এই টাকা আমার টাকা
(১)
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের এই টাকাটা এটা আমাদের সকলের টাকা। এই টাকার মালিক দেশের প্রতিটা মানুষ। এই টাকা আমার টাকা। আমার টাকা আপনাদের জিম্মায় রাখা হয়েছিল। টাকার ব্যাবস্থাপনার দায়িত্ব ছিল আপনাদের হাতে। এর জন্যে আমরা আপনাদেরকে মোটা টাকা বেতন দেই। গাড়ী দেই, বাড়ি দেই। সম্মান দিই। আপনাদেরকে দক্ষ ও যোগ্য মনে করেই আপনাদেরকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়। আপনারাও এই সম্মান অর্জন করে গর্ব করে বলেন যে রাখাল থেকে গভর্নর হয়েছেন ইত্যাদি। গর্ব করেন ভাল কথা। আমার টাকা যে চুরি হয়ে গেল আপনাদের জিম্মা থেকে এখন আমাকে কি জবাব দেবেন জনাব? জবাব দিতে হবে না?
আপনার কাজের ছেলে দশ টাকা হারিয়ে ফেললে তাকে তো থাপ্পড় মারেন। অফিসের ক্যাশিয়ার হাজার দশেক টাকার হিসাব দিতে না পারলে বেতন থেকে টাকা কেটে নেন। ম্যানেজার যদি একটু বেশী গাফিলতি করে তাকে পুলিশেও দেন। এনাদের হাতে যে এতোগুলি টাকা সামলে রাখার দায়িত্ব দিয়েছিলেন, এনাদের গাফিলতির জন্যে কোন শাস্তি দিবেন না?
(২)
আগে দেখেন এই রিজার্ভের টাকা আমরা কি করে পেয়েছি। এই বিপুল পরিমাণ টাকা কে কামাই করেছে ভেবছেন? মনে রাখবেন, এটা কোন দানের টাকা বা ঋণের টাকা না। দানের টাকা আর ঋণের টাকা ফরেন কারেন্সি রিজার্ভে জমা হয় না। এই টাকা আমরা সকলে মিলে বানিয়েছি।
এটা ফরেন কারেন্সি। বিদেশ থেকে এসেছে। বিদেশ থেকে কিভাবে টাকা আসে? হয় রপ্তানির বিপরীতে অথবা বিদেশ থেকে বাঙালিরা যখন টাকা পাঠায়। রপ্তানি মানে কি? এই যে প্রতিদিন দেখেন সকাল বেলা আমাদের মেয়েরা সারি বেঁধে ফ্যাক্টরিতে যায়, আধাপেট খেয়ে সারাদিন কাজ করে। বিদেশীদের জন্যে জামা বানায়, প্যান্ট বানায়, জাঙ্গিয়া বানায়, তোয়ালে বানায় জ্যাকেট বানায়। এইসব কাজ করতে গিয়ে পায়ে পিষ্ট হয়ে আগুনে পুড়ে বিল্ডিং চাপা পরে কাতারে কাতারে মরে যায় আর শফি হুজুরদের গালি খায়। সেইসব মেয়েদের আর অন্যান্য মজুরদের রক্ত আর ঘাম বেচা টাকা। এটা হচ্ছে রপ্তানি আয়।
আর আছে রেমিটেন্স। রেমিটেন্স কারা পাঠায়? আমাদের যেসব ছেলেরা বিদেশ বিভূঁইয়ে গিয়ে ক্রীতদাসের মত গতর খাঁটিয়ে টাকা কামায় ওদের টাকা। আপনি কি কখনো দেখেছেন এইসব ছেলেরা কিভাবে জীবন যাপন করে? আমি দেখেছি। তিনশ ডলার যদি কেউ বেতন পায় সে চেষ্টা করে সবচেয়ে কম খরচে থেকে সবচেয়ে কম খেয়ে কিভাবে সেখান থেকে দুইশ ডলারই জমানো যায়, দেশে পাঠানো যায়। যেখানে ওরা কাজ করে সেইসব শহরের সবচেয়ে সস্তা, সবচেয়ে অস্বাস্থ্যকর এলাকাটায় ওরা থাকে। আর যেখানে মালিক থাকা খাওয়ার ব্যাবস্থা করে সেটা হয় আরও ভয়াবহ। একেটা ঘরে গাদাগাদি করে থাকা, যৎসামান্য বিস্বাদ খাবার খেয়ে পেট ভরানো এইসব দেখলে আপনার চোখে পানি চলে আসবে।
আমাদের এইসব ছেলেমেয়েদের রক্ত ঘাম বিক্রি করে আমরা ফরেন কারেন্সি দেশে আনি। এইসব ছেলে মেয়ে তাঁদের যৌবনের সোনালী দিনগুলি আমাদেরকে দিয়ে দেয় তুচ্ছ দামে আর আমরা সেটা বিদেশে বিক্রি করে টাকা কামাই কাড়ি কাড়ি। আমরা হয়ে যাই এন্টারপ্রেনার।
(৩)
আমাদের এইসব ছেলেমেয়েরা ফরেন কারেন্সি আনে দেশে। আর আমাদের সরকার আমাদের ট্যাক্স ভ্যাট এইসব থেকে নেওয়া দিশী টাকা ওদেরকে দিয়ে ডলার পাউন্ড ইউরো রিয়েল জমা রাখে। এই হচ্ছে আমাদের ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ। সেই টাকাটা দেখভাল করার কাজ ছিল আপনার। সেখান থেকে এতোগুলি টাকা চুরি হয়ে গেল আর আপনি আমাকে জবাবদিহি করবেন না? এইটা কি ঠাট্টা পেয়েছেন? নাকি ভেবছেন আমরা সব ছাগলের দল, যা খুশী তাই বুঝিয়ে দেবেন?
এই টাকা কিন্তু বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের আমানতকারির টাকা না। এটা আমার আপনার সকলের সমান মালিকানার টাকা। এটা শেয়ার মার্কেটে ফটকা খেলতে গিয়ে অধিক সেয়ানার হাতে ধরা খাওয়া বিনিয়োগকারীর টাকা না। এটা আপনার আমার সমান মালিকানার নগদ জমানো টাকা। এই টাকা চুরি হয়ে গেল আমার চাকরের হাত থেকে, আমি তাকে ছেড়ে দেব? সে আমাকে বুঝাবে না, কিভাবে টাকাটা রেখেছিল, কিভাবে চুরি হয়ে গেল? চোর ধরার জন্যে সে কি চেষ্টা করছে? টাকা উদ্ধারের জন্যে সে কি ব্যবস্থা নিয়েছে? এগুলি আমাকে জানাবে না? সে কেন চুপচাপ বসে ব্যাপারটা গোপন করছিল?
না, চুরির ব্যাপারে এরা নির্দোষও হতে পারে। সম্ভবত চুরি এরা নিজেরা করে নাই। নিশ্চিত হবার আগে পর্যন্ত আপনি ওদেরকে চোর বলাটা ঠিক না। কিন্তু দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে যে পুরা ফেইল মেরেছে এই কথা তো আর অস্বীকারের কিছু নাই। আমার টাকা চুরি হয়ে গেল, তুই ব্যাটা জানিস, জানার পরেও এক সপ্তাহ যায় দুই সপ্তাহ যায়, আমাকে কিছু জানাবি না? তোকে বেতন দিয়ে কি মালিক বানিয়েছি? আমার টাকা চুরির কথা আমাকে শুনতে হয়ে অন্য দেশের অন্য মানুষের মুখ থেকে?
(৪)
মুহিত সাব নাকি প্রেস কনফারেন্স করবেন একটু পরে। দেখি তিনি কি বলেন। সরকার এইসব আকামের নোকরদের ব্যপারে কি ব্যবস্থা নেয় দেখি। আপনারাও দেখেন। দেখেন ব্যাবস্থা পছন্দ হয় কিনা।
পছন্দ না হইলেও বা কি করবেন! আমার প্রিয় সহ-নাগরিকগন, আপনারা তো আবার আপনাদের আনুগত্য বিক্রি করে বসে আছেন আর নিজের ইয়ে নিজের ম্যানেজারের কাছে বন্ধক রেখে নিজেরা নপুংসক হয়ে বসে আছেন। আপনারা আর কি করবেন!
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।