলা চালায় তখন আমি আমার মেয়ে প্রমিকে নিয়ে দৌড়ে ঘরের বাইরে চলে যাই। তখন হামলাকারীদের একজন আমার কোল থেকে মেয়েকে ছিনিয়ে নিয়ে ছুড়ে পেলে দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।’
নিহত শিশুর ছোট চাচা ইছাক আলী জানান, মন্নর আলীর সঙ্গে তাঁদের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ ও মামলা মোকদ্দমা চলছে। রাতে তাঁদের বাড়িতে মন্নর আলী ও তার লোকজন পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে। এ সময় তাঁরা কয়েকটি ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে।
সদর মডেল থানার ওসি নাজিম উদ্দিন জানান, ওই গ্রামের কাছের খোয়াই নদীর একটি অংশ লিজ নিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছেন জেলা ছাত্রলীগ নেতা মুসা আহমেদ রাজু, ছাব্বির আহমেদ রনিসহ কয়েকজন। নদী থেকে বালু উত্তোলন করার সময় গ্রামের মুরব্বি আম্বর আলী, মন্নর আলীসহ কয়েকজন বাধা দেন। এ নিয়ে মারামারি সৃষ্টি হয়। রাত ১২ টার দিকে দুই পক্ষ লাঠিসোঁটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়।
নাজিম উদ্দিন জানান, ‘পুলিশ সংঘর্ষ থামিয়ে দেড় বছরের ওই শিশুর লাশ উদ্ধার করে হবিগঞ্জ মর্গে পাঠিয়েছে। শিশুটির গায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।’
শিশু তাছপিয়ার মৃত্যুর খবর পেয়ে রাত ১টার দিকে হাসপাতালে যান হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহিদুল ইসলাম ও সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মাসুদুর রহমান মনির। হাসপাতালে শিশুটির মাথায় আঘাতের চিহ্ন পুলিশকে দেখান তার চাচি।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের জানান, বালুমহাল নিয়ে দুইদিন ধরে সংঘর্ষ হচ্ছে। পুলিশের উপস্থিতিতে হামলার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘রাতেও মূলত বালু উত্তোলনের ঘটনার বিরোধ নিয়েই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় তাছপিয়া নামের এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ পেয়েছি। তবে ময়নাতদন্ত ছাড়া বলা যাবে না শিশুটি কীভাবে মারা গেছে।’
হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ডা. রাজীব চৌধুরী বলেন, ‘ময়নাতদন্ত ছাড়া বলা যাবে না শিশুটি কীভাবে মারা গেছে। তবে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি মাথার ভেতরে রক্তক্ষরণের কারণে শিশুটি মারা গেছে।’
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।