শোষিতের গণতন্ত্র কায়েমের জন্য বঙ্গবন্ধু বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেন
মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু, সুইডেন থেকে
প্রিন্টঅঅ-অ+
১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। যার সংক্ষিপ্ত নাম বাকশাল। বাকশাল ছিল এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা। বঙ্গবন্ধু এই একদলীয় শাসন বেবস্থার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে শোষিতের গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। এইসময় আওয়ামী লীগের সকল অঙ্গসংগঠনের নামের প্রারম্ভে লাগানো হয়েছিল জাতীয় শব্দটি। ফলে ছাত্রলীগের নাম হয়ে যায় জাতীয় ছাত্রলীগ। ঠিক একইভাবে শ্রমিকলীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগ সহ সংগঠনগুলো এই পরিচয় লাভ করে। জাতীয় ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ছিলেন শেখ সহিদুল ইসলাম এবং জাতীয় ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন সৈয়দ নুরুল ইসলাম। ১৩ সদস্য বিশিষ্ট এই ঢাকা মহানগর কমিটির কমিটির একজন সদস্য হিসেবে আমি সহ আরো দুইজন খন্দকার শওকত হোসেন (অবসরপ্রাপ্ত সচিব) ও আব্দুর রউফ শিকদারকে (ঢাকায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়) দেওয়া হয়েছিল ঢাকা মহানগরের সকল কলেজ সংগঠনগুলো দেখার দায়িত্ব। দীর্ঘ ৪০ বত্সর পর এখনো বাংলাদেশে এই বাকশাল নিয়ে চলছে সমালোচনা চলছে রাজনীতি। আসলে কি ছিল এই বাকশাল?
আজ কাল কথায় কথায় কিছু কিছু রাজনৈতিক দল থেকে বাকশাল প্রথার বিরুদ্ধে কথা বলতে শুনা যায়। বলা হয় সেদিন নাকি বাকশাল গঠনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিলেন। কিন্তু কি সেই গণতন্ত্র? কেন বঙ্গবন্ধু এই গণতান্ত্রিক প্রথাকে পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন? এই গণতন্ত্রে কি কখনো সংসদে কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের প্রতিনিধিত্ব সৃষ্টি হয়েছে? দেশের বর্জুয়া গণতন্ত্রকে পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু যদি শোষিতের গণতন্ত্র কায়েমের জন্য বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে থাকেন তাহলে এখানে অপরাধ কোথায়? বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে আজ পর্যন্ত যারা সংসদে বসার সুযোগ পেয়েছেন কিংবা করে নিয়েছেন তারা কি কেউ মেহনতি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন? রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্র শব্দটাকে কি এখানে নিজেদের স্বার্থে বেবহার করছে না? গণতন্ত্র শব্দটি নিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে আর কতদিন রাজনীতিবিদরা এভাবে বোকা বানাবার চেষ্টা করবেন? এর শেষ কোথায়? গণতন্ত্র গণতন্ত্র নিয়ে এই খেলা কি আদৌ কখনো শেষ হবে না? গণতন্ত্র মানেই কি শুধুমাত্র একটি সুষ্ঠ নির্বাচন ও ক্ষমতা গ্রহণ?
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকেই দেশের রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্র কায়েমের কথা বলে বাকশালের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। আসলে কি ছিল এই বাকশাল? কেন বঙ্গবন্ধু সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে একদলীয় শাসন বেবস্থা কায়েম করতে চেয়েছিলেন? কাদের স্বার্থে তিনি এই পদে পা বাড়িয়েছিলেন? ঠিক এই সময় কেন তিনি এই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন? একথা কি আজ কেউ কখনো বলেছে? এমনকি বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় নেতারা কি কখনো বলেছেন? বঙ্গবন্ধু কেন সেদিন বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একথা জনগনকে না বুঝিয়ে বরং আজ কালকার আওয়ামী লীগ নেতারা একে এড়িয়ে চলছেন। বাকশাল কি সাধারণ জনগনের স্বার্থের বিরুদ্ধে ছিল?
বাকশালের বি তে বাংলাদেশ, কে তে কৃষক, শ তে শ্রমিক আর সবশেষে এল তে লীগ এই নিয়ে মিলিত নাম ছিল বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু বাকশাল প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের প্রতিনিধিত্ব সৃষ্টি ও শোষিতের গণতন্ত্র কায়েম করতে চেয়েছিলেন। সমালোচকেরা বলেন বাকশাল করে নাকি বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগকে কবর দিয়েছেন। কিন্তু এখানে আওয়ামী লীগের শেষ কোথায় দেখলেন তারা। বরং আওয়ামী লীগকে কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের দল হিসেবে বঙ্গবন্ধু এখানে সামনে আনার চেষ্টা করেছিলেন। বাকশাল সৃষ্টির মধ্য দিয়ে তিনি বাংলাদেশের ৮০ পার্সেন্ট মেহনতি মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার এই উদ্যোগ পুজিবাদীদের স্বার্থে আঘাত লাগাতে তারা শুরুতেই এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। আর এই চক্রান্ত শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর নিজ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ভেতর থেকেই।
আজকের গণতন্ত্রে যে রাজনৈতিক দল যখন বিরোধী দলে থাকে তখন সরকারকে তারা বলে স্বৈরাচার ও অগণতান্ত্রিক সরকার। আবার তারা যখন ক্ষমতায় যায় তখন সব কথা ভুলে যায়। অন্যদিকে যারা এতদিন ক্ষমতায় ছিল তারা বিরোধী দলে গিয়ে শুরু করে সেই একই সুরে গান। এই সময় সরকার থেকে নেমে আসে তাদের উপর জুলুম অত্যাচার। স্বাধীনতার পরবর্তিতে বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধেও গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন হয়েছে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল বঙ্গবন্ধু সরকারকে বলেছে অগণতান্ত্রিক সরকার। নানা অভিযোগ সামনে এনে দেশে হরতাল ডেকেছে, আন্দোলন করেছে, বাস ও গাড়ি জালিয়েছে। আ,স,ম, আব্দুর রব, শাজাহান সিরাজ, মেজর জলিল, মহিউদ্দিন খান বাদল, হাসানুল হক ইনু, শরিফ নুরুল আম্বিয়া সহ অন্যান্য জাসদ নেতারা ১৭ মার্চ ১৯৭৪ পল্টন ময়দানে জনসভা করে বঙ্গবন্ধু সরকারকে হটানোর লক্ষে তত্কালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বাসবভন পর্যন্ত আক্রমন করেছিলেন। পুলিশের বাধার সন্মুক্ষীন হয়ে এইসময় যারা গ্রেফতার হয়েছিলেন তাদের অনেকেই এখন করেন আওয়ামী লীগ। যারা এই আন্দোলনের সম্মুখ ভাগে ছিলেন তাদের মধ্যে একজন গিয়ে ঢুকলেন জিয়া প্রতিষ্ঠিত বিএনপিতে, একজন গেলেন এরশাদের জোট সরকারে ও তৃতীয়জন ইসলামী আন্দোলনে। এছাড়া অন্যদের মধ্যে আবার কেউ কেউ এখন জোট বেধেছেন আওয়ামী লীগের সাথে। এভাবেই শেষ হয়েছে তাদের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম।
এখন প্রশ্ন হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ এপর্যন্ত যে গণতন্ত্রের স্বাদ পেয়েছে একে কি আমরা প্রকৃত গণতন্ত্র বলে সন্মোধন করতে পারি? এধরনের গণতন্ত্রে কি সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিত্ব প্রকাশ পায়? বাংলাদেশে এপর্যন্ত যতগুলো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেখানে কি মেহনতি মানুষের প্রতিনিধিত্ব সংসদে আসার সুযোগ পেয়েছে? নিশ্চই না। কারণ এসকল নির্বাচনে আমরা শুধু দেখেছি টাকার খেলা। বিশাল সম্পদ ও ক্ষমতার শক্তি যাদের রয়েছে তারাই নির্বাচনে অংশগ্রহনের সুযোগ পেয়েছেন। তারাই স্থান করে নিয়েছেন জাতীয় সংসদে। দেশের দুইটি বৃহত রাজনৈতিক দলে এইসময় যোগদানের হিরিক পরে যায়। ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে যারা বড় বড় রাজনৈতিক দলে যোগদান করেন তারা কিন্তু কেউ দেশের সাধারণ মানুষ নয়। তারা হলেন সমাজের ধনিক শ্রেণী, পেটি বর্জুয়া সাম্রাজ্যবাদের দালাল অথবা এলাকার প্রভাবশালী মাস্তান। এভাবেই চলে আসছে বাংলাদেশে দল পরিবর্তনের খেলা আর সরকার পরিবর্তনের রাজনীতি।
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে যারা সংসদ সদস্য হয়ে আসেন তাদের অবশ্যই অর্থনৈতিক দিক থেকে হতে হবে স্বাবলম্বী। শুধু তাই নয় এখন আবার শিক্ষিত হওয়ার আইন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যার ফলে কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের সংসদে আসার পথ আইন পাশ করে বন্ধ করে দেওয়া হলো। অন্যদিকে নমিনেশন পেতে যে পরিমান অর্থ দলকে দিতে হয় এবং পরবর্তিতে নির্বাচনে যে অর্থ খরচ করা হয় সেই অর্থের যোগান দেওয়া কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয়। তাহলে সংসদে কি করে আসবে সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিত্ব? ফলে রাজনীতিটা এখন হয়ে দাড়িয়েছে অনেকটা বানিজ্যের মত। সমাজের ধনশালী ও ক্ষমতাবান বেক্তিরা কোটি কোটি টাকা খরচ করে এমপি হওয়ার জন্য। পরবর্তিতে পাচ বছরের সময়কালে সেই অর্থ সুদে আসলে তারা আদায় করে নেয়। এছাড়া ক্ষমতার অপবেবহার ও স্বজনপ্রীতি তো আছেই। একে আমরা পরিষ্কার ভাষায় বর্জুয়া গণতন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করতে পারি। প্রতিবার নির্বাচনের পর এই গণতন্ত্রই সংসদ সদস্যদের করবিহীন গাড়ি ক্রয় করার সুযোগ করে দেয়। সংসদ সদস্যদের অর্থ আয়ের পথ খুলে দেয় খোদ সংসদ। এই সিস্টেমে শুধু সমাজের অর্থশালী ও ক্ষমতাবান বেক্তিদের প্রতিনিধিত্ব সৃষ্টি হয়। কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের প্রতিনিধিত্ব আসার প্রশ্নই উঠে না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো মূলত এখন পুজিবাদীদের প্রতিনিধিত্ব করছে। যার কারণে এখন অর্থশালিরা রাজনীতির ভবিষ্যত কর্ণধার হয়ে দাড়িয়েছে।
উপরোক্ত সিস্টেমকে পরিবর্তন করার লক্ষেই বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বাকশাল। বাকশাল সিস্টেম করতে গিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার একক নায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন এই সিস্টেম আমি দীর্ঘদিন রাখব না। সংসদে সাধারণ মেহনতি মানুষের প্রতিনিধিত্ব আসলেই আবার সর্ব দলীয় গণতন্ত্রে ফিরে যাব। সবচেয়ে দু:ক্ষের বিষয় হলো এই একথাটা আজ আর কাউকে বলতে শুনা যায় না। এমন কি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নেতারাও বলেন না যে বাকশাল ছিল একটা অস্থায়ী সিস্টেম। বঙ্গবন্ধুর একদলীয় সিস্টেমটা আসলে কি ছিল? কিভাবে তিনি চেয়েছিলেন শোষিতের গণতন্ত্র কায়েম করতে? কিভাবে তিনি সংসদে মেহনতি মানুষের প্রতিনিধিত্ব আনতে চেয়েছিলেন? এই বিষয়গুলো খুলাখুলি জনগনকে না জানিয়ে বাকশালের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করাটা কি যুক্তিসংগত? অবশ্যই বাকশাল ছিল একদলীয় শাসন। অবশ্যই বাকশাল বুর্জুয়া গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে। অবশ্যই বাকশাল ছিল সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার। অবশ্যই বাকশাল শোষিতের গণতন্ত্র কায়েমের আদর্শ। শোষিতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনই ছিল বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য। আর এই জন্যই তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বাকশাল।
বাকশাল সিস্টেম চালু করার পূর্বে ১৯শে জুন ১৯৭৫ এ বঙ্গভবনে এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমরা এই সিস্টেম কেন ইন্ট্রডিউস করলাম? আমাদের সমাজে বর্তমানে বিশ পারসেন্ট লোক শিক্ষিত। কিন্তু দেশের বাকি আশি পারসেন্ট জনসাধারনকে একতাবদ্ধ করতে না পারলে সমাজে পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে না। দেশের সকল মানুষের একসাথে উন্নতি করা যাবে না। সমাজের বুদ্ধিজীবী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সরকারী কর্মচারী, রাজনীতিবিদ, আইনজীবী সহ অন্যান্যরা তো শতকরা বিশজনের বেশী নন, এদের সকলকে একদাবদ্ধ করে সাধারণ মানুষকে সাথে নিয়ে যদি দেশের মঙ্গলের জন্য এগিয়ে যেতে না পারি তাহলে দেশের উন্নতি করা কষ্টকর হবে। সে জন্যই আমি এই নতুন সিস্টেমের কথা বহুদিন পর্যন্ত চিন্তা করেছি। এই ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর বাকশাল সৃষ্টির মূল লক্ষ্য ও উদ্দেস্য। এইলক্ষে প্রতিটি জেলার শাসনভার সম্পূর্ণরূপে স্থানীয় সরকারের হাতে নিয়ে আসা হয় এবং জেলা গভর্নরকে জেলার মূল শাসক নিযুক্ত করা হয়। এছাড়া সমবায় পদ্ধতির আওতায় কৃষি জমি চাষাবাদ ও সকল নির্বাচনী ব্যয় সরকারের উপর নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। শুধু তাই নয় দেশের বর্জুয়া নির্বাচন সিস্টেমকে পরিবর্তন করা হয়েছিল। নির্বাচনে সকল প্রার্থী এক মঞ্চে দাড়িয়ে তাদের বক্তব্য রাখার বেবস্থা গ্রহণ করা হয়। এজন্য প্রার্থীকে কোনো খরচ বহন করতে হবে না। সরকারী খরচে মঞ্চ সহ সকল নির্বাচনী প্রচার অভিযান সৃষ্টি করা হয়। এছাড়া ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা এবং ৯ম থেকে কারিগরী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। এখানে খারাপটা কি ছিল আমাকে বলতে পারবেন কি?
বাকশাল সৃষ্টির পর ঢাকা মহানগরে শিশু কিশোরদের বাকশালের আদর্শে একত্রিত করার জন্য শেখ কামাল ভাই জাতীয় ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক সৈয়দ নুরু ভাইয়ের মাধ্যমে আমাকে দাদা ভাইয়ের কচিকাচার মেলা সংগঠিত করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সেই লক্ষকে সামনে রেখে ঢাকার মোহাম্মদপুরে কচিকাচার মেলার এক সভা আয়োজন করা হয়েছিল। দাদা ভাই, জাতীয় ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শেখ সহিদুল ইসলাম ভাই ও আমি অতিথি হিসেবে সেদিন এই সভায় উপস্থিত ছিলাম। সভার আয়োজন করেছিল মোহাম্মদপুরের কার্জন। এই কার্জন এখন বঙ্গবন্ধু জাদুঘর দেখার দায়িত্ব পালন করছে। এই সভায় শহীদ ভাই তার ভাষণে যে কথা বলেছিলেন তা আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে। তিনি বলেন এক দলীয় শাসন বেবস্থা ভালো যদি তা মেহনতি মানুষের পক্ষে যায়। আর তা না হলে এক দলীয় শাসন বেবস্থা ফেসিস্ট রূপ ধারণ করতে পারে। বঙ্গবন্ধুর এক দলীয় শাসন বেবস্থার সৃষ্টি আমরা দেখেছি কিনতু তার প্রয়োগ দেখার কোনো সুযোগ আমাদের হয়নি। তার আগেই ঘাতকের হাতে এই মহান নেতাকে প্রাণ দিতে হয়েছে। সুতরাং বাকশালের ভালো মন্দ যাচাই করার সুযোগ এখানে থাকলো কোথায়? বাকশাল সিস্টেম চালু করার আগেই তো সবকিছু শেষ করে দেওয়া হলো। তাহলে কেন আসছে বাকশালের বিরুদ্ধে এই অপপ্রচার?
অনেকে বলেন বঙ্গবন্ধু বাকশাল প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা না করলে তাকে এভাবে প্রাণ দিতে হতো না। কথাটা অনেকাংশে ঠিক বলা যেতে পারে। কারণ তিনি দেশের ৮০ পার্সেন্ট দরিদ্র শ্রেণীকে রক্ষা করার লক্ষে রাজনৈতিক পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এই উদ্যোগ দেশের বাকি ২০ পার্সেন্ট মানুষের বিপক্ষে ছিল। দেশের এই ২০ পার্সেন্ট তথাকথিত শিক্ষিত বর্জুয়া সমাজ ও পেটি বর্জুয়া শ্রেনীদের স্বার্থে তিনি সরাসরি আঘাত করেছিলেন। যার ফলে এরাই মূলত ষড়যন্ত্র করে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে ১৫ আগস্ট পচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয় তখন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ৭৪ মত ছিল না। দেশের সার্বিক অবস্থা এইসময় অতীতের চেয়ে অনেক উন্নত ছিল।
আজকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে মুখে গণতন্ত্র কায়েমের কথা যারা বলেন তাদের কাছে যদি প্রশ্ন করা হয় আপনার দলের ভেতরে কি কোনো গণতন্ত্র আছে? আপনার দলের নেতৃত্ব কি গণতান্ত্রিক সিস্টেমে নির্বাচিত করা হয়? কি উত্তর দিবেন তারা। দলেই যদি গণতন্ত্র না থাকে তাহলে সরকার পরিচালনায় গণতান্ত্রিক মনোভাব প্রকাশ আসবে কথা থেকে?
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর থেকে সংসদে কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের প্রতিনিধিত্ব আসার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়নি। ভবিষ্যতেও আসবে কি না তাতে সন্দেহ রয়েছে। কারণ বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন চলছে শুধু টাকার খেলা। প্রত্যেকে এখন নিজের তরে, কেউ নয় আর কারো তরে। যারা বলেন বাকশাল ব্যর্থ হয়েছে তাদের কাছে যদি প্রশ্ন রাখি বাকশাল বের্থ হলো কোথায়? শুরুর আগেই তো তাকে শেষ করে দেওয়া হলো। তাহলে বের্থতার প্রশ্ন এখানে আসবে কেন? বাংলাদেশের কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষ আজও বুঝতে পারেনি বাকশাল ছিল তাদের মুক্তির সনদ। বঙ্গবন্ধু বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বাংলাদেশের ৮০ পার্সেন্ট মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য।বাংলাদেশকে একটি সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য। সমাজের ২০ পার্সেন্ট উচ্চশ্রেণীর মানুষ বঙ্গবন্ধুর এই সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলনকে সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি। তাই তারা একত্রিত হয়ে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাকশালকে শুরুতেই ধংশ করে। দেশের ২০ পার্সেন্ট লোকের স্বার্থ রক্ষার্থে পুজিবাদী ধনিক শ্রেণিরা ষড়যন্ত্র করে দেশের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবকে নস্যাত করার উদ্দেশে পচাত্তরের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। এভাবেই শুরুতেই আটকে দেওয়া হয় বাকশালের চলার পথ। ফলে বাংলাদেশের জনগণ বাকশাল এর বের্থতা বা সফলতা কোনটাই দেখার সুযোগ পায়নি।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।