কুড়িগ্রামে হাইকোর্টের আদেশ গোপন করে নিয়োগ বাণিজ্য
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বজরা কলেজের অধ্যক্ষ হাইকোর্টের মামলা গোপন করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বাংলা প্রভাষক পদে একজনকে নিয়োগ দিয়ে এমপিও ভুক্ত করায় সংশ্লিষ্ট বিভাগে তোলপাড় চলছে। ঐ কলেজের বাংলা প্রভাষকসহ ক্ষতিগ্রস্ত ৪ জন শিক্ষক এমপিও পূণর্বহাল চেয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করলে মহামান্য আদালত গত ৯ আগস্ট শিক্ষা সচিবসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে রুল জারি করেন। এদিকে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে বিনা বেতনে পাঠদান অব্যাহত রেখে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।
জানা গেছে, কুড়িগ্রামের উলিপুরে ১৯৯৬ সালে বজরা কলেজ প্রতিষ্ঠা হয় এবং ২০০০ সালে নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষক কর্মচারী মিলে ১২ জনের নাম এমপিও ভুক্ত হয়। কিন্তু স্থানীয় দুটি কলেজের দূরত্ব সংক্রান্ত কোন্দলের কারণে বজরা কলেজের এমপিও ও একাডেমিক স্বীকৃতি কর্তৃপক্ষ স্থগিত করেন। এ অবস্থায় অধ্যক্ষ মাজেদুল ইসলাম ১২ জন শিক্ষক কর্মচারীকে নিয়ে এমপিও পূণর্বহালের জন্য ২০০৭ সালে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করলে ২০১১ সালে মহামান্য হাইকোর্ট ৬০ দিনের মধ্যে আবেদন কারিদের এমপিও ভুক্ত করার নির্দেশ দেন। কিন্তু মাউশি কাগজ পত্র পর্যালোচনা করে শুধুমাত্র অধ্যক্ষকে বকেয়াসহ এমপিও ভুক্ত করেন। অবশিষ্ট ১১ জন শিক্ষক কর্মচারীর বিরুদ্ধে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) কাগজ পত্রে গড়মিল থাকায় আপত্তি উত্থাপন করে। পরবর্তীতে অধ্যক্ষের দেয়া কাগজ পত্র পর্যালোচনান্তে ঐ সালেই ৩ জন এমএলএসএসকে এমপিও ভুক্ত করা হলেও রহস্যজনক কারণে ৮ জন শিক্ষক এমপিও ভূক্তির বাইরে থেকে যায়।
দীর্ঘদিন ধরে এসব শিক্ষক বিনা বেতনে কলেজটিতে পাঠদান অব্যাহত রাখে এবং অধ্যক্ষের মাধ্যমে এমপিও ভূক্তির তদবির চালায়। এমনকি তাদের কাছ থেকে অধ্যক্ষ মামলা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থও বিভিন্ন সময় গ্রহণ করেন। তাদের বিশ্বাস ছিল, স্টাফিং প্যাটান অনুযায়ী শুরতেই ডোনেশনের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের এমপিও ভূক্তির কাজ চলছে।
কিন্তু বিধিবাম, অধ্যক্ষ অত্যন্ত গোপনে মামলার বাদি বাংলা প্রভাষক রাশেদুজ্জামান সরকার এর স্থলে আঞ্জুমান আরা বেগম নামের একজনকে গোপনে নিয়োগ দিয়ে মাউশি’র জনৈক এক কর্মকর্তাকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে এমপিও ভুক্ত করান। এ ঘটনা জানাজানি হলে শিক্ষকদের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়। ঐ নিয়োগের ব্যাপারে শিক্ষক কর্মচারিসহ স্থানীয় কেউই কিছু জানেন না। প্রায় দেড় যুগ আগে নিয়োগ পাওয়া ৮ জন শিক্ষক বিনা বেতনে পাঠদানে সক্রিয় থেকেও এমপিও ভুক্ত হতে পারেনি। অথচ ২০১৬ সালের পূর্বে যাকে ঐ কলেজের বারান্দায় দেখা যায়নি, সেই ব্যক্তি এমপিও ভুক্ত হয়ে জাল হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে বেতন ভাতা তুলছেন।
অন্যদিকে উচ্চ শিক্ষা শেষে জমি-জমা বিক্রি করে ডোনেশন দিয়ে কলেজ প্রতিষ্ঠা করেও ৮ জন শিক্ষক এমপিও ভুক্ত হতে না পেরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
এদিকে অধ্যক্ষ এমপিওভূক্ত হয়ে সরকারি অংশের টাকা উত্তোলন করলেও নিয়মিত কলেজে আসেন না। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, এমপিও ভূক্তির বাইরে থাকা অন্যান্য শিক্ষকদের স্থলে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে গোপনে নতুন করে নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা চলছে। ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ জজ আদালতে ৫টি মামলা বর্তমানে চলমান রয়েছে।
অধ্যক্ষ মাজেদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, হাইকোর্টে মামলা থাকলেও শিক্ষক নিয়োগে কোন বাঁধা নেই। যা করেছি, আইন উপদেষ্টার পরামর্শে করেছি। যারা হাইকোর্টে মামলা করেছে তাদের এমপিও ভূক্তির বিষয়টি কঠিন। এজন্যই আমি নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি।
জেলা শিক্ষা অফিসার ভবশঙ্কর বলেন, যেহেতু বিষয়টি হাইকোর্টে আছে, সেহেতু এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করছি না।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।