- হোম
- >
- বাংলা ও বাঙালি
- >
- বিপ্লবী কামাক্ষ্যা রায় চৌধুরীর জীবন অবসান
বিপ্লবী কামাক্ষ্যা রায় চৌধুরীর জীবন অবসান
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রকাশ : ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
প্রিন্টঅঅ-অ+
উপ মহাদেশের প্রবীন বিপ্লবী, প্রখ্যাত কৃষকনেতা কমরেড কামাক্ষ্যা রায় চৌধুরী চলে গেলেন না ফেরার দেশ। রবিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টার দিকে তিনি খুলনার ডুমুরিয়ার নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য ভক্ত, গুণগ্রাহী, অনুসারী ও সহযোদ্ধা রেখে গেছেন।
বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা ও প্রবীন এ কমিউনিস্ট দীর্ঘদিন ধরে বার্ধ্যক্যজনিত রোগে ভূগছিলেন। পারিবারিক ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন অনেকদিন ধরে। ঢাকায় উদীচী আয়োজিত সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী দক্ষিণ এশীয় সাংস্কৃতিক কনভেনশনে যোগ দিতে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ তিনি ঢাকা আসেন।
আমৃত্যু সংগ্রামী ও বিপ্লবী জন্মগ্রহণ করেন ১৯২০ সালের ২০ জুন খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার ভ্রদ্রাদিয়া গ্রামে। তার বাবা ছিলেন শরদিন্দু রায় চৌধুরী ও মা মৃণালিনী রায় চৌধুরী।
বাবার চাকুরির সুবাদে তারা থাকতেন সৈয়দপুর জেলায়। সৈয়দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিপ্লবী সুবোধ সুরের সংস্পর্শে এসে ১৬ বছর বয়সেই (১৯৩৬ সালে) স্বদেশী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। সেই সময়ের স্বদেশী বিপ্লবীদের দল ‘অনুশীলন’র সক্রিয় কর্মী হেসেবে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন তিনি। পরে স্বদেশী ও বিপ্লববাদীরা কমিউনিস্ট আদর্শে দিক্ষীত হলে তার গুরু সুবোধ সুরের সঙ্গে তিনিও কমিউনিস্ট মতাদর্শকে জীবনের পাথেয় করে নেন। ১৯৩৯ সালে, যে বছর তিনি মেট্রিকুলেশন দেন সেবছরই কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। ওই বছরই তার বাবা মারা গেলে মা সহ পরিবারের অন্যদের নিয়ে তিনি ডুমুরিয়ার ভ্রদ্রাদিয়ায় চলে আসেন এবং পরিবারের হাল ধরেন।
এরপর দু’বছর শিক্ষাবিরতি শেষে ১৯৪১ সালে দৌলতপুর হিন্দু একাডেমিতে (বর্তমানে বিএল কলেজ) আইএ তে ভর্তি হন। এখানেই তিনি কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র সংগঠন ছাত্র ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৪২ সালে ছাত্রাবস্থায় গান্ধিজীর ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে যুক্ত থাকার কারণে কারাবরণ করতে হয়। ২ বছর কারাভোগের পর ১৯৪৩ সালে তিনি মুক্তি পান।
মুক্তির পরপরই পার্টির নির্দেশে ভারতজুড়ে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় ঝাঁপিয়ে পড়েন কামাক্ষ্যা রায় চৌধুরী। দুর্ভিক্ষের পরপরই সারাদেশে কৃষক আন্দোলন গড়ে তোলায় মনযোগ দেন তিনি। সেই সময়ের দক্ষিণাঞ্চলের প্রখ্যাত কমিউনিস্ট বিপ্লবী ও কৃষক নেতা বিষ্ণু চ্যাটার্জির সংস্পর্শে এসে মূলত কৃষক আন্দোলনে ব্রতী হন এবং খুলনা জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সার্বক্ষণিক কর্মী হিসেবে কাজ করেন।
ওই সময়ের যশোর অঞ্চলের আব্দুল হক, অমল সেন প্রমুখ বিপ্লবীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অংশ নেন তেভাগা আন্দোলনে। এই সময়েই (১৯৪৫) তিনি খুলনার চুকনগর বিদ্যা ভবনের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। বেশ কিছুদিন সেখানে শিক্ষকতা করেন। তেভাগা আন্দোলনে যুক্ত থাকার কারণে ১৯৪৮ সালে তিনি আরো একবার কারাবন্দী হন। মুক্তি পান ১৯৫৫ সালে। জেলে থাকাকালীন রাজবন্দীদের নানা দাবি দাওয়া এবং বাংলার নানা আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে অপরাপর বিপ্লবীদের সঙ্গে তিনিও বিভিন্ন সময় অনশন ও আন্দোলনে অংশ নেন। কারামুক্ত হওয়ার পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যখন কমিউনিস্ট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ তখন সারা বাংলার গ্রামেগঞ্জে গোপনে কমিউনিস্ট পার্টি ও তার বিভিন্ন গণ সংগঠন গড়ে তোলার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। বিশেষ করে কৃষক সমিতি গঠনে হুলিয়া মাথায় নিয়েও সারা দেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন এ বিপ্লবী।
বৃটিশ এবং পরবর্তীতে পাকিস্তানীদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক ছিলেন সেই সময়ের ৫ বিপ্লবী। তারা কমিউনিস্টদের কাছে বিপ্লবীদের পঞ্চপাণ্ডব বলে পরিচিত ছিলেন। এ পঞ্চপাণ্ডবের অন্যতম ছিলেন কামাক্ষ্যা রায় চৌধুরী। অন্য চার বিপ্লবী হলেন- কমরেড জসীম উদ্দিন মণ্ডল, বরুণ রায়, সাতকৌড়ি দত্ত ও সুবোধ চৌধুরী।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যখন এদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের নানা পর্যায়ের সংগ্রাম সংগঠিত হচ্ছিল তখন তিনি সেসব সংগ্রামে নানাভাবে অংশগ্রহণ করেন। ৬২, ৬৬, ৬৯ এর প্রতিটি অভ্যূত্থান সংগঠিত করতে তিনি ভূমিকা রাখেন। ১৯৭১-এ বয়সের কারণে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে না পারলেও তিনি কুষ্টিয়ায় থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেন।
আমৃত্যু বিপ্লবী ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের কিংবদন্তী এ নেতার মৃত্যুতে এ দেশের প্রগতিশীল, গণাতন্ত্রিক আন্দোলন ও কমিউনিস্ট কর্মীদের মধ্যে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তার মৃত্যুর খবরে তাৎক্ষণিক শোক জানিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্টীর সভাপতি কামাল লোহানী ও সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার।
তথ্যসূত্র: বিপ্লবীদের কথা
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।