- হোম
- >
- আইন-মানবাধিকার
- >
- বড় বোন সাজা ভোগ করলেন ছোট বোনের
বড় বোন সাজা ভোগ করলেন ছোট বোনের
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
প্রিন্টঅঅ-অ+
বড় বোনের নাম শুধুই লাকি। আগে-পরে কিছু নেই। তাঁর ছোট বোনের নাম মুক্তা বেগম। কিন্তু পাসপোর্টে তিনি নিজের নাম দিয়েছেন লাকি আক্তার মুক্তা। আর এখানেই বিপত্তি। বড় বোনের নামের সঙ্গে মিল থাকায় লাকিকে জেল খাটতে হয়েছে তিন মাস।
আদালতের নথি ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ছোট বোন মুক্তা সোনা চোরাচালান মামলার আসামি। পাসপোর্টের নামে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন লাকি আক্তার মুক্তার নামে। কিন্তু গত বছরের ১৭ নভেম্বর পুলিশ প্রকৃত আসামি ছোট বোন লাকি আক্তার মুক্তাকে গ্রেপ্তার না করে বড় বোন লাকিকে গ্রেপ্তার করে চালান করে দেয় আদালতে।
সেই থেকে তিনি কারাগারে। এরপর মূল আসামি গত বৃহস্পতিবার লাকি আক্তার মুক্তা ঢাকার আদালতে আত্মসমর্পণ করে বলেন, মাননীয় আদালত, আমি মামলার প্রকৃত আসামি। আমার বোন লাকি নির্দোষ। তাকে মুক্তি দিন। আসামির এমন বক্তব্যের পর ঢাকার ১৬ নম্বর মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবুল কাসেম নির্দোষ বড় বোন লাকিকে মুক্তি দেওয়ার আদেশ দেন। ছোট বোন মুক্তাকে পাঠান কারাগারে।
আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, মূল আসামি লাকি আক্তার মুক্তা স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করায় এটি স্পষ্ট যে, পূর্বে গ্রেপ্তারকৃত লাকি মামলার আসামি নন। তাই তাঁকে মুক্তির আদেশ দেওয়া হলো। আর মামলার প্রকৃত আসামি লাকি আক্তার মুক্তাকে পাঠানো হোক কারাগারে।
নিরপরাধ লাকি আদালত এলাকায় ভেঙে পড়েন কান্নায়। পরে তিনি বলেন, ‘যখন আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়, তখন আমি পুলিশকে বারবার বলছিলাম, আমার নাম শুধুই লাকি। আমি আসামি না। আমি নিরপরাধ। আমার ছোট বোন আসামি। ওর নাম লাকি আক্তার মুক্তা। আমাকে আপনারা গ্রেপ্তার করতে পারেন না। এরপরও পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করে। সেই থেকে আমি জেল খাটছি। আমি এর বিচার চাই।’
নিরপরাধ লাকিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে চালান দিয়েছিলেন যাত্রাবাড়ী থানার উপসহকারী পরিদর্শক (এএসআই) শামসুল হক। কেন নিরপরাধ লাকিকে গ্রেপ্তার করা হলো—এমন প্রশ্নের জবাবে এএসআই শামসুল হক বলেন, ‘বড় বোনের নাম লাকি। আবার ছোট বোনের নামের এক জায়গায় লাকি রয়েছে। এই দুজনের স্বামীর নামেরও কিছু মিল আছে। বড় বোনের স্বামীর নাম হারুন দেওয়ান আর ছোট বোনের হারুন-অর-রশীদ। নামের মিল থাকায় গ্রেপ্তার করে আদালতে চালান করি লাকিকে।’
নথি থেকে জানা যায়, গত বছরের ১২ এপ্রিল শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক কেজি সোনাসহ গ্রেপ্তার হন লাকি আক্তার মুক্তা। পরে তাঁর নামে বিমানবন্দর থানায় মামলা হয়। ঐ বছরের ৯ জুলাই জামিন হয় লাকির। এরপর পরই ছাড়া পান আসামি মুক্তা।
এ নিয়ে শীর্ষস্হানীয় একটি সংবাদপত্রে ‘সোনা চোরাচালানের জামিন মাদকে’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিষয়টি জানাজানি হলে ঐ বছরের ৩০ আগস্ট লাকি আক্তার মুক্তার জামিন বাতিল করেন হাইকোর্ট। এরপর থেকে পলাতক ছিলেন তিনি। পরে বিচারিক আদালত লাকি আক্তার মুক্তার নামে জারি করেন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা।
এই পরোয়ানার সূত্র ধরে নিরপরাধ লাকিকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠায় যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।