সুন্দরবনে কুমিরের সংখ্যা মাত্র একশ
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
প্রিন্টঅঅ-অ+
বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনে জাতীয় প্রাণী কুমিরের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে এসেছে। কুমিরের সংখ্যা জানতে সম্প্রতি সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে চালানো জরিপে জানা যায় বর্তমানে মাত্র ১০০ বা তার অল্প কিছু বেশি সংখ্যক কুমির রয়েছে।
চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে বন বিভাগ ও বেসরকারি বন্যপ্রাণী গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন ন্যাচারাল রিসোর্সেস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (ক্যারিনাম) সুন্দরবনে কুমির গণনা শুরু করে।
খুলনার বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ জাহিদুল কবির জানান, জরিপের জন্য তারা চারটি ভাগে ভাগ হয়ে গোটা সুন্দরবনে প্রাথমিক তথ্যা-উপাত্ত সংগ্রহ শেষ করেছেন। সংগ্রহ করা এসব তথ্য-উপাত্তগুলো বিশ্লেষণের কাজ চলছে। বিশ্লেষণ শেষ হলে সুন্দরবনে কুমিরের প্রকৃত সংখ্যা জানা যাবে।
সুন্দরবনের মোট আয়তন ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশে রয়েছে ছয় হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। বাকি অংশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত।
বাংলাদেশ অঞ্চলে সুন্দরবনের জলভাগের পরিমাণ এক হাজার ৮৭৩ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে ছোট-বড় প্রায় ৪৫০টি নদী ও খাল রয়েছে।
কুমির বিশেষজ্ঞ আবদুর রব জানান, সুন্দরবনের জলভাগের পরিমাণ অনুযায়ী অন্তত ছয় থেকে সাত হাজার কুমির বিচরণ করার কথা। কিন্তু সর্বশেষ গত ১৯৮৫ সালের আইআরএম রির্পোট অনুযায়ী ১৫০ থেকে ২০০ কুমির রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। বাস্তবে গোটা সুন্দরবনে এখন মাত্র একশর মতো কুমির থাকতে পারে।
তিনি বলেন, সুন্দরবনে ‘মার্শ’ ও ‘এস্টুয়ারাইন’ প্রজাতির কুমির ছিলো কিন্তু ১৯৬৩ সাল থেকে ‘মার্শ’ প্রজাতির কুমির বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে সুন্দরবনে কেবল ‘এস্টুয়ারাইন’ প্রজাতির কুমির রয়েছে যা আজ প্রায় বিলুপ্ত পথে।
‘এস্টুয়ারাইন’ প্রজাতির কুমিরকে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতিতে অন্তর্ভুক্ত করে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার অ্যান্ড ন্যাচারাল রিসোর্সেস (আইইউসিএন) এর রেড বুকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগর বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ সাইদুল ইসলাম জানান, লবণ পানির কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও লালন-পালনের জন্য ‘সুন্দরবন বায়োডাইভার্সিটি কনজারভেশন’ প্রকল্পের আওতায় ২০০২ সালে পূর্ব সুন্দরবনের করমজল পর্যটন কেন্দ্রে আট একর জমিতে দেশের একমাত্র সরকারি কুমির প্রজনন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রে বর্তমানে ২৫৮টি কুমির রয়েছে।
কুমির গণনার সমন্বয়ক ডিএফও মোঃ জাহিদুল কবির বলেন, জরিপের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী গোটা সুন্দরবনে বর্তমানে একশ বা তার কিছু বেশি কুমির রয়েছে বলে জানা যায়। তবে জরিপকালে প্রাপ্ত সব তথ্য বিশ্লেষণের আগে চূড়ান্ত করে এই সংখ্যা বলা যাচ্ছে না।
চলতি বছরের এপ্রিল মাস নাগাদ জরিপের চূড়ান্ত ফলাফল জানা যাবে বলেও জানান তিনি।
তবে এবারের জরিপ থেকে সুন্দরবনের কুমির সম্পর্কে নতুন নতুন অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রাকৃতিক পরিবেশে কুমির সংরক্ষণের বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হবে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।