বিআরটি আইনের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা
গাজীপুর থেকে ঢাকায় যাত্রীদের যাতায়াত দ্রুত ও নির্বিঘ্ন করতে পৃথক দুইলেনে বাস চলাচলের জন্য একটি আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার (০৭ মার্চ) সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) আইন, ২০১৬’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, ঢাকা মহানগরীর সঙ্গে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের জনসাধারণের যাতায়াত নির্বিঘ্ন, দ্রুত ও আরামদায়ক করাই উদ্দেশ্য।
গাজীপুর থেকে ২০ মিনিটে বিআরটি বাস চলে আসবে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত। ছয় লেনের রাস্তায় দু’টি লেন দিয়ে শুধু বিআরটি বাস চলবে, অন্য কোনো যানবাহন চলবে না। দুই পাশে দু’টি লেন থাকবে।
আইনের খসড়ায় জেল-জরিমানা এবং দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ছাড়াও মোবাইল কোর্ট পরিচালনার বিধান রাখা হয়েছে।
খসড়ায় ৫৩টি ধারা ও ১০টি অধ্যায় রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব বলেন, বিভিন্ন অপরাধের জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে নবম অধ্যায়ে। একটি ধারায় মোবাইল কোর্টের এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে।
‘লাইসেন্স ছাড়া বিআরটি নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য অনধিক ১০ বছর কারাদণ্ড এবং অনধিক ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড।’
অনুমোদন ব্যতিরেকে লাইসেন্স হস্তান্তর করলে ১০ বছর জেল বা ৫০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে খসড়ায়।
অনুমোদনহীন বিআরটি বাস টিকিট বিক্রয় বা পাস বিক্রি বা জাল করলে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়। আর কর্মচারী কর্তৃক করলে দুই বছরের কারাদণ্ড ও অনধিক পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা হবে।
খসড়ায় বিশেষ মানবিক বিষয় অ্যাড্রেস করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দুর্ঘটনাজনিত কারণে ক্ষতিপূরণ প্রদান করার বিধান রাখা হয়েছে।
‘বিআরটি পরিচালনাকালে দুর্ঘটনার ফলে কোনো ব্যক্তি আঘাতপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হন বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা গেলে ক্ষেত্রমতে তার পরিবারকে বিধি-ধারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।’
বিআরটি পরিচালনাকালে দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত হলে আহত ব্যক্তি বা কর্মচারীকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিতসহ নিকটস্থ হাসপাতালে প্রেরণের ব্যবস্থাও করতে হবে। আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তির চিকিৎসা প্রদান, যদি নিজ উদ্যোগে চিকিৎসা গ্রহণ করে তাহলে খরচ প্রদান করতে হবে লাইসেন্স গ্রহীতাকে।
বিআরটি যাত্রীদের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে বিমা প্রদান করতে হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব বলেন, বিআরটি পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রত্যেক লাইসেন্স গ্রহীতাকে বাধ্যতামূলকভাবে বাস ও যাত্রীদের জন্য বিমা করতে হবে।
আর কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে লাইসেন্স গ্রহীতার কাছে ক্ষতিপূরণ দাবির ৯০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ভাড়া নির্ধারণের সময় সরকার কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেবেন এবং সরকার তা অনুমোদন দেবেন বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব।
তিনি বলেন, নির্বাহী পরিচালকের নেতৃত্বে ভাড়া নির্ধারণের জন্য সাত সদস্যের কমিটি গঠনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, কমিটি ভাড়া যাচাই-বাছাই করবে।
ওয়েবসাইট ও বহুল প্রকাশিত জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশ করতে হবে যাত্রী পরিবহন সংক্রান্ত তথ্য এবং ভাড়া।
বিআরটি’র প্রতিটি কোচে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, মহিলা, শিশুদের জন্য আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে খসড়ায়।
বিআরটি’র কর্তৃপক্ষ হিসেবে ঢাকা এলাকার জন্য থাকবে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। ডিটিসিএ’র নির্বাহী পরিচালক বিআরটি’র নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কাজ করবেন।
ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে বিআরটি নির্মাণ, পরিচালনা বা নিয়ন্ত্রণে ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হলে তা গ্রহণ করতে পারবে জনস্বার্থে ।
জনস্বার্থবিরোধী স্থাপনার জন্য ভূমির রূপ পরিবর্তন করলে উক্ত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারী হবেন না। তবে কেউ চাইলে আপিল করার সুযোগ রাখা হয়েছে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশেও বিআরটি সিস্টেম আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গ্রেটার ঢাকা সাস্টেইনেবল আরবান প্রজেক্ট’ নামে প্রকল্পের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।