- হোম
- >
- আইন-মানবাধিকার
- >
- উদ্বিগ্ন শয্যাশায়ী মা ও স্ত্রী
উদ্বিগ্ন শয্যাশায়ী মা ও স্ত্রী
রহস্যজনকভাবে 'নিখোঁজ' হওয়ার দু'দিন পরও খোঁজ মেলেনি তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহার। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন শয্যাশায়ী-মা ও স্ত্রী। জোহার খোঁজ মিলবে কি না এ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। নিখোঁজের পর পুলিশের ভূমিকা নিয়েও তারা প্রশ্ন তুলেছেন।
এদিকে ছেলের শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তার মা ও স্ত্রী। শুক্রবার দুপুরে জোহার স্ত্রী ডা. কামরুন নাহার এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘জোহা এখনো ফেরেনি। শাশুড়ি মাকসুদা হাসান তার ছেলের জন্য দুশ্চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এদিকে আমারও শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। বলা যায়, একরকম বিছানাতেই আশ্রয় নিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের কাছে আমার চাওয়ার কিছুই নেই, শুধু আমার স্বামীকে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দিক। জোহা তো সরকারের কোনো ক্ষতি করেনি। বরং সরকার যখনই তার সহযোগিতা চেয়েছে, সে তা করেছে। শুধু করেছে বললে ভুল হবে, জোহা নিজের কাজের চেয়েও গুরুত্ব দিয়ে সরকারের কাজ করত। এরপরও কেন সে নিখোঁজ?’
কামরুন নাহার বলেন, ‘জোহা সর্বশেষ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রণালয়ের ‘সাইবার নিরাপত্তা’ বিভাগের ডিরেক্টর (অপারেশন) পদে থেকে দায়িত্ব পালন করতেন। অবশ্য প্রকল্পটি বর্তমানে স্থগিত রয়েছে। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে একশ এক মিলিয়ন বা প্রায় আটশ কোটি টাকা চুরির ঘটনায় র্যাবের ছায়া তদন্ত কমিটির সদস্য হিসেবেও বেশ ক’দিন কাজ করেন।’
বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, সরকারের আইসিটি বিভাগের সাইবার সিকিউরিটি ফোকাল পয়েন্টের কর্মকর্তা পরিচয়ে সম্প্রতি রিজার্ভ চুরির তদন্তের নানা বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলছিলেন জোহা। এরপর আইসিটি বিভাগ থেকে জানানো হয়, তানভীর জোহার সাথে বিভাগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। জোহা তখন বলেন, তিনি আগে এ বিভাগের কাজে যুক্ত ছিলেন।
নিখোঁজ হওয়ার দু’দিন আগে জোহা বেসরকারি একটি টেলিভিশনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির বিষয়ে সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরি নিয়ে প্রকৃত তথ্য সংবাদ মাধ্যমের কাছে প্রকাশ করায় একটি মহল আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছে। তাই তারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তারা তদন্ত সহায়তা থেকে আমাকে সরিয়ে দিতে চাইছে। কারণ আমি অনেক বিষয়েই প্রশ্ন তুলছি।’
জোহা আরও বলেন, ‘চুরির নেপথ্য-তথ্য প্রকাশ করায় আমাকে হুমকি দেয়া হচ্ছে।’
এর আগে বৃহস্পতিবার কথা হলে জোহার স্ত্রী দাবি করেন, রাত ১২টার সময়ও পরিবারের সাথে কথা বলেন প্রযুক্তিবিদ তানভীর হাসান জোহা। কাজ শেষ করে কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় ফিরবেন বলেও জানান তিনি। কিন্তু রাত পেরিয়ে গেলেও বাসায় আর ফেরেননি জোহা।
এরপর থেকেই বিভিন্ন থানা ও মেডিকেলে খোঁজ নিতে শুরু করেন কামরুন নাহার ও পরিবারের সদস্যরা। পরে বন্ধু ইয়ামিরের মাধ্যমে পরিবার জানতে পারে, কে বা কারা জোহাকে চোখ বেঁধে সিএনজি থেকে নামিয়ে নিয়ে গেছে।
জোহাকে চোখ বেঁধে সিএনজি থেকে নামিয়ে নেয়া হয়েছে, এটি আপনি কীভাবে জানলেন, এ প্রশ্নের জবাবে কামরুন নাহার বলেন, ‘জোহার সাথে অফিস শেষ করে ফিরছিলেন বন্ধু ইয়ামির। তিনিই ঘটনাটি আমাদের জানান। এ সময় ওদের সিএনজির দু’পাশে দুটি গাড়ি থেমে ওদের দুজনকে আলাদাভাবে নিয়ে যায় কালো কাপড় মুখে পেঁচিয়ে। এরপর ইয়ামিরকে একটা জায়গায় নামিয়ে দিয়ে তারা চলে যায়।’
কামরুন নাহার আরও বলেন, ‘জোহার সন্ধান না পেয়ে প্রথমে আমরা কলাবাগান থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে যাই। কিন্তু সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, ঘটনা কচুক্ষেতের, তাই এ বিষয়ে যা করার কাফরুল থানা করবে। পরে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাফরুল থানায় এবং ক্যান্টনমেন্ট থানায় গেলে তারাও জিডি নিতে অপারগতা প্রকাশ করে।’
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (অর্গানাইজড ক্রাইম) মির্জা আব্দুল্লাহেল বাকী বলেন, ‘বিষয়টি আমরা অবগত ছিলাম না। মিডিয়ার মাধ্যমেই ঘটনাটি জানলাম। এটুকু বলতে পারি, সিআইডি এখনও এ ঘটনায় কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেনি।’
এদিকে জোহা নিখোঁজের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রযুক্তিবিদ তানভীর হাসান জোহাকে গ্রেপ্তার করতে পারে, তবে বিষয়টি আমি নিশ্চিত নই।’
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।