- হোম
- >
- ইতিহাস-ঐতিহ্য
- >
- ঐতিহাসিক হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ১০১ বছর পূর্তি আজ
ঐতিহাসিক হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ১০১ বছর পূর্তি আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রকাশ : ০৪ মার্চ, ২০১৬
প্রিন্টঅঅ-অ+
ইতিহাস ঐতিহ্য আর কালের সাক্ষী হয়ে একশ এক বছর সগৌরবে মাথা উচু করে আছে কুষ্টিয়া-পাবনার ঐতিহাসিক হার্ডিঞ্জ ব্রিজ।
বাংলাদেশের পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন একটি রেলসেতু। এটি এশিয়ার অন্যতম দীর্ঘ রেলসেতু হিসেবে পরিচিত। পাবনা জেলার পাকশি রেলস্টেশনের দক্ষিণে পদ্মা নদীর উপর এই সেতুটি অবস্থিত। এই সেতুর নির্মাণকাল ১৯০৯-১৯১৫। তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের নাম অনুসারে এই সেতুর নামকরণ করা হয়। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের দৈর্ঘ্য ১,৭৯৮.৩২ মিটার বা ৫৯০০ফুট। এর উপর দু'টি ব্রড-গেজ রেললাইন রয়েছে।
১৮৮৯ সালে তৎকালীন অবিভক্ত ভারত সরকার আসাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড ও উত্তরবঙ্গের সাথে কলকাতার যোগাযোগ সহজতর করার লক্ষ্যে পদ্মা নদীর উপর ব্রীজ নির্মাণের প্রস্তাব করেন। পরবর্তীতে ১৯০৮ সালে ব্রীজ নির্মাণের মঞ্জুরী লাভের পর বৃটিশ প্রকৌশলী স্যার রবার্ট গেইল্স সেতু নির্মাণের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১৯০৯ সালে ব্রীজ নির্মাণের সার্ভে শুরু হয়। ১৯১০-১১ সালে পদ্মার দুই তীরে ব্রীজ রক্ষার বাঁধ নির্মাণ হয়। ১৯১২ সালে ব্রীজটির গাইড ব্যাংক নির্মাণের কাজ শুরু হয়। পাশাপাশি ব্রীজটির গার্ডার নির্মাণের কাজ শুরু হয়। অতঃপর ব্রীজটির গার্ডার নির্মাণের জন্য কূপ খনন করা হয়। ২৪ হাজার শ্রমিক দীর্ঘ ৫ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে ১৯১৫ সালে ব্রীজটির নির্মাণ কাজ শেষ করেন। তৎকালীন ভাইসরয় ছিলেন লর্ড হার্ডিঞ্জ। তাঁর নামানুসারে ব্রীজটির নামকরণ করা হয় হার্ডিঞ্জ ব্রীজ।
সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ৩ কোটি ৫১ লক্ষ ৩২ হাজার ১ শত ৬৪ টাকা। ব্রীজটির দৈর্ঘ্য ৫ হাজার ৮ শত ফুট। ব্রীজটিতে ১৫টি স্প্যান আছে। ব্রীজটি ঈশ্বরদী ভেড়ামারা সীমানায় পদ্মানদীর উপর অবস্থিত। ব্রীজটি দিয়ে শুধু ট্রেন চলাচল করে। বাংলাদেশ রেলওয়ে ব্রীজটির রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে।ঐতিহাসিক হার্ডিঞ্জ ব্রিজের শতবর্ষপূর্তি আজ
পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ১৯০৯ সালের প্রথম ভাগে প্রাথমিক জরিপ, জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে নির্মাণকাজ শুরু হয় এ রেলসেতুর। ব্রিজটির নির্মাণ শেষ হয় ১৯১৪ সালের ডিসেম্বরে।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণে ২৪ হাজার শ্রমিক প্রায় ৫ বছর একটানা কাজ করেন। ব্রিজটি দৈর্ঘ্যে ১ দশমিক ৮১ কিলোমিটার।
নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পরপরই ১৯১৫ সালের ১ জানুয়ারি ব্রিজের ওপর দিয়ে মালগাড়ি ও ২৫ ফেব্রুয়ারি আপ মালগাড়ির চলাচল শুরু হয়। এরপর ১৯১৫ সালের ৪ মার্চ ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিজের উপর দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের জন্য তা উন্মুক্ত করেন।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের অবাধ চলাচলে বাধা সৃষ্টি ও চলমান যুদ্ধকৌশলের অংশ হিসেবে ভারতীয় যুদ্ধ বিমান থেকে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ওপর দিয়ে পলায়নরত পাকিস্তানি সেনাদের লক্ষ্য করে বোমা হামলা করলে ব্রিজের প্রায় ৪০ ফুট অংশ দ্বিখণ্ডিত হয়ে নদীগর্ভে পড়ে যায়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর ক্ষতিগ্রস্ত ইস্পাতের ট্রাসেলটি কংক্রিট দিয়ে ‘জ্যাকেটিং’ করার পর একক ব্রডগেজ লাইন বসিয়ে ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর সীমিত আকারে ট্রেন যোগাযোগ পুনস্থাপন করা হয়।
তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী নিজে ট্রেনের ইঞ্জিনের সামনে দাঁড়িয়ে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পার হয়ে রেলযোগাযোগ পুনস্থাপন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
পাকশী এলাকার প্রবীণ শিক্ষক রেজাউল আলম মিন্টু বলেন, ‘হার্ডিঞ্জ সেতুর ১০১ বছর পূর্ণ হচ্ছে, এতে আমরা খুবই আনন্দিত। আমরা চাই আরও শত শত বছর এই সেতু থাকুক এবং সেজন্য এর রক্ষণাবেক্ষণ সঠিকভাবে করা হোক। আমাদের আশা এই ব্রিজ গোটা জাতির কাছে অহঙ্কার হয়ে থাকবে।’
পাকশী রেলওয়ে ডিগ্রি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও ইতিহাস গবেষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এই ব্রিজ আমাদের ইহিতাস ঐতিহ্যের অংশ, আমাদের গৌরব। পাকিস্তান আমলে ব্রিজটি মাঝে মধ্যে পরিষ্কার করে ধোয়ামোছা করা হতো, রঙ করা হতো। কিন্তু এখন সেগুলো দেখা যায় না। এ কারণে এর গুণগত মান নষ্ট হওয়া নিয়ে আমরা শঙ্কায় আছি। শুধু ১০১ বছর নয়, আরও এক বা দু’শ বছর এই ব্রিজটি টিকে থাক এই কামনা করি।’
হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ আব্দুল আউয়াল এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমরা ছোটবেলায় এই ব্রিজের ইতিহাস পড়েছি। আমি তো ভাবতেই পারছি না সেই ব্রিজের একশ এক বছর পূর্তি হচ্ছে আর সেই সময় আমি এই ব্রিজের নিরাপত্তার দায়িত্বে আছি। খুবই ভাল লাগছে, নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে, এই ব্রিজতো আমাদের দেশের একটা গৌরব, ঐতিহ্যের অংশ।’
পাকশী বিভাগীয় পরিবহণ কর্মকর্তা (ডিটিও) শফিকুল ইসলাম জানান, বর্তমানে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের উপর দিয়ে কলকাতা-ঢাকাগামী মৈত্রি এক্সপ্রেসসহ প্রতিদিন গড়ে ১৪টি আন্ত:নগর ট্রেন, ৪টি মেইল ট্রেন এবং ৮টি মালট্রেন চলাচল করছে।
পশ্চিমাঞ্চল পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ার আরিফুল ইসলাম বলেন, সেতু বিভাগ থেকে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রঙ করা থেকে শুরু করে যা যা করা দরকার তা যথাসময়ে নিয়মিত করা হয়। ১০১ বছর পরেও এই ব্রিজের গঠন চমৎকার আছে। তারপরও আমাদের রেল কর্তৃপক্ষ এই ব্রিজের স্থায়িত্ব আরও কিভাবে বাড়ানো যায় সে চিন্তা থেকে কাজ করে যাচ্ছে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।