নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে অতিথি পাখি
দিনে দিনে অতিথি পাখির আবাসস্থল কমে গেলেও নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার বাহিরপাড়া গ্রামের সিরাজ মোল্যার বাড়ির বাগানে কয়েক প্রজাতির হাজার হাজার অতিথি পাখি বসবাস করছে। দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর ধরে এই জায়গাটি অতিথি পাখিসহ দেশীয় পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে।
সাম্প্রতিককালে শিকারীদের কারণে অতিথি পাখি আসা যেমন কমে গেছে তেমনি রাত বিরাতে শিকারীদের গুলির শব্দে এলাকাবাসীও আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন।
এলাকাবাসী জানান, শিকারীদের অত্যাচারে দীর্ঘদির ধরে অতিথি পাখিসহ দেশীয় পাখিদের জন্য গড়ে ওঠা এই নিরাপদ আবাসস্থলটি অচিরেই নষ্ট হয়ে যাবে। পাখি বান্ধব বাহিরপাড়া গ্রামের লোকেরা শিকার রোধে প্রশাসনের সহায়তা চান।
নড়াইল শহর থেকে আঠার কিলোমিটার দূরে কাশিপুর ইউনিয়নের এড়েন্দা বাজার থেকে উত্তরদিকে অবস্থিত সবুজ-শ্যামল ছায়াঘেরা বাহিরপাড়া গ্রাম। গ্রামের গন্ডব খালের মোহনা সংলগ্ন সিরাজ মোল্যার বাড়ির আঙ্গিনায় থাকা ৬৫টি গাছে প্রায় চৌদ্দবছর যাবত দেশী ও অতিথিসহ কয়েক হাজার পাখি বসবাস করে আসছে।
নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিরা আসতে শুরু করে এখানে। এদের মধ্যে রয়েছে বক, বালিহাঁস, পানকৌড়ী , শামুকভাঙ্গাসহ ১০ থেকে ১২ প্রজাতির পাখি।
বাহিরপাড়ার গ্রামবাসী জানান, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে পাখি আসে এবং টানা জুন মাস পর্যন্ত প্রায় সাত মাস পাখিগুলি খালের দুইপাড়ে কয়েকটি বাড়ির গাছে বসবাস করে। কিন্তু সাম্প্রতি সময়ে নড়াইল ও লোহাগড়া এলাকা থেকে প্রায় প্রতি রাতেই বন্ধুক, এয়ারগান, শর্টগান সাথে নিয়ে কিছু লোক এলাকায় অবৈধভাবে পাখি শিকার করতে আসছে।
সিরাজ মোল্লা জানান, ‘অতিথি পাখিসহ দেশীয় প্রজাতির পাখিগুলো সারাদিন গন্ডবখাল এলাকাসহ বিভিন্ন মাঠে চরে বেড়ানোর পরে বিকাল থেকে আমাদের বাড়িতে আসতে শুরু করে। আমাদের কয়েকটি বাড়ি ছাড়াও তারা খালের ওপারে কয়েকটি বাড়িতে রাতে আশ্রয় নেয়। আমাদের দিনরাত কাটে পাখিদের আনন্দের সাথে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি গ্রামের যে বাড়িতে পাখি বসবাস করে সেখানে অনেক শান্তি আসে, পাখিরা শান্তি পায় যেখানে সেখানেই তো তার আশ্রয় নেবে। এই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে গ্রামবাসী তাদের আগমনে খুবই খুশী হয়। কিন্তু আমাদের ভয় হয় চোরা শিকারীদের অত্যাচারে পাখিগুলো যদি আমাদের উপর রুষ্ট হয়ে চলে যায় তাহলে আমাদের বাড়ির অমঙ্গল হবে। এলাকার অমঙ্গল হবে। আমরা প্রকৃতির বন্ধু পাখিদের নির্ভয়ে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি’।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নড়াইল ও লোহাগড়া এলাকা থেকে প্রায় প্রতি রাতেই বন্দুক, এয়ারগান নিয়ে কিছু লোক এখানে অবৈধভাবে পাখি শিকার করতে আসে। শিকারীদের বাধা দিলে তারা অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করতে আসে।
সিরাজ মোল্যার স্ত্রী জায়েদা বেগম জানান, ‘প্রায় ১৫ বছর আমাদের বাড়িসহ আশপাশের বাগানে কয়েক হাজার পাখি বসবাস করে আসছে। তাদের কলকাকলি আর কিচিরমিচির শব্দে এলাকার মানুষের প্রাণ ভরে যায়।
দূরদূরান্ত থেকে মানুষ বিকালে প্রকৃতির অপূর্ব এ দৃশ্য দেখতে আমাদের বাড়ি ছুটে আসে। প্রশাসন যদি সহায়তা করে তাহলে পাখি শিকারীরা এখানে পাখি শিকার করতে পারবে না।
সিরাজ মোল্লার (প্রবাসী) ছেলে নুর আলম বলেন, ১৫ বছর যাবত আমাদের বাড়ির আঙ্গিণায় অবস্থিত প্রায় ৫০টি গাছে দেশী ও অতিথি পাখি মিলে কয়েক হাজার পাখি বসবাস করে। কিন্তু অবৈধ পাখি শিকারীদের কারণে কোনভাবেই পাখিদের নিরাপত্তা দেওয়া যাচ্ছে না। শিকারীরা নানাভাবে রাজনৈতিক পরিচয় দেয় প্রভাবশালী লোকদের কথা বলে এখানে পাখি শিকার করছে। বন্যপ্রানী আইনে পাখি শিকার দণ্ডনীয় অপরাধ জেনেও তারা আইন মানছেন না।
তিনি পাখিদের অভায়ারণ্য সৃষ্টি ও সংরক্ষণের লক্ষ্যে পাখিদের বসবাসের এই জায়গাটিতে বাউন্ডারি ওয়াল করে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চাইলেন।
প্রতিবেশি ইমরান হোসেন বলেন, আমাদের এলাকায় হাজার হাজার পাখির বসবাস। ইচ্ছা করলেই কেউ এরকম পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারবে না।
নড়াইলের পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানান, পাখিরা প্রকৃতির ভারসম্য রক্ষা করে আসছে, তারা মানুষের ক্ষতি করে না। ফলে এখানে বসবাসকারী পাখিদের রক্ষা করা সকলের কর্তব্য। পাখি শিকারীদের ব্যাপারে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। পাখি শিকারীদের ব্যাপারে সঠিক তথ্য দিলে আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আমরা চাই অতিথি পাখিসহ সকল পাখিরাই এখানে নিরাপদে বসবাস করুক।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।