ধর্ষিতা আনন্দধ্বনি করছে তার ধর্ষকদের সমর্থনে: তসলিমা
ঢাকায় ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচে বাংলাদেশি দর্শকদের একাংশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন তসলিমা নাসরিন। শনিবার শের-এ-বাংলা স্টেডিয়ামে হাজির হাজার হাজার দর্শকের মধ্যে অনেককেই পাকিস্তানের হয়ে গলা ফাটাতে দেখা গিয়েছে। তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন নির্বাসিত লেখিকা। একাত্তরের বন্ধুর পরাজয় চেয়ে একাত্তরের শত্রুর সমর্থনে উল্লাস করছে বাংলাদেশের মানুষ! বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তসলিমা। প্রতিবাদ জানিয়েছেন ফেসবুকের মাধ্যমে।
শনিবার রাতে যখন ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ চলছে, তখনই ফেসবুকে নিজের প্রতিবাদ পোস্ট করেন তসলিমা নাসরিন। তিনি লিখেছেন, ‘‘বাংলাদেশের স্টেডিয়ামে এখন যে ভারত-পাকিস্তানের খেলায় পাকিস্তানের সমর্থনে বাংলাদেশি দর্শকরা আনন্দে চিৎকার করছে, কেন করছে? পাকিস্তান ভাল খেলছে বলে? নাকি ভাল খেলুক বা না খেলুক, দলটি পাকিস্তান বলে? দলটি পাকিস্তান বলে যারা সমর্থন করছে, আমার খুব জানতে ইচ্ছে, তারা কি একাত্তরের মিত্র-দেশকে না করে জেনে বুঝে শত্রু-দেশকে সমর্থন করছে?’’
প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমে ঝটপট উইকেট খুইয়ে ৮৩-তে অলআউট হয় পাকিস্তান। ভারত ব্যাট করতে নামার পর, শুরুতে বেশ ধাক্কা খায় ভারতও। খুব দ্রুত ৩টি উইকেট পড়ে যায়। সেই সময় শের-এ-বাংলা স্টেডিয়ামে হাজির অনেককেই উল্লাস করতে দেখা গিয়েছে। ফসবুক পোস্টের মাধ্যমে তাঁদেরকেই ১৯৭১ সাল মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন তসলিমা। তিনি লিখেছেন, ‘‘নতুন প্রজন্ম না হয় একাত্তরের যুদ্ধ দেখেনি, কিন্তু শুনেছে বা পড়েছে তো যুদ্ধ সম্পর্কে। এখনও তো অর্ধ শতাব্দীও পার হয়নি। তিরিশ লক্ষ মানুষকে খুন করে গেছে ওরা, দু’লক্ষ মেয়েকে ধর্ষণ করে গেছে। জানি পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ বা ক্রিকেটাররা খুন বা ধর্ষণ করেনি, করেছে পাকিস্তানি সেনার দল। কিন্তু সাধারণ মানুষ বা ক্রিকেটাররা কি একাত্তরে তাদের দেশের ভূমিকার জন্য লজ্জিত, দুঃখিত, ক্ষমাপ্রার্থী? মনে হয় না।’’
তসলিমা নাসরিনের ফেসবুক পোস্টটি দেখলেই বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশি দর্শকদের একাংশ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের পরজায় চাওয়ায় তিনি মর্মাহত। নিজের পোস্টের শেষাংশে তাঁর প্রতিবাদ সবচেয়ে জোরালো। তিনি লিখেছেন, ‘‘আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে, পাকিস্তানকে সমর্থন করতে গেলে, ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বলতে গেলে, বা পাকিস্তানের পতাকা ওড়াতে গেলে বাংলাদেশের মানুষদের একটুও কি বুক কাঁপে না, কণ্ঠ কাঁপে না, হাত কাঁপে না? আনন্দধ্বনি শুনে আমার মনে হচ্ছিল এক ধর্ষিতা নারী আনন্দধ্বনি করছে তার ধর্ষকদের সমর্থনে।’’
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।