আমি চাই ডেইলি স্টার এই মানটা ধরে রাখুক
মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে দেশের আনাচে কানাচে যেসব মামলা মোকদ্দমা হচ্ছে এগুলি সব ফালতু মামলা। এগুলি কোনটাই সম্ভবত শেষ বিচারে টিকবে না। কিন্তু এই যে বেচারাকে হয়রানি হতে হচ্ছে এর খেসারত কে দিবে? যতদূর দেখেছি এইগুলি সবই ফৌজদারি মামলা, বেশিরভাগই মানহানির মামলা, একটা দুইটা নাকি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাও আছে। এই ঘটনায় রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা কি করে করে আল্লা মালুম। দেওয়ানী মামলা চোখে পরে নাই। এইসব উৎসাহী বাদীরা অবশ্য দেওয়ানী মামলা করারও কথা না- দেওয়ানী মামলা করলে কোর্ট ফি দিতে হয়।
ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবেরা অনেক ক্ষেত্রেই মামলা সরাসরি খারিজ করে দিতে পারেন। এই যে দেশের প্রায় সব জেলা শহরেই মামলা হচ্ছে বলে খবর দেখি, এগুলিও ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবরা সরাসরি খারিজ করে দিতে পারতেন। খারিজ করে দেওয়ার সঙ্গত কারণও আছে। ঢাকায় আমার মানহানি করলেন আপনি আর পচাগড়ে মামলা করলো আমার ভাবশিশ্য এটা হয় নাকি? ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবরা কোথাও কোন মামলা সরাসরি খারিজ করেছে বলে শুনিনি। উল্টা নারায়ণগঞ্জে না কোথায় যেন এক মামলায় নাকি মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্টও ইস্যু করেছেন এক ম্যাজিস্ট্রেট। কি আর বলার আছে বলেন?
অবশ্য ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবদের দোষও দিতে পারিনা। একটা জেলা শহরে একদল আওয়ামী লীগের পাণ্ডা ধরনের উকিল একটা মামলা নিয়ে এসেছে, সাথে যুবলীগ ছাত্রলীগের বাহুবলীরাও আছেন। মামলার বিষয়বস্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের মানস কন্যা বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। কোর্টরুমের দৃশ্যটা কি হতে পারে অনুমান করেন তো! ঐরকম ইলেক্ট্রিফাইড কোর্টরুমে একজন ২৬, ২৭ বা ২৮ বছর বয়সী ছেলে যে হয়তো বছর দুয়েক আগে মাত্র চাকরীতে যোগ দিয়েছে সে আর কি করবে? মামলাটি তদন্তের জন্যে পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে দায় সারবে। নিরাপদ আদেশ।
মাঝখান থেকে মাহফুজ আনামের হয়রানী আরকি।
(২)
এইসব মামলার হিড়িক দেখে আমার মনে একটা প্রশ্ন গজিয়েছে।
আপনার প্রিয়জনের নামে যদি একটা মিথ্যা মানহানিকর খবর ছাপা হয় কাগজে আপনি কি করবেন? পত্রিকায় প্রতিবাদ পাঠাবেন, প্রেস কাউন্সিলে যাবেন এবং ধরে নিলাম মানহানির মামলাও করবেন প্রিয়জনের হয়ে। আপনি কি আট নয় বছর বসে থাকবেন মামলা করার জন্যে? না। কেন? আপনি তো জানেনই যে খবরটা মিথ্যা, সুতরাং বসে থাকার কি আছে?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই ভক্তরা এতদিন মামলা করেননাই কেন? ইমারজেন্সির সময় না হয় বুঝলাম মিলিটারিদের ভয় ছিল। পরে করলেন না কেন? মাহফুজ আনামের ভুল স্বীকারের জন্যে বসেছিলেন? আমার মনে যে প্রশ্নটা জেগেছে সেটা এটা না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে মননীয় প্রধানমন্ত্রীর এইসব ভক্তরা কি তবে তখন এইসব দুর্নীতির খবর সত্য বলে বিশ্বাস করেছিল?
এখন এই প্রশ্ন মাই আওয়ামী লীগের কোন নেতা কর্মীকে জিজ্ঞাসা করবো না। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় থাকবে না তখন এই প্রশ্ন করা যাবে। জানেনই তো, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতার বাইরে থাকে তখন মোটামুটিভাবে একটা প্রপার সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। ক্ষমতায় থাকলে কি হয় সে তো দেখতেই পাচ্ছেন আরকি।
(৩)
কিন্তু সেই সাথে এইটাও ঠিক যে মাহফুজ আনাম যদি ভুল স্বীকারই করেন তাইলে তার দায়ভারও তাঁরই নেওয়া উচিৎ। এইখানে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে একমত। আপনি একজন সম্পাদক হিসাবে যখন নিজেই স্বীকার করছেন যে তিনি ভুল করেছেন এবং যেটা করেছেন সেটা দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ ছিল তাইলে তাঁর উচিৎ সম্পাদকের পদ থেকে সরে দাঁড়ানো।
এই কথাটা বিশেষ করে মাহফুজ আনামের ক্ষেত্রে আরও বেশী প্রযোজ্য। কেননা মাহুফুজ আনাম এবং ডেইলি স্টার পশ্চিমা ধরনের গণতান্ত্রিক আচার আচরণ ইত্যাদির পক্ষে কথা বলেন। পশ্চিমে তো এইরকম পরিস্থিতে লোকে পদত্যাগ করেই। এটাই সভ্য রীতি। ডেইলি স্টার তো বলা যায় সাংবাদিকতার একটা স্ট্যান্ডার্ড সেট করেছে বাংলাদেশে। আপনি কেন এই সভ্য রীতি মানবেন না।
এটা তো মানতেই হবে যে বাংলা ইংরেজি মিলিয়েই আমাদের দেশে সম্ভবত সবচেয়ে সুশীল মানের কাগজ ডেইলি স্টার। না, আমি ব্যাঙ্গ করে বলছি না, আমার বাসায় প্রতিদিন ডেইলি স্টার আসে। আমি পড়ি আমার স্ত্রী কন্যারা পড়েন। রাজনৈতিক মতের কথা যদি বলেন তাইলে আমি তো অবশ্যই ওদের পক্ষের না। কিন্তু তাতে কি। আমি চাই ডেইলি স্টার এই মানটা ধরে রাখুক। সাংবাদিকতায় পেশাদারিত্বের যে ব্যাপার আছে, সেটার গুরুত্ব যে কোন সমাজের জন্যেই অপরিসীম।
সেই পেশাদারিত্বেরই একটা অংশ দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে পদত্যাগ করা। মাহফুজ আনাম যদি আজকে পদত্যাগ করেন, তাইলে তাঁর প্রতি আমার সম্মান বাড়বে। যদি না করেন? তাইলে আরকি! অবাক হবোনা, আবার নিশ্চিত হবো যে তিনিও সেইসব ইয়েদেরই একজন, হয়তো একটু উন্নতমানের আরকি।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।