এক বছর ধরে পুরনো ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে যাচ্ছে পুলিশ
এক বছর পূর্ণ হতে চললেও ব্লগার ও বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায়ের মামলার অগ্রগতি নিয়ে হতাশ তার পরিবার।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে ভাঙ্গা রেকর্ড বাজাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অভিজিৎ রায়ের বাবা অধ্যাপক অজয় রায়। এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অগ্রগতি হচ্ছে তদন্তের। আমেরিকা থেকে এফবিআইও এ ঘটনার আলামত পরীক্ষা করে ডিএনএ প্রতিবেদন তৈরি করে ফেলেছে। এখন তা পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) অভিজিৎ এর বাবা অজয় রায় জানান, মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) অভিজিৎ হত্যা মামলার বিষয়ে গত এক বছর ধরে একই কথা বলে যাচ্ছে। তারা পুরনো ভাঙা রেকর্ডই বাজিয়ে যাচ্ছে। তাই এই বিচার নিয়ে আশার জায়গাটি সংকুচিত হচ্ছে ক্রমশই।
তিনি বলেন, পুলিশ বলছে তারা এ ঘটনায় নজরদারিতে রেখেছে বেশ কয়েকজনকে। কিন্তু এখনো তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। নজরদারিতে রাখা ওইসব ব্যক্তিরা তো পশ্চিমবঙ্গ কিংবা আগরতলাতেও চলে যেতে পারে। এখন পর্যন্ত তারা এ ঘটনায় সব প্রতিবেদন একত্রিতও করতে পারেনি।
‘এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের বিচারহীনতার ফলে মুক্তবুদ্ধির চিন্তা যারা করেন তারাও সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে’ উল্লেখ করে অজয় রায় বলেন, ব্লগাররা ঘটনা প্রবাহের বিশ্লেষণ করেন। এরপর তাদের মতবাদ দেন। এটা মুক্তবুদ্ধির চিন্তাকে প্রসারিত করে। বাংলাদেশ একটি স্যাকুল্যার দেশ। এসবের বিচার না হলে উগ্রপন্থি যারা ইসলামের নামে অনৈসলামিক কাজ করে তারা উৎসাহিত হবে। ব্লগাররা এমন কোনো কথা বলেন না যা মানুষকে আঘাত করে। যদি কেউ এমন কথা বা লিখে থাকে এজন্য নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয় আছে। তারাই এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কিন্তু এসব না করে উগ্রপন্থিরা নিজেরাই আইন হাতে তুলে নিচ্ছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখন আর তাকে কেউ হুমকি দিচ্ছে না। দেশের ভিআইপিদের যারা নিরাপত্তা দেন ওইরকম একটি বাহিনীর লোকজন আমাকে প্রস্তাব দিয়েছিল সার্বক্ষণিক বডিগার্ড দেয়ার জন্য। আমি তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছি। এরপর তারা আমার বাসার সামনে পুলিশ প্রহরার প্রস্তাব দিলে তাও আমি প্রত্যাখান করি। তবে আমাকে সার্বক্ষণিক অদৃশ্য প্রহরা দেয়া হয়। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অন্যসব হত্যকাণ্ডের মত ব্লগার হত্যাণ্ডেরও বিচার দাবি করেন।
অজয় রায় বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সাথে গত বছর আমার মিনিট দশেক কথা হয়েছিল। তিনি আমাকে অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের বিচারের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কয়েকবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথেও আমার দেখা হয়েছে। তিনিও আমাকে বিচারের আশ্বাস দেন।
এদিকে অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের অগ্রগতি প্রসঙ্গে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের যে আলামত বাংলাদেশ থেকে এফবিআই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে গেছে তার ডিএনএ প্রতিবেদন তৈরি হয়ে গেছে বলে আমাদেরকে জানানো হয়েছে। এখন প্রতিবেদনটি দেশে আনার প্রশাসনিক প্রক্রিয়া চলেছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদেরও ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি আরো বলেন, অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের মামলাটি ছিল ক্লু বিহীন। আমরা কয়েকজনকে চিহ্নিত করি। ঘটনা অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ছিল। যখন শিক্ষিত সমাজ কোনো ঘটনা সুপরিকল্পিতভাবে ঘটায় তখন এটা বের করতে সময় লাগে। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত আমরা আটজনকে গ্রেপ্তার করেছি। গ্রেপ্তারকৃত ফারাবি ও মান্নান রাহী ঘটনাকে প্ররোচিত করেছিল। ঘটনাটি ঘটায় তিনজনের একটি গ্রুপ। তবে ঘটনার সময় আশেপাশে আরো ৬ থেকে ৭ জন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত ৮ জন ছাড়া আরো কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে ভিডিও ফুটেজে তারা নেই। গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য।
উল্লেখ্য, গত বছর বইমেলা থেকে বেরুনোর পথে টিএসসির মোড়ে দুষ্কৃতিকারীদের হাতে নিহত হন বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়। এসময় তার স্ত্রী গুরুতর আহত হলেও শেষ পর্যন্ত প্রাণে বেঁচে যান তিনি। আগামীকাল ২৬ ফেব্রুয়ারি এ হত্যাকাণ্ডের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।