- হোম
- >
- কৃষিজ ও প্রাণিজ
- >
- নড়াইলে ভোদড় দিয়ে মাছ শিকার
নড়াইলে ভোদড় দিয়ে মাছ শিকার
নড়াইলে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ভোদড় এখনও জেলেদের মাছ শিকারের একমাত্র মাধ্যম। যুগ যুগ ধরে এই জেলে সম্প্রদায় ভোদড় প্রাণিটি দিয়ে মাছ শিকার করে আসছে। নড়াইল সদরের গোয়ালবাড়ি গ্রামে অন্তত ২শ' জেলে পরিবারের বসবাস করে। এদের মধ্যে ২৬-২৭ পরিবারের জেলেরা ভিন্ন একটি প্রক্রিয়ায় ভোদড় দিয়ে মাছ শিকার করেন। এরকম রতডাঙ্গা আর লস্করপুর গ্রামেও কয়েকটি জেলে পরিবার আজও একইভাবে প্রক্রিয়ায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছে।
বর্তমানে ভোদড় দিয়ে মাছ শিকার করা পেশাটি প্রায় বিলুপ্তের পথে। ভোদড় মাছ শিকার করে খেতে পছন্দ করে। আর এটাকে কাজে লাগায় এখানকার জেলেরা। ভোদড়ের মাছ শিকারের সুযোগ নিয়ে নৌকায় বাঁধা জাল নদীতে ফেলে এর পরপরই জেলেরা ভোদড় ছেড়ে দেয়। ভোদড় মাছ তাড়া করে খেতে গেলে সেই মাছ জেলেদের জালে এসে ধরা পড়ে।
প্রতি রাতে জেলেরা ভোদড় নিয়ে মাছ ধরতে বের হয়। নৌকার একপ্রান্তে ভোদড়ের জন্য আলাদা করে ঘর বানানো থাকে। ওই ঘরে ভোদরা থাকে। মাছ ধরার সময় হলে ঘরের ডালা খুলে দিলেই পানিতে লাফিয়ে পড়ে মাছ শিকার করতে থাকে। বছরের অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত নদীতে মাছ থাকে তাই ভোদড়দের খাবারের জন্য বাড়তি টাকা খরচ করতে হয় না। কিন্তু বাকি সময়ে নদীতে মাছ কমে গেলে সে সময় এদেরকে বাইরে থেকে মাছ কিনে এনে খাওয়াতে হয়।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, এভাবে প্রায় ২শ' বছর ধরে মাছ শিকার করে আসছেন শচীন বিশ্বাস, গুরুপদ বিশ্বাস আর পাগল চান বিশ্বাসের পরিবারসহ এলাকার জেলে পরিবারগুলো। প্রতি বছরই অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসের অধিক সময়ে ১০টি নৌকা আর ভোদড় নিয়ে নদীপথে পাড়ি জমান জেলেরা। মাছ ধরেন আর ঘাটে ঘাটে বিক্রি করেন। বছরের এই সময়ের আয় দিয়ে তাদের প্রায় সারা বছরই সংসার খরচ চালাতে হয়।
এক সময় নদীতে বেশি পানি থাকায় সুন্দরবন পর্যন্ত চলে যেতেন চিত্রা পাড়ের এই জেলেরা। এখন জলদস্যুদের ভয়ে সুন্দরবন না গিয়ে চিত্রা নদীর পাশের মধুমতি আড়িয়াল খাঁ পাড়ি দিয়ে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর হয়ে ফরিদপুর চলে যান। আগে বাড়ির পাশের চিত্রা নদীতে প্রচুর মাছ পাওয়া যেতো যা বিক্রি করে ৭-৮ জনের পরিবার ভালোভাবে খেয়ে পরে চলে যেতো। এখন মাছ ধরে দিন চলাতে কষ্ট হয় বলে অনেকেই মাছ ধরা ছেড়ে মাছ বিক্রি করাটাকে বেশি ভালো মনে করছেন। কেউ কেউ আবার অভাবের তাড়নায় দেশ ছেড়ে বিকল্প আয়ের জন্য ভারতে চলে গেছেন।
জেলার মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা ভোদড় দিয়ে মাছ ধরা জেলেদের সম্পর্কে জানলেও এদের বিষয়ে তাদের আলাদা কোনো নজর নেই।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।