যে কারণে দত্তক নেওয়া সন্তানকে খুন করেন স্প্যানিশ দম্পতি
২০০১ সালের জুন মাসের শেষের দিকে স্প্যানিশ দম্পতি রোসারিও পোর্টো ও অ্যালফনসো ব্যাসতেরা চীনে যান একটি শিশুকন্যাকে দত্তক নেওয়ার উদ্দেশ্যে। মধ্য ৩০ বছরের এ দম্পতির মধ্যে পোর্টো একজন আইনজীবী ও ব্যাসতেরা ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে গার্ডিয়ান।
সন্তান দত্তক নেওয়ার সময় পোর্টোর কিছুটা মানসিক সমস্যা ছিল। তিনি উদ্বেগে ভুগছিলেন। আর এজন্য ওষুধও খেতে হয়েছিল। তবে তার পরেও সন্তান দত্তক নিতে তার কোনো সমস্যা হয়নি। স্পেনের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তিনি তার পরিবার বাড়ানোর জন্য সন্তান দত্তক নেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। তারা জানিয়েছিল যে, তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ এবং একজন সন্তান দত্তক নেওয়া তার জন্য খুবই ভালো হবে।
পোর্টোর বাবাও একজন আইনজীবী ও তার মা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। সান্তিয়াগো নামে যে শহরে তিনি বাস করতেন, সে শহারে চীন থেকে সন্তান নেওয়া অস্বাভাবিক। কারণ এর আগে কেউ এ কাজটি করেনি। শহরটির জনসংখ্যা মাত্র ৯৩ হাজার। তবে শহরটিতে জন্মহার ক্রমে কমে যাওয়ায় বিদেশ থেকে সন্তান দত্তক আনায় আগ্রহী হয়ে ওঠে কর্তৃপক্ষ।
স্পেনে প্রচুর শিশু বিদেশ থেকে দত্তক আনা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পর এ দেশটি দ্বিতীয় দত্তক গ্রহীতা দেশ। তবে এক্ষেত্রে স্প্যানিশ শিশুদের দত্তক হিসেবে পাওয়া কঠিন। এজন্য তারা বিদেশি শিশুই বেশি আনে। সে বছর ২,৭৫০ জন চীনা শিশু দত্তক দেওয়া হয়, যাদের ৯৫ শতাংশই ছিল কন্যাশিশু। তবে দত্তক নেওয়া শিশুদের মাঝে খুন হওয়ার প্রবণতা অত্যন্ত বিরল। আর এ বিরল ঘটনাই জন্ম দিলেন এ দম্পতি।
আশুন্তা ফং ইয়াং নামে সে চীনা কন্যাশিশুটিকে দত্তক নেওয়ার পর এ দম্পতির প্রাথমিক অনুভূতি অত্যন্ত ভালো ছিল। এমনকি স্থানীয় টিভি চ্যানেলে তারা তাদের মধুর অভিজ্ঞতা বর্ণনাও করেছিলেন। এছাড়া তাদের মাঝে সম্পর্কও অত্যন্ত ভালো ছিল। চীনের দরিদ্র ঘরের সন্তানকে সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন তাদের বাড়িতে এনে, লালন-পালন শুরু করে তারা অত্যন্ত বাহবাও পেয়েছিলেন।
২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে আশুন্তা ফং ইয়াংয়ের বয়স দাঁড়ায় ১২ বছর। শিশুটি স্প্যানিশ, চীনা, ইংলিশ ও জার্মান ভাষা শিখছিল। এছাড়া তার ব্যালে, ভায়োলিন ও পিয়ানোতেও আগ্রহ ছিল। তবে জন্মদিনের ঠিক দুই সপ্তাহ পরেই সমস্যা সৃষ্টি হয়। এ সময় অনাকাঙ্খিতভাবে তার দত্তক গ্রহণকারী স্প্যানিশ দম্পতি রোসারিও পোর্টো ও অ্যালফনসো ব্যাসতেরার সংসার ভেঙে যায়।
বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর পোর্টোর পুরনো মানসিক সমস্যা অনেকাংশে বেড়ে যায়। পরবর্তীতে তাকে নানাভাবে চিকিৎসা করানো হলেও তা ঠিক হয়নি। তবে পালিত মেয়ে আশুন্তা তার সঙ্গেই থেকে যায়। অবশ্য স্প্যানিশ দম্পতি রোসারিও পোর্টো ও অ্যালফনসো ব্যাসতেরার সংসার ভেঙে গেলেও তারা প্রায়ই একত্রে মতবিনিময় করতেন।
২০১৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পালিত কন্যা আশুন্তা ফং ইয়াংয়ের লাশ পাওয়া যায় রাস্তার ধারে। লাশটি উদ্ধার করেন অ্যালফ্রেডো বালসা নামে এক ব্যক্তি। তিনি জানান, রাতে রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময় তিনি কিছু একটা দেখে সন্দেহ করেন। এরপর গাড়িটি পেছনে নিয়ে তিনি রাস্তার পাশের সন্দেহজনক স্থানে ভালোভাবে আলো ফেলেন। এতে দুই মিটার দূরে থাকা একটি মেয়ের লাশ দেখতে পান তিনি। আর তিনি অবাক হন যে, লাশটি একটি এশিয়ান চেহারার মেয়ের ছিল। তিনি দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে তার পালস পরীক্ষা করে দেখেন সে বেঁচে নেই।
কিন্তু কী কারণে দত্তক নেওয়া কন্যাটিকে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হলো? এ ঘটনার কোনো সূত্র প্রাথমিকভাবে পাওয়া যাচ্ছিল না। এতে পুলিশ মৃতের দত্তক বাবা-মাকে সন্দেহ করে। তবে এতে স্থানীয় জনসাধারণের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তার পরও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে পুলিশ রোসারিও পোর্টোকে গ্রেপ্তার করে। এ প্রসঙ্গে প্রতিবেশীরা ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তাদের দৃষ্টিতে এটি ছিল সম্পূর্ণ অযাচিত একটি গ্রেপ্তার।
পুলিশের হাতে প্রাথমিকভাবে কোনো তথ্যপ্রমাণ ছিল না। তবে একটি সিসিটিভি ভিডিওর ভিত্তিতে পুলিশ রোসারিও পোর্টোকে গ্রেপ্তার করে। তাতে দেখা যায় মেয়েটিকে একটি গাড়িতে করে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন রোসারিও পোর্টো। আর এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়ে পুলিশের কাছে তিনি মেয়েটিকে খুনের কথা স্বীকার করেন। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেন, মানসিক সমস্যা থেকেই এ খুনের ঘটনাটি ঘটেছে।
রোসারিও পোর্টো ও অ্যালফনসো ব্যাসতেরাতারা উভয়ে মিলেই মেয়েটিকে খুন করে বলে আদালতে প্রমাণিত হয়। বিচারে আদালত রোসারিও পোর্টো ও অ্যালফনসো ব্যাসতেরা উভয়কেই ১৮ বছরের কারাদণ্ড দেন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।