ঝিনাইদহে পল্লী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ
ঝিনাইদহে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ উঠেছে এক পল্লী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, ঝিনাইদহের ভাটই বাজারের অশিত নামে একজন পল্লী চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মরতে মরতে বেঁচে গেছেন আহাসান নগরের মৃত মতলেবুর রহমানের ছেলে সাইফুল ইসলাম।
ভুক্তভুগি সাইফুল ইসলাম বলেন, গত বছর ১৪ মার্চ আমি ধানের বস্তা উঠাতে গিয়ে কোমরে প্রচন্ড ব্যাথা পাই। এরপর ঐ বছরের ১৭ মার্চ সন্ধ্যার দিকে ভাটই বাজারে অশিতের চেম্বারে যাই। সবকিছু শুনে ডাক্তার অশিত বলেন কোন সমস্যা হবে না। মাত্র ৩টি ইনজেকশন দিলেই ঠিক হয়ে যাবে। সে আমাকে ২টি ইনজেকশন দেয়। আমি বাড়ি ফিরে আসার পর পেটে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভাব করি। তারপর রাত ৩ টার দিকে আমার মুখ দিয়ে মল বাহির হতে থাকে। এই অবস্থায় পরদিন ১৮ মার্চ তারিখে সকাল বেলা আমাকে ঝিনাইদহ সদর হাঁসপাতালে ভর্তি করলে সদর হাসপাতালের ডাক্তার আমাকে না দেখেই বলে যে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
সেই অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে যাওয়া সম্ভব না হলে আমাকে বাড়ি নিয়ে এসে আমার স্বজনেরা পুনরায় ঝিনাইদহের ইসলামী প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যায়। প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে ওরা আমাকে ডাইরিয়ার চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
আমি ১৯ মার্চ ঢাকা মেডিকাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হই। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তাররা আমাকে দেখে পরীক্ষা করে বলে যে ব্যাথার ভুল চিকিৎসার কারণে পেটের নাড়ি ছিদ্র হয়ে গেছে। এরপর আমি ঢাকা মেডিকাল কলেজ হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসার পরে সুস্থ হয়ে উঠি। ঢাকা মেডিকেল থেকে আমাকে ঐ বছরের ৪ এপ্রিল প্রথম দফা ছাড় পত্র দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। তারপর আবার ২ দফা আবার যাই এবং ৮ দিন থাকার পর চলে আসি। এখন পর্যন্ত আমি পুরোপুরি সুস্থ হই নাই। আমি কোন কাজ করতে পারি না। সাইফুল এসব কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন।
অসিতের এই ভুল চিকিৎসার খেসারৎ দিতে গিয়ে আমি ও আমার পরিবার আজ পথে বসেছি। আগে আমার একটি কম্পিউটারের দোকান ছিল যা চিকিৎসার খরচ মেটাতে বিক্রি করি। আমার এই চিকিৎসার খরচ আমার পাড়া প্রতিবেশি ও গ্রামের লোকজন চাঁদা তুলে বহন করেছে কিন্তু যার কারণে আমার এই অবস্থা সেই অশিত ডাক্তার একটুও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেইনি। আমি প্রায় ৭ বছর বিবাহ করেছি আমার একটি মেয়ে সন্তান আছে। আমি বর্তমানে কোন কাজ করার অযোগ্য হয়ে পড়েছি। এই চিকিৎসা বাবদ আমার প্রায় ৫ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। এখন আমি চির দিনের মত অকেজ হয়ে পড়েছি বেঁচে থেকেও মৃত প্রায়। পথে পথে ঘুরছি এখন আমার ভিক্ষা করা ছাড়া আমার আর কোন উপায় নাই। চিকিৎসা করা কালীন সময়ে অনেকে সাহায্য সহযোগিতা করত এখন তাও করে না। আমি এখন কি করব? বুঝতে পারছি না। এখন আমি ভাবছি আমার ক্ষতি পূরণের জন্য অশিত ডাক্তার এর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করব।
আমি চাই অশিতের মত ডাক্তার দের শাস্তি হোক, বন্ধ হোক চিকিৎসার নামে এই প্রতারণা। আর যেন কেউ আমার মত এ অবস্থায় না পড়ে। চিকিৎসার নামে ডক্তারের মানুষের জীবন নিয়ে খেলা তার জন্য হয়ত কিছুই না কিন্তু আমাদের মত মানুষের তো জীবন যাওয়ার অবস্থা।
অশিতের ভুলের শিকার শুধু সাইফুল নয় আরও শিকার হয়েছে ভাইট দক্ষিণ পাড়ার নিপেনের মেয়ে তামান্না। তাকেও ভুল চিকিৎসা করে অনেক বিপদে ফেলেছিল এই গ্রাম্য কথিত অশিত ডাক্তার। ভাইট বাজারে ব্রাদার্স ফার্মেসীর মাধ্যমে অশিত ও অশিতের বাবা অজিত এইভাবে বছরের পর বছর পল্লী চিকিৎসক ডাক্তার সেজে দিনের পর দিন চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে। হাতিয়ে নিচ্ছে চিকিৎসার নাম লক্ষ লক্ষ টাকা। আর ভোগান্তির শিকার হচ্ছে পল্লীর নিরীহ সাধারণ মানুষ।
এই ব্যাপারে পল্লী চিকিৎসক অশিত জানান, আমি এই নামের কাউকে চিকিৎসা দেইনি। হয়তো কেউ শত্রুতা মূলক ভাবে মিথ্যা বলেছে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।