- হোম
- >
- ইতিহাস-ঐতিহ্য
- >
- ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে রাজা প্রতাপাদিত্যের রাজপ্রসাদ
ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে রাজা প্রতাপাদিত্যের রাজপ্রসাদ
দক্ষিণবঙ্গের প্রতাপশালী শাসক রাজা প্রতাপাদিত্যের রাজধানী ছিল সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগরের ধুমঘাট এলাকায়। তাঁর রাজত্বের প্রায় ২৫০ বছর পরে জমিদার রায় বাহাদুর হরিচরণ চৌধুরী শ্যামনগরের নকিপুরে একছত্র অধিপতি ছিলেন। জীবদ্দশায় অনেক জনহিতকর কাজ করেছেন তিনি। শ্যামনগরে সদ্য জাতীয়করণকৃত নকিপুর এইচ.সি (হরিচরণ চৌধুরী) পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি তিনিই প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় তাঁর অনিন্দ্য সুন্দর বসতবাড়িটি যা দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থাপত্য হিসেবে পর্যটকদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারতো তা আজ সংস্কার ও দূরদর্শীতার অভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। নান্দনিকতা ও ঐতিহ্যের নিদারুণ অপচয় বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা।
অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও লেখক চারু চন্দ্র মন্ডলের লেখা একটি বই থেকে জানা যায়, জমিদার রায় বাহাদুর হরিচরণ চৌধুরীর বাড়ীটি ছিল সাড়ে তিন বিঘা জমির উপর। যার বাউন্ডারীটি ছিল প্রায় দেড় হাত চওড়া প্রাচীর দ্বারা সীমাবদ্ধ। সদর পথে ছিল একটি বড় গেট বা সিংহদ্বার। সম্মুখে ছিল একটি শান বাঁধানো বড় পুকুর। শতাধিককাল পূর্বে খননকৃত এই পুকুরটিতে সারাবছরই জল থাকে এবং গ্রীষ্মের দিনে প্রচন্ড তাপদাহে তা শুকায় না। পুকুরঘাটের বাম পাশে ছত্রিশ ইঞ্চি সিঁড়ি বিশিষ্ট দ্বিতল নহবত খানা। আটটি স্তম্ভ বিশিষ্ট এই নহবত খানার ধ্বংসাবশেষটি এখনও প্রায় অক্ষত অবস্থায় দন্ডায়মান থেকে কালের স্বাক্ষী বহন করছে। বাগান বাড়িসহ মোট বার বিঘা জমির উপর জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত ছিল। বাড়িটি ছিল সত্তর গজ লম্বা, তিন তলা বিশিষ্ট ভবন। সদর দরজা দিয়ে ঢুকতেই সম্মুখে সিঁড়ির ঘর। নিচের তলায় অফিসাদি ও নানা দেবদেবীর পূজার ঘর, এছাড়া আরও দুইটি গমনাগমন সিঁড়ি পথ। মাঝের তলায় কুল দেবতা গোপাল দেবের মন্দির ও অতিথি শালা। সিঁড়ির দু’পাশে কক্ষ ছিল এবং সিঁড়ি ছিল মধ্যবর্তী স্থানে। সদর অন্দরের দুই পাশেই বারান্দা ছিল। বারান্দাগুলি বেশ প্রশস্ত আট ফুট চওড়া। বিল্ডিং এর নীচে আন্ডারগ্রাউন্ড ছিল। সেগুলি ভাড়ার ঘর হিসাবে ব্যবহার করা হতো। নিচের তলায় ১৭টি এবং উপরের তলায় ৫টি কক্ষ ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। ছোট, বড়, মাঝারি সব রকমের কক্ষ ছিল। বিল্ডিংটির দৈর্ঘ্য ২১০ ফুট, প্রস্থ ৩৭ ফুট, পুন: ৬৪ ফুটের মাথায় এল প্যাটানের বাড়ি। প্রথমবার ঢুকলে কোন দিকে বহির্গমন পথ তা বোঝা বেশ কষ্টদায়ক ছিল। চন্দন কাঠের খাট-পালঙ্ক, শাল, সেগুন, লৌহ কাষ্ঠের দরজা-জানালা ও বর্গাদি, লোহার কড়ি, ১০ ইঞ্চি পুরু চুন-সুরকির ছাঁদ, ভিতরে কক্ষে কক্ষে গদি তোষক, কার্পেট বিছানো মেঝে, এক কথায় জমিদার পরিবেশ, যেখানে যেমনটি হওয়া দরকার তার কোন ঘাটতি ছিল না। বাড়িতে ঢুকতে ৪টি গেট ছিল। গেট ৪টি ছিল ২০ ফুট অন্তর। জমিদার বাড়ির দক্ষিণে একটি বড় পুকুর ছিল। ১৯৫৪ সালের জমিদার পরিবার এখান থেকে স্ব-পরিবারে ভারতে চলে যায়।
বর্তমান সে পুকুরটি আর নেই। নেই পূর্বের মত সৌন্দর্য। তবে তার দক্ষিণে এখনও একটি পুকুর বিদ্যমান যার শান বাঁধানো ঘাটের ধ্বংসাবশেষটির দুই পাশে দুটি শিব মন্দির প্রতিষ্ঠিত রয়েছে।
শ্যামনগরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আহসান উল্লাহ শরিফী বলেন, ইতিমধ্যে জমিদার বাড়িটির অবৈধ দখলমুক্ত এবং জমি প্রাঙ্গণে অবৈধ দখলকারীদের স্ব-উদ্যোগে উচ্ছেদ করা হয়েছে। তবে আদালতে মামলা থাকায় একজনকে উচ্ছেদ করা যায়নি। তবে মামলাটির বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।
তিনি আরও বলেন, বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আবদুস সামাদ ইতিপূর্বে স্ব-স্ব উপজেলার ঐতিহাসিক এবং দর্শনীয় স্থান সংরক্ষণের ব্যাবস্থা গ্রহণে জন্য ভূমি কর্মকর্তাগণকে নির্দেশনা প্রদান করেন। তারই নির্দেশনা মতে নকিপুর জমিদার বাড়িটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে বাড়িটিকে পূর্বের নান্দনিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। জমিদার বাড়িটির চারপাশে বেষ্টনি দেওয়ার চেষ্টা করছি যেন কেউ এই নিদর্শনের কোন কিছুই নষ্ট করতে না পারে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।