বিশ্ব ক্রিকেটে অভিষিক্ত শেখ কামাল ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম
সফিউল আলম
প্রিন্টঅঅ-অ+
যুব বিশ্বকাপ দিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে অভিষিক্ত হলো কক্সবাজার সাগরপাড়ের নয়নাবিরাম শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। স্কটল্যান্ড এবং নামিবিয়া যুবাদের ম্যাচ দিয়ে শুক্রবার পর্দা উঠেছে শেখ কামাল ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামের। এনিয়ে লর্ডস এর তালিকায় বাংলাদেশ থেকে যুক্ত হলো আরো এক বিশ্ব ক্রিকেট ভেন্যু। কিন্তু ক্রিকেটের এ নতুন ইতিহাসের সাক্ষী হতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কক্সবাজারবাসী। নির্মিতব্য স্টেডিয়ামটিতে পর্যাপ্ত গ্যালারী তৈরী না হওয়ায় নিজেদের ঘরেও খেলা দেখার সুযোগ পায়নি স্থানীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা।
প্রথম বারের মতো স্বপ্নের স্টেডিয়ামে আনুষ্টানিকভাবে উদ্বোধন হয়েছে অনুর্ধ-১৯ যুব বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ওয়ানডে ম্যাচ। শুক্রবার সকাল ৯টায় কক্সবাজার জমকালো উদ্বোধনের মাধ্যমে বিশ্বকাপের মুকুট পড়েছে কক্সবাজার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ষ্টেডিয়াম। স্কটল্যান্ড যুবারা টসে জিতে ব্যাটিং’র সিদ্ধান্ত নিয়ে নামিবিয়াকে ফিল্ডিং এর আমন্ত্রণ জানায়। এরপর নামিবিয়ার বোলারদের মারমুখী বুলিংয়ে পরাস্থ স্কটল্যান্ড এর ওপেনিং ব্যাটসম্যান থেকে শুরু করে একে একে সব ব্যাটসম্যান ড্রেসিং রুমের পথ ধরে। স্কটল্যান্ড ৩৬ ওভারে ১৫৯ রান সংগ্রহ করতে গিয়ে সব কটি উইকেট হারায়।
পরে ১৬০ রান তাড়া করেত গিয়ে এক উইকেট হারিয় টার্গেটে পৌঁছে নামিবিয়ারা। এ জয়-পরাজয়ের মাধ্যমে কক্সবাজারের গৌরবের ইতিহাসে অংশিদারিত্ব নিয়েছে স্কটল্যান্ড ও নামিবিয়া।
কিন্তু সফিউল আলম, রফিকুল ইসলাম, সাকলাইন মোস্তাক, শাহ আলম, শাহাব উদ্দিন ও ফয়সাল খানসহ অসংখ্য ক্রিকেটভক্ত বলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু হিসেবে বিশ্বখাতায় কক্সবাজারের নাম অন্তর্ভূক্ত হওয়া সত্যি গৌরবের। এটি উদযাপন করার মতো একটি বিষয়। কিন্তু কক্সবাজারের সাধারণ মানুষকে ইতিহাসের এ অংশে শরীক হতে না দেওয়া বেদনাদায়ক। কক্সবাজারের এ শুভদিনটি কোন মিডিয়া সরাসরি সম্প্রচার করলে বাড়িতে বসে হলেও মনের খোরাক মেটাতে পারতো ক্রিকেট অনুরাগীরা।
এদিকে কক্সবাজার শেখ কামাল ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আন্তর্জাতিক অভিষেক দিনে দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পাওয়াকে সৌভাগ্য বলে ভাবছেন আইন শৃংখলাবাহিনীর সদস্যরা।
খেলোয়াড়দের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হুমায়ুন আহমেদ বলেন, কক্সবাজারে বিশ্বকাপ আয়োজনে দায়িত্বের খাতিরে হলেও নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারা সত্যি আমাদের জন্য (পুলিশদের) গর্বের।
একদিকে যুব বিশ্বকাপের এ আসর অন্যদিকে আন্তর্জাতিকতায় শেখ কামাল ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামের অভিষেককে কেন্দ্র করে কক্সবাজারকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত এক সপ্তাহ ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ‘নিরাপত্তা মহড়া’ দিয়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরী জানান, জেলা শহরে পোশাকধারী ৭৫১ জন পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া দায়িত্ব পালন করছেন র্যাব, বিজিবি এবং সাদা পোশাকে সকল গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, আমরা কোন ঝুঁকি নিতে চায়নি। যুব বিশ্বকাপের কক্সবাজার ভেন্যুতে চলমান খেলা গুলো সুষ্টভাবে সম্পন্ন করতে পারার উপর নির্ভর করছে ভেন্যুটির আগামীর ভবিষ্যত। এ আসরের সফলতা উপরই এখানে অনুষ্ঠিত হবে বড়দের আন্তর্জাতিক খেলাও। তাই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে কক্সবাজার ভেন্যু, খেলোয়াড়দের জন্য নির্ধারিত হোটেল ও জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। নিরাপত্তা রক্ষায় স্থাপন করা হয়েছে জিপিএস পদ্ধতি, ভেহিকেল স্ক্যানার, ডগ স্কোয়াড, ভেন্যু অপারেশন কমান্ড স্থাপনসহ বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি। খেলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা বজায় থাকবে।
তিনি আরো জানান, নিরাপত্তার খাতিরে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সহায়তাও পাওয়া যাবে। সেভাবে প্রস্তুতি রয়েছে।
দেখা যায়, স্টেডিয়ামের তিনটি প্রবেশ পথেই পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। ভেতরেও রয়েছে নিরাপত্তা বেস্টনি। রয়েছে বিজিবির ডগ স্কোয়াডও। স্টেডিয়াম এলাকার সড়ক গুলোতে রয়েছে আইনপ্রয়োগকারি সংস্থার সদস্যদের গাড়ির টহল।
কক্সবাজার জেলা ক্রিড়া সংস্থা (ডিএসএ)’র সাধারণ সম্পাদক অনুপ বড়ুয়া অপু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সু-দৃষ্টির কারণে আজ ক্রিকেট বিশ্বের খাতায় আন্তর্জাতিক ভেন্যু হিসেবে কক্সবাজার স্থান করে নিয়েছে। যুব বিশ্বকাপ আসরের মধ্য দিয়ে পরিপূর্ণতা লাভ করলো দরিয়াপাড়ের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম। এটি কক্সবাজারবাসীর জন্য বিশাল পাওয়া।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’র কক্সবাজার কাউন্সিলর ও সদর উপজেলা আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল করিম মাদু বলেন, ইচ্ছে থাকা সত্তেও কক্সবাজারের এ নতুন ইতিহাসে চাক্ষুস অংশিদার বানাতে আমরা সবাইকে সুযোগ করে দিতে পারিনি। এরপরও প্রশাসন ও ডিএসএ’সহ সর্বস্থর থেকে আন্তরিক সহযোগিতা পাচ্ছে আয়োজকরা। সাগরপাড়ের নয়ানিভিরাম এ স্টেডিয়াম ক্রিকেট বিশ্বে একদিন এশিয়ার অন্যতম ভেন্যুতে পরিণত হবে।
বড়দের বিশ্বকাপের খেলাও এখানে অনুষ্ঠিত হবে, সেদিন বেশি দূরে নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি ।
গত ৭ ডিসেম্বরে ঘোষিত আইসিসির ম্যাচ রুটিন অনুসারে, এবার দেশের আটটি ভেন্যুতে বিশ্বকাপের ৪৮টি ম্যাচ হবে। এর মধ্যে সাগর পাড়ের কোল ঘেষে দৃষ্টিনন্দন পরিবেশে গড়ে তোলা কক্সবাজার ভেন্যুতে থাকছে ১৭টি ম্যাচ। গ্রুপ পর্বের ৫টি ম্যাচ এবং প্লেট পর্বের সবগুলো ম্যাচ অর্থাৎ ১২টি ম্যাচ হবে কক্সবাজারে। মূল মাঠে ম্যাচ গড়াবে ৯টি, একাডেমী মাঠে ৮টি। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার যুবারাও কক্সবাজারে এসে পৌছেছেন।
কক্সবাজারে অনুষ্ঠিতব্য গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলোর সূচি:
২৯ জানুয়ারি: স্কটল্যান্ড বনাম নামিবিয়া (মূলমাঠ), ৩১ জানুয়ারি: বাংলাদেশ বনাম স্কটল্যান্ড (মূল মাঠ), দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম নামিবিয়া (একাডেমি মাঠ), ২ ফেব্রুয়ারি: বাংলাদেশ বনাম নামিবিয়া (মূলমাঠ), দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম স্কটল্যান্ড (একাডেমি মাঠ)।
প্লেট পর্বের সময়সূচি:
৪ ফেব্রুয়ারি: প্লেট কোয়ালিফাই-১ (মূল মাঠ), প্লেট কোয়ালিফাই-৩ (একাডেমি মাঠ), ৫ ফেব্রুয়ারি: প্লেট কোয়ালিফাই-২ (মূল মাঠ), প্লেট কোয়ালিফাই-৪ (একাডেমি মাঠ), ৭ ফেব্রুয়ারি: প্লেট পে-অফ-১ (মূল মাঠ), ৮ ফেব্রুয়ারি: প্লেট সেমিফাইনাল-১ (মূল মাঠ), প্লেট পে-অফ-২ (একাডেমি মাঠ), ৯ ফেব্রুয়ারি: প্লেট সেমিফাইনাল-২ (একাডেমি মাঠ), ১০ ফেব্রুয়ারি: প্লেট ১৩তম স্থান নির্ধারণী (মূল মাঠ), ১১ ফেব্রুয়ারি: প্লেট ১৫তম স্থান নির্ধারণী (একাডেমি মাঠ), ১২ ফেব্রুয়ারি: প্লেট ১১তম স্থান নির্ধারণী (একাডেমি মাঠ), প্লেট ফাইনাল (মূল মাঠ)।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।