- হোম
- >
- আইন-মানবাধিকার
- >
- তাহের-ননীর মৃত্যুদণ্ড
তাহের-ননীর মৃত্যুদণ্ড
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় নেত্রকোনার মো. ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আজ মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনালের তিন সদস্যের বেঞ্চ এ রায় দেন। অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি শাহীনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দী।
এর আগে সকাল ১০টায় নেত্রকোনার কারাগার থেকে আতাউর রহমান ননী ও মো. ওবায়দুল হক তাহেরকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। রায়কে ঘিরে সকাল থেকে সুপ্রিম কোর্ট ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এর আগে গত ১০ জানুয়ারি উভয় পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে একাত্তরে নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা, নির্যাতন, অপহরণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগসহ ছয় ধরনের অভিযোগ রয়েছে।
তাহেরের বাড়ি নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার ভোগড়া গ্রামে। আর ননীর বাড়ি একই জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কচন্দরা গ্রামে। ২০১৪ সালের ১২ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। ওই দিন বিকেলে শহরের মোক্তারপাড়ার সাবেক ফুটবলার ননী ও তেরীবাজারের ব্যবসায়ী তাহেরকে গ্রেপ্তার করে নেত্রকোনা মডেল থানা পুলিশ। পরে তাদের ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। পরদিন হাজির করা হলে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে তদন্ত সংস্থা। এরপর একই বছরের ১১ ডিসেম্বর ননী-তাহেরের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। গত বছর ২ মার্চ এ দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয়। ননী-তাহেরের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তাসহ ২৩ জন সাক্ষী। আসামিদের পক্ষে একজন সাফাই সাক্ষীর নাম দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তাকে হাজির করা হয়নি।
তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে থাকা চারটি অভিযোগ থেকে দুটি বাড়িয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে (ফরমাল চার্জ) ছয়টি অভিযোগ দাখিল করেছিলেন প্রসিকিউশন। ওই ছয়টি অভিযোগকেই আমলে নিয়ে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
প্রথম অভিযোগ
১৯৭১ সালের ১৭ আগস্ট ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীর নেতৃত্বে রাজাকাররা নেত্রকোনার বারহাট্টা থানার বাউশী বাজার থেকে ফজলুল রহমান তালুকদারকে অপহরণ করে। পরে জেলা পরিষদ ডাকবাংলোয় নির্যাতনের পর ত্রিমোহনী সেতুতে হত্যা করে। একই সঙ্গে ৪০০ থেকে ৪৫০টি দোকানের মালামাল লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
দ্বিতীয় অভিযোগ
একাত্তরের ৪ অক্টোবর জেলার বারহাট্টা রোডের শ্রীশ্রী জিউর আখড়ার সামনে থেকে ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননী কৃতী ফুটবলার দবির হোসেনকে অপহরণ করেন। পরে নির্যাতনের পর মোক্তারপাড়া ব্রিজে গুলি করে হত্যা করা হয় দবিরকে।
তৃতীয় অভিযোগ
১৯৭১ সালের ১৯ অক্টোবর ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীর নেতৃত্বে বারহাট্টা থানার লাউফা গ্রাম থেকে মশরফ আলী তালুকদারসহ ১০ জনকে অপহরণ করা হয়। পরে ঠাকুরাকোনা ব্রিজে নিয়ে সাতজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
চতুর্থ অভিযোগ
ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননী মিলে মলয় বিশ্বাস ও অ্যাডভোকেট শীষ চন্দ্র সরকারের বাড়ি দখল করেন। পরে মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে পরিবারসহ তাদের দেশত্যাগে বাধ্য করেন।
পঞ্চম অভিযোগ
১৫ নভেম্বর ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননী বিরামপুর বাজার থেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বদিউজ্জামান মুক্তসহ ছয়জনকে অপহরণ করে লক্ষ্মীগঞ্জ খেয়াঘাট ও মোক্তারপাড়া ব্রিজে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেন।
ষষ্ঠ অভিযোগ
ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননী চন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কামিনী চন্দ্র চক্রবর্তীসহ ২৭ জনকে নেত্রকোনা জেলগেট থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।