- হোম
- >
- আইন-মানবাধিকার
- >
- ব্লগার হত্যা: তদন্ত এখনও শেষ হয়নি
ব্লগার হত্যা: তদন্ত এখনও শেষ হয়নি
গত তিন বছরে একই কায়দায় কুপিয়ে পাঁচজন ব্লগার খুন হয়েছেন। এসব খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজন ‘কয়েকজনের নাম’ ছাড়া তদন্তে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। দায়ের করা পাঁচ মামলার মধ্যে তিনটির তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। হত্যাকাণ্ডে জড়িত কোনো আসামিও গ্রেপ্তার হয়নি এখনও। অবশ্য অন্য একটি মামলার রায় এসেছে। তদন্ত শেষে আদালতে একটি মামলার চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ।
সম্প্রতি ব্লগার হত্যা সম্পর্কিত সব মামলার তদন্তের অগ্রগতির ব্যাপারে জানতে চেয়েছে ইউনেস্কো। এ জন্য ফ্রান্সে বাংলাদেশ দূতাবাসে চিঠি পাঠিয়েছে তারা। গত ২৯ জানুয়ারি ফ্রান্স দূতাবাস থেকে পাঠানো চিঠিটি তথ্য মন্ত্রণালয় হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সে অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইউনেস্কোকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করেছে।
২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পল্লবীতে খুন হন ব্লগার রাজীব হায়দার। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষে রায় হয়েছে। ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির অদূরে বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার ড. অভিজিৎ রায়, ১২ মে সিলেটের সুবিদবাজার এলাকায় ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ এবং ৭ আগস্ট রাজধানীর গোড়ানে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ব্লগার নীলাদ্রি চ্যাটার্জি ওরফে নিলয়কে। এসব ঘটনার তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। একই বছরের ৩০ মার্চ তেজগাঁও এলাকায় ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যার ঘটনায় আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী মার্চে ইউনেস্কো আয়োজিত 'এনডিং ইমপিউনিটি টুগেদার' বা 'একত্রে সব দণ্ডাদেশ মওকুফের সমাপ্তি' শীর্ষক অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিত্ব করবে। সেখানে ব্লগার হত্যার বিষয়ে তথ্য জানতে চাইবে সংস্থাটি।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, 'চিঠি পাওয়ার পর ব্লগার হত্যাকাণ্ড, এ-সংক্রান্ত তদন্তের অগ্রগতি এবং সার্বিক পরিস্থিতি জানিয়ে তথ্য পাঠানো হয়েছে। দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে।' তিনি বলেন, 'যেসব ব্লগারকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল তাদের কেউ নিরাপত্তা চাইলে বিশেষভাবে বিবেচনা করা হবে।'
গত শনিবার রাজধানীতে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হকও বলেছেন, 'যত ব্লগার ও মুক্তমনা লেখক হত্যার শিকার হয়েছেন- সব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে এ হত্যার ঘটনায় যাদের সন্দেহ করা হয়েছে তাদের নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। পুলিশ তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নেওয়ার চেষ্টা করছে।' ব্লগার হত্যা মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, 'ধর্মকে কটাক্ষ' করে বিভিন্ন লেখালেখির কারণে উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীর হাতে মুক্তমনা এসব লেখক খুন হয়েছেন। বেশির ভাগ খুনেই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সদস্যরা জড়িত।
তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছরের ডিসেম্বরে রাজীব হায়দার হত্যা মামলাটি নিম্ন আদালতে বিচার শেষে রায় হয়েছে। এতে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দুই জঙ্গিকে ফাঁসি, একজনের যাবজ্জীবন ও অন্য পাঁচ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া গত বছরের আগস্টে ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যা মামলাটি তদন্ত শেষে আদালতে পাঁচ জঙ্গির বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।
মামলাটির তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, 'চার্জশিটভুক্ত পাঁচ আসামিই নিষিদ্ধ আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। তাদের মধ্যে জিকুরুল্লাহ, আরিফুল এবং জুনায়েদ ওরফে তাহের সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়।'
অভিজিৎ হত্যা মামলাটি ঢাকার গোয়েন্দাদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই তদন্ত করছে। চাঞ্চল্যকর ওই হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় এক বছর পার হতে চললেও হত্যার ঘটনায় সরাসরি জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। একই অবস্থা রাজধানীর গোড়ানে ব্লগার নীলাদ্রি চ্যাটার্জি ওরফে নিলয় হত্যা মামলারও।
ওই মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অভিজিৎ হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত সন্দেহভাজন আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তাদের কেউই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেনি। অপরদিকে নিলয় হত্যা মামলায় তদন্তসংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন এক ডিবি কর্মকর্তা বলেন, ওই ঘটনায় এবিটির সাদ আল নাহিন, মাসুদ রানা, কাউসার হোসেন ও কামাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়ার কথা অস্বীকার করলেও তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে।
ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যা মামলাটি ঢাকার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সংগঠিত অপরাধ টিম তদন্ত করছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট সিআইডির একজন কর্মকর্তা বলেন, অনন্ত বিজয় হত্যায় জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। তাদের মধ্যে রাহী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।