মুরাদনগরে সৌদি প্রবাসী ময়নল নিখোঁজ
মামলা করে সন্ত্রাসীদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে মা
মোশাররফ হোসেন মনির
প্রিন্টঅঅ-অ+
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার আকুবপুর ইউনয়নের জাড্ডা হাহাতি গ্রামের শ্বশুর বাড়ি থেকে গত বছরের ২ নভেম্বর রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হন সৌদি প্রবাসি ময়নাল হোসন (৩৫)।
নিখোঁজ হওয়ার তিন মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও এখনও ঐ প্রবাসির জীবিত না মৃত এর কোন হদিস মেলেনি। তবে ছেলে নিখোঁজ নন বরং পরকিয়া প্রেমের জের এবং ছেলের সকল সম্পত্তি আত্মসাত করতেই স্ত্রীসহ শশুর বাড়ির লোকেরা তাকে হত্যা করে লাশ গুম করেছে এমন দাবি মা আমেনা খাতুনের।
এ ঘটনায় কুমিল্লার আদালতে মামলাও দায়ের করেছেন তিনি। আর মামলা করেই ছেলের শ্বশুর বাড়ির সন্ত্রাসী ও এলাকার প্রভাবশালীদের দেওয়া হুমকিতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।
এদিকে, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল ঐ প্রবাসির কোন সন্ধান বা খুন-গুমের কোন রহস্য উম্মোচিত না হতেই ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে উঠে-পড়ে লেগেছেন। ঐ প্রভাবশালীরা এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার বৈঠক করে প্রবাসির মা আমেনাকে মামলা থেকে সড়ে দাঁড়ানোর হুমকি দিচ্ছেন। আদালতে দায়ের করা মামলাটি বর্তমানে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ তদন্ত করছেন। তবে রহস্যজনক কারণে পুলিশ নিরব থাকায় তদন্তে কোন আলোর মুখ নেই বলেও ঐ প্রবাসির মায়ের অভিযোগ।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার আকাবপুর গ্রামের মৃত আব্দুল কাদিরের ছেলে ময়নাল হোসেনের সঙ্গে প্রায় ১০ বছর পূর্বে সামাজিকভাবে বিবাহ হয় পার্শ্ববর্তী জাড্ডা (হাহাতি) গ্রামের ফুল মিয়ার মেয়ে তাছলিমা আক্তারের। বর্তমানে তাদের সংসারে ২টি সন্তান রয়েছে। বিয়ের কিছু দিন পরই সৌদিতে পাড়ি জমায় ময়নাল। প্রবাসে যাওয়ার পর স্ত্রীর প্ররোচনায় নিজের মায়ের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ রক্ষা না করে বিদেশে অর্জিত সকল টাকা স্ত্রীর কাছে পাঠাতেন ময়নাল। আর সেই টাকা দিয়ে স্ত্রী তাছলিমা নিজের নামে এবং তার মামা আবদুল জলিল ওরফে জলিল মাষ্টার ও নুরু মিয়ার নামে প্রায় ৫ বিঘা সম্পত্তি ক্রয় করেছেন। এছাড়াও স্ত্রী তাছলিমার কাছে ঐ প্রবাসির অর্জিত সকল নগদ অর্থই রয়েছে।
জানা গেছে, স্বামীর অনুপস্থিতিতে তাছলিমা তার বড় বোনের স্বামী সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে পরকিয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। স্ত্রীর পরকিয়া বিষয়টি জানতে পেরে সর্বশেষ গত বছরের ৩০ অক্টোবর সৌদি থেকে দেশে ফিরে ময়নাল সরাসরি তার শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে স্ত্রীর কাছে পাঠানো টাকার হিসাব ও ক্রয়কৃত সম্পত্তির তথ্য জানতে চান। এনিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কয়েক দফা ঝগড়া-বিবাদও হয়।
ঐ প্রবাসির মা আমেনা খাতুনের অভিযোগ, ময়নালের সকল সম্পদ আত্মসাত করতেই তাছলিমা তার পরিবারের লোকদের দিয়ে ময়নালকে খুন করে লাশ গুম করেছে। এরপর গত ২ নভেম্বর ময়নাল তার শ্বশুর বাড়ি থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে বের হয়ে নিখোঁজ হয়েছে বলে থানায় একটি জিডি করে তাছলিমা। তবে জিডি করেই তাছলিমা তার পরিবারের সদস্যদের অজানা কারণে আত্মগোপনে চলে যায়। কিন্তু গত প্রায় ১ মাস থেকে আসামিরা ফের এলাকায় এসে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য উল্টো আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমি আসামিদের ভয়ে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। তাই ছেলে খুন-গুমের বিচার চেয়েও আমাকে সন্ত্রাসীদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।
মা অভিযোগ করে আরও বলেন, আমি যখন লোকমুখে জানতে পারি আমার ছেলেকে হত্যা করে লাশ গুম করা হয়েছে। তখন আমি ঘাতকদের বিরুদ্ধে মামলা করতে মুরাদনগর থানায় যাই। পরে পুলিশ রহস্যজনক কারণে আমার কাছ থেকে কয়েকটি সাদা কাগজে টিপসই নেয়। এছাড়া ১ ডিসেম্বর পুলিশ ঐ সাদা কাগজে তাদের মনগড়া আসামির নাম লিখে একটি মামলা করে নেয়। থানা পুলিশের এমন রহস্যজনক ঘটনা দেখে বুঝতে পেরে, নিরুপায় হয়ে গত ৯ ডিসেম্বর কুমিল্লার আদালতে ৭ জনকে আসামি করে অজ্ঞাত আরও ৫/৬ জনের বিরুদ্ধে আমার ছেলেকে খুনের পর লাশ গুমের অভিযোগে একটি মামলা (সিআর-৫১৭/১৫) করি।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহ কামাল আকন্দ পিপিএম জানান, মামলার তদন্তে অগ্রগতি হয়েছে অনেক দূর। আশা করছি আগামি কিছু দিনের মধ্যেই এই নিখোঁজের রহস্য বের করতে পারবো।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।