৬ মার্চের ফাইনালে বাংলাদেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রকাশ : ০৩ মার্চ, ২০১৬
প্রিন্টঅঅ-অ+
বল তখনো সীমানা ছেড়েছে কি ছাড়েনি। ছুটছে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে। সাদা সেই বলে সওয়ার হয়ে ছুটছে বাংলাদেশের আশা, স্বপ্ন। ছুটছে শেষ ওভারে এবার আর কান্নায় ভেঙে না পড়ার প্রত্যয়ও। বল ঠিকই পৌঁছে গেল গন্তব্যে। মিরপুরের সীমানা কতবারই ছোঁয়া পেয়েছে এমন বলের। কিন্তু এর সঙ্গে বাকি সবকিছু মেলানো যাবে না কিছুতেই!
মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে আসা এই চারেই যে নিশ্চিত হয়ে গেল বাংলাদেশের জয়। নিশ্চিত হয়ে গেল, এবার যতই দাঁত চেপে মরণপণ লড়াই করুক পাকিস্তান, বাংলাদেশ কিছুতেই সেই ‘২০১২’ ফিরতে দেবে না, দিলও না।
শেষ ওভারের প্রথম বলেই পাকিস্তানের দেওয়া ১৩০ রানের লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলল বাংলাদেশ। ৫ উইকেটের জয় দিয়ে মুছে দিল চার বছর আগের এশিয়া কাপের সেই ফাইনালের কান্না।
এই মাঠেই সেবার চোখের জলে ভিজিয়েছিলেন সাকিব-মুশফিকরা লাল-সবুজ জার্সিটাকে। এবার তাঁরাই ছুটে এলেন ডাগ আউট থেকে। উইকেট থেকে ছোটা দুই ‘ম’ মিলে গেলেন উচ্ছ্বাসের স্রোত তুলে ছুটে আসা সতীর্থদের মোহনায়।
এক ‘ম’ মাহমুদউল্লাহ, তখন যেন নিজেকে একটু সরিয়ে নিলেন দৃশ্যপট থেকে, অন্য ‘ম’ মাশরাফি সতীর্থদের আলিঙ্গনের কেন্দ্রে।
৭ বলে ১২ করেছেন, কিন্তু মাশরাফির এই ‘১২’ শুধু সংখ্যা দিয়ে বোঝানো যাবে না। বোলারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে ১২৯ রানে আটকে রেখেও যে চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। বারবার ম্যাচের রং বদলাতে বদলাতে একসময় সমীকরণ হয়ে গিয়েছিল কঠিন।
শেষ ৩ ওভারে দরকার ২৬। আমিরের দ্বিতীয় বলে ফিরে এলেন সাকিব। রান বাড়ল না, সাকিবের মতো ব্যাটসম্যানের পাশাপাশি পরিস্থিতি বিবেচনায় দুটি অমূল্য বলও হারিয়ে ফেলল বাংলাদেশ।
এই সময়ই উইকেটে মাশরাফি। পরপর দুটি চার। অধিনায়কের ব্যাট ছড়িয়ে দিতে চাইল অভয় বার্তা। কিন্তু তখনো নাটকের অনেকটা বাকি। ১৯তম ওভারটি করতে এলেন সামি। বাংলাদেশ তখনো দাঁড়িয়ে ১৮ রানের কঠিন সমীকরণের সামনে। চতুর্থ বলে ক্যাচ উঠল মাশরাফির। লং অফে ক্যাচও ধরল ফিল্ডার। কিন্তু যে আম্পায়ারের ভুল তর্জনী মুশফিককে আউট ঘোষণা করে বাংলাদেশকে ভীষণ চাপে ফেলে দিয়েছিল, তারই বাঁ হাত ঘোষণা করল ‘নো’ বল!
মাশরাফির বেঁচে যাওয়ার চেয়েও তখন বড় প্রাপ্তি নো-সহ ওই বলে আসা তিনটি রান। সামি তখন আরেকটি ‘নো’ বল পুষে রেখেছেন কে জানত! মাহমুদউল্লাহ ওভারের শেষ বলে মারলেন চার। এবার সেটিকে পাঁচ রান বানিয়ে দিল সামির দ্বিতীয় নো বল। বাড়ল একটি বলও। আর সেই বলে এক রান। শেষের আগের ওভারে ১৫ রান তুলে শেষ ওভারের সমীকরণটা মাত্র ৩ রানে নিয়ে এল বাংলাদেশ।
শেষ বলের ফ্রি হিট থেকে একটি রান এলেও বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এল স্ট্রাইকে মাহমুদউল্লাহরই থাকা। আনোয়ার আলীর করা শেষ ওভারের প্রথম বলেই সেই চার, সেই মিড উইকেট সীমানা ধেয়ে, আশা আর স্বপ্নকে সওয়ার করে নিয়ে ছোটা চার। সেই ‘২ রানে’র কান্না মোছা চার! এ মাঠে বাংলাদেশের কষ্টকে বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়ে উৎসব করা পাকিস্তান এবার হেঁট মাথায় বের হলো। একইসঙ্গে টুর্নামেন্টের ফাইনাল থেকেও বের হয়ে গেল তারা।
৪ মার্চ পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা ম্যাচটি তাই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাড়তি একটা প্রস্তুতি ম্যাচের সান্ত্বনা হয়ে গেল দুই দলের জন্য। আর বাংলাদেশের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল ৬ মার্চের ফাইনাল, যেখানে অপেক্ষায় ভারত। এশিয়ার দুই দলকে হারিয়ে আরেক ‘বড় ভাই’য়ের মুখোমুখি বাংলাদেশ।
ভারত-পাকিস্তানের বিপক্ষে রঙিন পোশাকে এ মাঠেই সিরিজ জয়ের উৎসব করে বড় হয়ে ওঠার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া বাংলাদেশ মুখোমুখি প্রথম বড় কোনো টুর্নামেন্টের ট্রফির সামনেও। ২০১২ সালে এত কাছে গিয়েও যে ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখা হয়নি। এবার হবে?
ম্যাচ শেষে মাশরাফি সেটাই জানালেন, কাজ এখনো শেষ হয়নি। আসল ম্যাচটাই বাকি। এ কারণেই বুঝি পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়োৎসবটা তত লম্বা হলো না।
মাহমুদউল্লাহ স্পষ্ট করেই জানালেন, ‘ব্যাটিং করার সময় আমার মাথায় খুব করেই ২০১২ সালের ফাইনালটি ছিল।’ সেটি ছিল না কার ভাবনায়? মাহমুদউল্লাহর প্রত্যয় গোটা বাংলাদেশেরই প্রত্যয়। মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে চড়ে আসা সেই জয় পুরো বাংলাদেশেরই জয়।
চাপের মুখে তাঁর ১৫ বলের ২২ রানের ইনিংসটিও তাই শুধু দুটি ‘২’ দিয়ে বোঝানো যাচ্ছে না। যেমন বোঝানো যাচ্ছে না, ইরফানকে সোজা মিড অফের ওপর দিয়ে মারা ছক্কাটির মাহাত্ম্য কিংবা সৌন্দর্যও। যদিও ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় সৌম্য। ওপেনিংয়ে নেমে তাঁর ৪৮ বলে খেলা সমান রানের ইনিংসটা সেটির যোগ্যও। সৌম্যের ব্যাটেই ২ উইকেটে ৮৩ তুলে জয়ের পথে ভালোমতোই ছুটছিল বাংলাদেশ। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি থেকে ২ রানে দূরে থাকতে ফিরলেন। সেখান থেকে বাংলাদেশও যেন ভুগতে শুরু করল ২০১২-এর আতঙ্কে!
জয় তখন ৪৭ রান দূরে, বল বাকি ৪০টি। হাতে ৭ উইকেট। কিন্তু দ্রুত রং বদলাতে শুরু করল সহজ সমীকরণটা। স্কোরবোর্ডে আর ৫ যোগ হতেই আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে মুশফিক ১২ রান করে ফিরলেন। খানিক পরে সাকিবও ফিরলেন ৮ রান করে। শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহর সঙ্গী হলেন মাশরাফি।
অনিশ্চয়তা, টেনশন মিরপুরের দর্শকদের আবারও মগ্ন করল প্রার্থনায়। চার বছর আগের সেই কান্নাটা যেন মুছে যায়! শেষ পর্যন্ত দুই ম-এর ১১ বলের ২৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিল বাংলাদেশকে।
এবার আর কান্না হলো না। তবে সেই চোখ ভিজতে চায় আরও একবার। ৬ মার্চের ফাইনালে! ভারতকে হারাতে পারলে আরও একবার ভিজে উঠবে সবার চোখ। অশ্রু তো আনন্দেরও হয়, নাকি!
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।