বর্ণিল আয়োজনে উদীচী’র দক্ষিণ এশীয় সাংস্কৃতিক কনভেনশন উদ্বোধন
সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা এই দুইয়ের বিরুদ্ধে নিরবচ্ছিন্নভাবে সংগ্রাম অব্যাহত রাখার প্রত্যয় নিয়ে শুরু হলো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজিত “সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী দক্ষিণ এশীয় সাংস্কৃতিক কনভেনশন”।
১৯ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বিকাল তিনটায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে তিন দিনব্যাপী কনভেনশনের উদ্বোধন করেন তিন প্রবীণ বিপ্লবী কামাক্ষ্যা রায়চৌধুরী, কমরেড জসিম উদ্দিন মণ্ডল এবং অধ্যাপক যতীন সরকার। ১৯, ২০ ও ২১ ফেব্রুয়ারি- এই তিন দিন চলবে এ কনভেনশন। বিকাল চারটায় আনুষ্ঠানিকভাবে কনভেনশনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন তিন উদ্বোধক। এসময় জাতীয় সঙ্গীতের সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন প্রবীণ বিপ্লবী জসিম উদ্দিন মণ্ডল। সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি কামাল লোহানী। এসময় কনভেনশন পতাকা উত্তোলন করেন দুই উদ্বোধক কামাক্ষ্যা রায়চৌধুরী ও অধ্যাপক যতীন সরকার এবং অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর একজন করে প্রতিনিধি মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণার পর উদ্বোধনী পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন উদীচীর শিল্পী-কর্মীরা। উদীচীর সহ-সভাপতি শংকর সাওজালের পরিকল্পনায় এ আলেখ্যে তুলে ধরা হয় বাংলার আবহমান অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের নানা পর্ব। মহান মুক্তিযুদ্ধে নৃশংসতম গণহত্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম, খুলনার চুকনগর গণহত্যার ঘটনাকে অসাধারণ ভঙ্গিমায় উপস্থাপন করেন উদীচীর শিল্পীরা। আলেখ্যের শেষ পর্যায়ে মঞ্চে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে আসা হয় চুকনগর গণহত্যার সময় লাশের স্তুপ থেকে একটি মেয়েকে উদ্ধার করে তাকে স্ব-ধর্মে বড় করে মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করা এরশাদ আলী ও সেই মেয়ে সুন্দরী বালাকে। উদ্বোধনী আলেখ্যানুষ্ঠানের পর উদ্বোধনী পর্বে বক্তব্য রাখেন কামাক্ষ্যা রায়চৌধুরী, কমরেড জসিম উদ্দিন মণ্ডল, অধ্যাপক যতীন সরকার, সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এবং অংশগ্রহণকারী দেশ- ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, চীন, জাপান, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশের একজন করে প্রতিনিধি। এতে বক্তব্য রাখেন, ভারতের হিরন্ময় ঘোষাল, জাপানের নাওমি ওয়াতানাবে, পাকিস্তানের রাহাত সাঈদ, শ্রীলঙ্কার মোহাম্মদ ইকবাল এবং নেপালের অমর রাজগিরি। এছাড়াও, বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। এ পর্বের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন উদীচীর সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার। উদীচীর সভাপতি কামাল লোহানীর বক্তব্যের মাধ্যমে শেষ হয় কনভেনশনের উদ্বোধনী পর্ব। উদ্বোধনী পর্ব সঞ্চালনা করেন উদীচীর সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম।
এরপর সন্ধ্যা ছয়টা থেকে শিল্পকলা একাডেমীর সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এ পর্বে একক গান নিয়ে মঞ্চে আসেন প্রথিতযশা শিল্পী কিরণ চন্দ্র রায়, অনিমা মুক্তি গোমেজ, মাহমুদ সেলিম, হাবিবুল আলম ও বিপ্লব রায়হান। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত লোকসঙ্গীত গবেষক ও গণসঙ্গীত শিল্পী শুভেন্দু মাইতি ও অংশুমান চৌধুরীও পরিবেশন করেন দুর্দান্ত উপস্থাপনা। দলীয় পরিবেশনা উপস্থাপন করেন ফরহাদ এন্ড ট্রুপ, দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নটরাজ এবং ত্রিপুরার শিল্পীরা। ছিল বাচিক শিল্পী বেলায়েত হোসেনের আবৃত্তি পরিবেশনা।
কনভেনশনের দ্বিতীয় দিন, ২০ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকাল থেকে শুরু হবে নানা ধরনের সেমিনার আয়োজন। এসব সেমিনারে অংশ নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী লড়াই-সংগ্রামের ধরণ ও পদ্ধতি নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর প্রতিনিধিরা। থাকবে কীভাবে সমন্বিতভাবে এ দুই বিশ্ববাপী অপশক্তিকে মোকাবিলা করা যায়, পরাজিত করা যায়, সে সম্পর্কে কৌশল নির্ধারণমূলক আলোচনা। কনভেনশনের তৃতীয় দিন, অমর একুশের দিন সকালে আমন্ত্রিত বিদেশি অতিথিদের নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন উদীচী নেতৃবৃন্দ। এরপর দুপুরে মধ্যাহ্ন বিরতির পর অনুষ্ঠিত হবে কনভেনশনের চূড়ান্ত প্যানারি সেশন। তিনদিন ধরে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিদের আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে তৈরি করা “ঢাকা ঘোষণা” উপস্থাপন করা হবে কনভেনশনের শেষ দিন, ২১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে।
উদীচী আয়োজিত তিন দিনব্যাপী “সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী দক্ষিণ এশীয় সাংস্কৃতিক কনভেনশন”-এর প্রতিদিনই সন্ধ্যায় থাকছে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এসব পর্বে ভারত থেকে আগত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং অন্যান্য দেশের শিল্পীরা ছাড়াও দেশের প্রখ্যাত শিল্পী ও সংগঠনসমূহের পরিবেশনা থাকবে। উদীচীর শিল্পী-কর্মীরা ছাড়াও এ কনভেনশনের নিজেদের পরিবেশনা নিয়ে উপস্থিত থাকবেন সমগীত, মাদল, কিরণ চন্দ্র রায়, তিমির নন্দী, কফিল আহমেদ, সায়ান, অনিমা মুক্তি গোমেজ, সুমা রায় প্রমূখ। নৃত্য পরিবেশনা করবে নৃত্য দল নটরাজ এবং অনিক বসুর দল। এছাড়া, বাচিক পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসবেন বিশিষ্ট আবৃত্তি শিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, রুপা চক্রবর্তী ও বেলায়েত হোসেন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।