- হোম
- >
- আইন-মানবাধিকার
- >
- শিশু দুটিকে হত্যার দায়ে মায়ের বিরুদ্ধে মামলা
শিশু দুটিকে হত্যার দায়ে মায়ের বিরুদ্ধে মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রকাশ : ০৪ মার্চ, ২০১৬
প্রিন্টঅঅ-অ+
রাজধানীতে দুই শিশু হত্যার ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় শিশু দুটির বাবা আমানুল্লাহ বাদী হয়ে রামপুরা থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন।
রামপুরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “মামলায় শিশুদের মা মাহফুজা মালেক জেসমিনকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে।”
গত বুধবার শিশু দুটির জানাজা ও দাফনের পর আমানুল্লাহ ও জেসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে ঢাকায় নিয়ে এসেছিল র্যাব।
বৃহস্পতিবার সকালে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান জানান, শ্বাসরোধ করে দুই সন্তানকে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন জেসমিন।
এরপর দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘মানসিকভাবে সুস্থ’ অবস্থায় হত্যার দায় স্বীকার করেন শিশু দুটির মা। ছেলেমেয়ের লেখাপড়া ও ভবিষ্যত নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় ছিলেন। এর এক পর্যায়ে ছেলেমেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন।
তবে মাহফুজার ভাই জাকির হোসেন সরকার র্যাবের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “আমার বোন কাউকে হত্যা করতে পারে না। সে তার সন্তানদের অনেক ভালবাসতো।”
এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে তিনি বলেন, “র্যাব বললেও আমার বোন তো নিজ মুখে সবার সামনে বলেনি যে সে তার সন্তানদের হত্যা করেছে।”
আমানুল্লাহ-জেসমিন দম্পতি সম্পর্কে চাচাত ভাই-বোন। তাদের দুই সন্তানের মধ্যে বড় নুসরাত আমান অরণী (১৪) ভিকারুননিসানূন স্কুলে পড়ত, ছোটটি আলভী আমান (৬) পড়ত হলি ক্রিসেন্ট স্কুলে।
গত সোমবার রামপুরা বনশ্রীর বাসা থেকে অচেতন অবস্থায় তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। সে সময় পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, চাইনিজ রেস্তোরাঁ থেকে আনা খাবার খেয়ে শিশু দুটির মৃত্যুর সন্দেহের কথা।
শিশু দুটির খালা আফরোজা মিলা হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “গতকাল (রোববার) রাতে তারা একটি চাইনিজের দোকানে ফাস্টফুড খেয়েছিল। এরপর বাসায় গিয়ে তারা ঘুমিয়ে পড়ে। আবারও তারা সোমবার দুপুরে চাইনিজ খাবারের অবশিষ্ট অংশ গরম করে খেয়েছিল। এরপর ঘুমিয়ে পড়লে আর ঘুম থেকে ওঠেনি।”
আমানুল্লাহর বন্ধু জাহিদ হাসান বলেন, “আজ (সোমবার) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে আমানুল্লাহ তার বাড্ডার অফিস থেকে আমাকে ফোন করে বলে- ‘দেখতো, তোর ভাবি কেন ফোন করে কান্নাকাটি করছে?’
“এরপর ওদের বাসায় গিয়ে দেখি অরণী ও আলভী ঘুম থেকে উঠছে না। পরে ওদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসি।”
এই বক্তব্য ধরে পরদিন বনশ্রীর ওই চাইনিজ রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপকসহ তিনজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করার পর ময়নাতদন্তে মেলে হত্যাকাণ্ডের আলামত।
এরপর পুলিশের সঙ্গে র্যাব তদন্তে নামে। ঢাকায় কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর জামালপুরে গিয়ে শিশু দুটির বাবা-মা ও খালাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকায় আনার উদ্যোগ নেয়।
অন্যদিকে পুলিশ শিশু দুটির বাড়ি থেকে সংগৃহীত আলামত ডিএনএ প্রোফাইলিং ও রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আবেদন করে অনুমতি নেয় পুলিশ।
মার্কেটিংয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে দুই বছর কলেজে শিক্ষকতা করে আসা মাহফুজা কেন তার সন্তানদের হত্যা করেবেন-সাংবাদিকদের প্রশ্নে র্যাব মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ বলেন, “ছেলেমেয়ের লেখাপড়া ও ভবিষ্যত নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় ছিলেন।”
দুই শিশুকে এই কক্ষের বিছানায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। দুই শিশুকে হত্যাকাণ্ডের বিবরণে তিনি বলেন, “গত ২৯ ফেব্রুয়ারি মেয়ে অরণী যখন গৃহ শিক্ষকের কাছে পড়ছিল, তার মা ও ভাই তখন শোবার ঘরে ঘুমাচ্ছিল। গৃহ শিক্ষক চলে যাওয়ার পর মাহফুজা তার মেয়েকেও ঘুমাতে ডাকেন।
“অরণী বিছানায় যাওয়ার পর মাহফুজা তার ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে মেয়ের শ্বাসরোধ করেন। এক পর্যায়ে ধস্তাধস্তিতে মেয়ে বিছানা থেকে পড়ে যায়। মেয়ের মৃত্যু হয়েছে নিশ্চিত হওয়ার পর ছেলেকেও একইভাবে ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে হত্যা করেন।”
মানসিকভাবে সুস্থ একজন মা লেখাপড়া নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকে কেন নিজের হাতে দুই সন্তানকে হত্যা করতে যাবেন, সে প্রশ্নের সদুত্তর র্যাবের সংবাদ সম্মেলনে মেলেনি। মুফতি মাহমুদ খান বলেন, এ বিষয়ে একটি মামলা হবে; বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। মামলার তদন্ত হলে বিস্তারিত জানা যাবে।
“আপাতত যেসব তথ্য পেয়েছি, সেটাই আপনাদের জানালাম। প্রথমে আমরাও বিশ্বাস করতে পারিনি। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদে এ বিষয়টিই বেরিয়ে এসেছে।”
এ ঘটনায় শিশু দুটির বাবা পোশাক ব্যবসায়ী আমানুল্লাহর সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ র্যাব পায়নি বলে জানানো হয়েছে।
“মোটামুটি সুখী পরিবার, স্বচ্ছল পরিবারই ছিল। বাবা কর্মস্থলে ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের পর সরল বিশ্বাসে বিষক্রিয়ার কথা বিশ্বাস করেছেন বাবা ও পরিবার।”
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।