ডিম দেওয়া শেষ নিরাপদে ফিরে যাবে মা কাছিম
সফিউল আলম
প্রিন্টঅঅ-অ+
‘সমুদ্রের ঝাড়ুদার’ নামে পরিচিত কচ্ছপ বা কাছিম। এরা সমুদ্রের ময়লা আবর্জনা খেয়ে বাঁচে। এতে সমুদ্র দূষণমুক্ত হয়। সমুদ্রের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য কাছিম অপরিহার্য একটি প্রাণি। তাদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, কাছিমের বাচ্চা ফোটার পর যেখান থেকে সমুদ্রে নামে, সেখানেই আবার ফিরে আসে ডিম পাড়ার জন্য, এমনকি হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে।
কাছিম ডিম পাড়ে নির্জন সমুদ্র সৈকতের বালুতে গর্ত করে। প্রায় দুই মাস পর সেই ডিম থেকে বাচ্চা ফোটে বের হলে সেই বাচ্চা আবার সমুদ্রে চলে যায়। একসময় কক্সবাজারের বিস্তীর্ণ সমুদ্র উপকূল কাছিমের ডিম পাড়ার আদর্শ জায়গা ছিল। কিন্তু পর্যটন শিল্পের প্রসারের কারণে সৈকতের নির্জন এলাকা এখন কমে এসেছে। এছাড়া বেড়েছে কুকুরের উৎপাত। পাশাপাশি ডিম চুরি করে বিক্রির ঘটনাও ঘটছে। ফলে কক্সবাজার উপকূলে ডিম পাড়তে এসে উল্টো বিপন্ন হয়ে পড়ে পরিবেশের এই বন্ধু প্রাণিটি। এ কারণে আগের তুলনায় কাছিমের ডিম পাড়ার হার কমে গেছে। বিষয়টি উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের। তবে কক্সবাজারের কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা পরিবেশ বান্ধব এই প্রাণিটির উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। তারা এখন কৃত্রিমভাবে হ্যাচারিতে ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা বের করছে। এতে কক্সবাজার সমুদ্র দূষণ থেকে রক্ষা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রাকৃতিকভাবে সামুদ্রিক কাছিমের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর জন্য কক্সবাজার উপকূল জুড়ে অর্ধশতাধিক হ্যাচারি তৈরী করেছে ‘মেরিনলাইফ এলায়েন্স’ নামের একটি গবেষণা ও সংরক্ষণ সংস্থা। চলতি শীত মৌসুমে কাছিমের ডিম সংগ্রহ করে এসব হ্যাচারিতে ডিম ফুটানোর প্রক্রিয়া চালাচ্ছে সংগঠনটি। ইতোমধ্যে তারা টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, সোনাদিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, উখিয়া ও কক্সবাজার শহরের সমিতি পাড়ার বালিয়াড়িতে হ্যাচারি তৈরী করে বিশেষ ব্যবস্থায় প্রায় কয়েক হাজার কাছিমের ডিম সংরক্ষণ করেছে বাচ্চা ফুটানোর জন্য। বাচ্চা ফোটার পর এসব কাছিম সাগরে অবমুক্ত করে দেওয়া হবে। মানুষের অবাধ চলাফেরা ও কুকুরের উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে চারপাশে বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরী কাছিমের হ্যাচারিতে ডিম পাড়া থেকে বাচ্চা ফুটানো পর্যন্ত কড়া নজর রাখছেন ওই গবেষণা ও সংরক্ষণ সংস্থার কর্মীরা।
মেরিনলাইফ এলায়েন্স এর গবেষণা সহকারী মোবারক হোসেন জানান, সামুদ্রিক কাছিমের ডিম পাড়ার উপযুক্ত সময় হলো শীত মৌসুম। মৌসুমের শুরুতে প্রজননক্ষম কাছিমগুলো কূলে ফিরে আসে ডিম পাড়ার জন্য। কাছিমের ডিম পাড়ার নিরাপদ স্থান হলো জনশূণ্য এলাকা। যেখানে মানুষের আনাগোনা ও কুকুরের বিচরণ নেই, সেখানে সৈকতের বালুতে গর্ত খুঁড়ে ডিম পাড়ে সামুদ্রিক কাছিম। বিশেষ করে রাতের আঁধারে ডিম পাড়তে কূলে ওঠে কাছিম।
মেরিনলাইফ এলায়েন্স এর নির্বাহী পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম জুয়েল জানান, প্রতিটি কাছিম কূলে এসে ডিম পাড়ার জন্য সময় নেয় মাত্র দেড় থেকে দুই ঘন্টা। এই সময়ের মধ্যে প্রতিটি কাছিম প্রতিবারে ৬০ থেকে ১৭২টি পর্যন্ত ডিম দিতে পারে। ডিম দেওয়ার পর আবার তারা সাগরে ফিরে যায়।
কাছিমের ডিম সংগ্রহ করে বালিয়াড়ির একাংশে বাঁশের বেড়া ও জাল দিয়ে হ্যাচারি তৈরি করে তা সংরক্ষণে রাখা হচ্ছে। ওখানে বালির এক থেকে দেড় ফুট নিচে ডিম গুলো রাখা হয়। বালির নিচে ৫৫ থেকে ৬৫ দিন রাখার পর প্রাকৃতিকভাবে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটে বের হয়। এরপর বাচ্চাগুলোকে অবমুক্ত করা হয় সাগরে।
তিনি জানান, টেকনাফের শামলাপুর, শাহপরীরদ্বীপ, সেন্টমার্টিনের কোনাপাড়া, শিলবনিয়ার গুলা, উখিয়ার মনখালী থেকে সোনারপাড়া, রামুর পেঁচারদ্বীপ, মহেশখালীর সোনাদিয়া, ধলঘাটা, কুতুবদিয়া ও কক্সবাজার শহরের সমিতি পাড়ার বালিয়াড়িতে অর্ধশতাধিক সামুদ্রিক কাছিমের স্থানান্তরিত ডিম ফোটানোর স্থান রয়েছে (হ্যাচারি)। বর্তমানে ওসব হ্যাচারীতে দেড় শতাধিক কাছিমের প্রায় ১ হাজার আটশ ডিম বাচ্চা ফোটার অপেক্ষায় রয়েছে।
চলতি শীত মৌসুমে আরো অনেক কাছিম কূলে এসে ডিম পাড়বে বলে মনে করেন মো. জহিরুল ইসলাম জুয়েল। তিনি বলেন, প্রতিটি হ্যাচারির আশপাশে আমাদের কর্মচারী রয়েছে। রাতের আঁধারে তারা সাগরের বালিয়াড়িতে পাহারা বসায়। কখন কাছিম এসে ডিম পাড়ে, তা দেখার জন্য। আর ডিম পাড়লে তা সংগ্রহ করে হ্যাচারীতে রাখা হয়। তখন ওখানেই প্রাকৃতিকভাবে বাচ্চা ফোটে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।