খনি পাথরের গুঁড়া নিয়ে বিপাকে কর্তৃপক্ষ
দিনাজপুরের পার্বতীপুরে মধ্যপাড়া কঠিনশিলা খনিতে মজুদ রাখা দেড়লাখ টন পাথরের ডাস্ট (পাথরের গুঁড়া) নিয়ে বিপাকে পড়েছে খনি কর্তৃপক্ষ।
দেশীয় শিল্প কারখানা ও নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাথর ব্যবহারের বাধ্যকতা থাকলেও ডাস্ট ব্যবহারের বাধ্যকতা না থাকায় সংকটে পড়েছে খনিটি। অপার সম্ভাবনা থাকার পরও প্রয়োজনীয় ডাস্ট বিক্রি করতে না পারায় খনি চত্ত্বরে গড়ে উঠেছে ডাস্টের পাহাড় সমান মজুদ।
ফেব্রুয়ারির মধ্যে ডাস্টের চাহিদা মতো ক্রেতা না মিললে সংকটে পড়বে খনিটি। এরই মধ্যে আবারও পাথর উত্তোলন শুরু হলে ডাস্ট রাখার জায়গাও থাকবে না খনি চত্ত্বরে।
মধ্যপাড়া কঠিনশিলা খনির ভূ-গর্ভ থেকে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ হাজার টন কঠিনশিলা উত্তোলন করা হয়। উত্তোলিত শিলাগুলো ভেঙে বিভিন্ন সাইজে বাজারজাত করা হয়। ওইসব পাথর ক্রাশ ও ওয়াশ করলে শতকরা ১০ ভাগ ডাস্ট পাওয়া যায়। মাত্র ১০ ভাগ ডাস্ট পাওয়া গেলেও প্রতিদিন তার পরিমাণ দাঁড়ায় ২৫০ থেকে ৩০০ টন।
বর্তমানে খনি ইয়ার্ডে ডাস্টের মজুদ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার টন। অথচ পাহাড় সমান মজুদ থেকে বর্তমানে গড় বিক্রির পরিমাণ মাত্র ২০ টন।
দেশের গৃহনির্মাণ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রকৌশলী মঈন উদ্দীন আহম্মেদের ২০০৪ সালে প্রদত্ত এক রিপোর্ট অনুযায়ী জানা যায়, মধ্যপাড়া কঠিনশিলা খনির পাথরের ডাস্ট যে কোনো নির্মাণ শিল্পে ব্যবহার করতে কোনো বাঁধা নেই। বরং ডাস্ট ব্যবহার বাড়াতে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ওই রিপোর্টে।
ডাস্ট সহজেই সিমেন্ট-বালুর সঙ্গে মিশ্রণ করা যায়। পানি শোষণ ক্ষমতা সন্তোষজনক বিধায় নির্মাণ কাজ হয় শক্তিশালী। এ ডাস্ট ব্যবহার করে ঘরের মেঝে ঢালাই, দেয়াল পোস্টার, পানির ট্যাঙ্ক তৈরি, সেচ নালা তৈরি, বোল্ডার তৈরি ও বাঁধ নির্মাণে ব্যবহার করলে সিমেন্টের পরিমাণ কম লাগবে।
মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনির ডিজিএম (মার্কেটিং) সামসুল মোস্তফা বলেন, পাথরের ডাস্ট সিমেন্ট ও টাইলস তৈরির অন্যতম কাঁচামাল। ডাস্ট থেকে বর্তমানে ইট, সিমেন্ট, ডেকোরেশন টাইলস তৈরি হচ্ছে। দেশীয় সিমেন্ট ও টাইলস তৈরির কারখানাগুলো ডাস্ট ব্যবহারে পুরোপুরি এগিয়ে না আসায় ডাস্টের পাহাড় জমেছে খনিতে। অথচ বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ডাস্ট বিক্রি হচ্ছে ২০ টন।
তিনি বলেন, সিমেন্ট ফ্যাক্টরি ছাড়াও নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমতো ডাস্ট ক্রয় করলে ডাস্টের ধুলাও পড়ে থাকত না। বর্তমানে প্রতিটন ডাস্ট বিক্রি করা হচ্ছে মাত্র ৪৬০ টাকা হিসাবে। কিছু সিমেন্ট ফ্যাক্টরি ডাস্ট ক্রয় করলেও তারা ফ্লাই অ্যাশ ব্যবহারের দিকে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
বর্তমানে এলজিইডি রাস্তার কার্পেটিং কাজে মোটা বালুর পরিবর্তে ডাস্ট ব্যবহার করে সফলতা পাচ্ছে। ডাস্ট পরিবহণের জন্য সড়ক অথবা রেলপথও ব্যবহার করতে পারেন ডাস্ট ও পাথর ক্রয়কারীরা।
এব্যাপারে মধ্যপাড়া কঠিনশিলা খনির জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) মীর মোঃ আবদুল হান্নান বলেন, খনির ভূ-গর্ভে ব্যবহারের জন্য বিদেশি ইকুইপমেন্ট না আসা পর্যন্ত পাথর উত্তোলন আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। চলতি মাসের শেষ দিকে আবারও পাথর উত্তোলন শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এরই মধ্যে খনিতে মজুদ পাথর বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে ডাস্ট বিক্রি বাড়াতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে খনি কর্তৃপক্ষ।
ডাস্ট বিক্রি বাড়াতে রাস্তার কার্পেটিং কাজে ডাস্ট ব্যবহারে বাধ্যবাধকতা রাখা জরুরি হয়ে পড়েছে। ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে খনির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে এবং মজুদ পাথরও বিক্রি শেষ হয়েছে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।