কক্সবাজার ঘিরে উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা
সফিউল আলম
প্রিন্টঅঅ-অ+
কক্সবাজারকে কেন্দ্র করে সরকারের নেওয়া উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভূমি ব্যবহারের লে-আউট প্ল্যান চূড়ান্ত করতে বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) কক্সবাজারে এসেছেন ১২টি মন্ত্রণালয়ের ১৯ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বৃহস্পতিবার কক্সবাজারে পৌঁছে মহেশখালীর সোনাদিয়া, মাতারবাড়ী ও নলবিলা পরিদর্শন করেন। পরে তারা কক্সবাজারে ফিরে রাতে সার্কিট হাউসে এক বৈঠকে বসেন।
বৃহস্পতিবার রাতে কর্মকতারা স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করছিলেন। আজ তারা টেকনাফে গিয়ে জলিলের দ্বীপ ও সাবরাং পরিদর্শন করবেন। আগামী শনিবার পর্যন্ত তারা কক্সবাজারে অবস্থান করে সরেজমিন লে আউট প্ল্যান প্রণয়ন করবেন এবং এবিষয়ে স্থানীয় কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করবেন।
জানা যায়, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, টেকনাফের পর্যটন শিল্প ও মহেশখালী দ্বীপ ঘিরে এক মহা উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। বিশেষ করে মহেশখালী দ্বীপের দক্ষিণে ও পশ্চিমে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে জেগে ওঠা চরভূমি নিয়েই নতুন নতুন প্রকল্পের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে দ্বীপের জমি নিয়ে পরিকল্পিত ও সমন্বিত উন্নয়ন কার্যক্রমের জন্য ভূমি ব্যবহারের একটি লে-আউট প্ল্যান প্রস্তুত করার কাজ শুরু হয়েছে। পরিকল্পনার অংশ হিসাবে এ দ্বীপের জমিতে ৪টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। এই দ্বীপেই স্থাপন করা হচ্ছে একাধিক কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প। গ্যাস ও জ্বালানী তেলের ডিপো ও পাইপ লাইনও স্থাপন করা হচ্ছে।
জানা যায়, কক্সবাজার বিমান বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করণ, আশ্রায়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে উচ্ছেদকৃতদের পূনর্বাসন, টেকনাফে এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন স্থাপন এবং মহেশখালীতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, গভীর সমুদ্র বন্দরসহ নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। মহেশখালী দ্বীপের পশ্চিমে গভীর সাগরের কারণে দ্বীপটি গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপনের উপযোগী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সমুদ্রপথে এ দ্বীপের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এখানে আমদানী করা গ্যাসের ডিপো স্থাপনসহ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া এ দ্বীপে নতুন প্রকল্প গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে সাগর তীরে নতুন করে জেগে উঠা চরভুমি।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন জানান, মহেশখালী দ্বীপের ৩০টি মৌজার মধ্যে ৯টি মৌজায় সাগরের বিশাল এলাকা জুড়ে জেগে ওঠা ২৬ হাজার ৩০০ একর জমি দ্বীপটির মানুষের ভাগ্যের দরজা খুলে দিয়েছে। শুধুমাত্র মহেশখালী দ্বীপেই ৪টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হচ্ছে। দ্বীপের ঘটিভাঙ্গা, সোনাদিয়া, কুতুবজোম ও ধলঘাটার ১৫ হাজার ৮৭২ একর জেগে ওঠা চরের জমি নিয়েই স্থাপন করা হচ্ছে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল।
সূত্র জানায়, দেশের এ যাবতকালের সর্ববৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প হিসাবে ঘোষিত মাতারবাড়ী তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এক হাজার দুইশত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা সম্পন্ন এই তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ইতোমধ্যে ১ হাজার ৪০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে জাইকা এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। অপরদিকে মাতারবাড়ীর একই স্থানে আরো ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনযোগ্য আরো একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ১ হাজার ২০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। সেই সাথে দ্বীপের হোয়ানক, হেতালিয়া, করইয়ারদিয়া, কালারমারছড়া ও পানিরছড়া মৌজায় আরো ৫ হাজার ৬০০ একর জমি অধিগ্রহনেরও কাজ শুরু হয়েছে।
এ পরিমাণ জমিও বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করার কথা নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক।
তিনি জানান, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এর জন্য উক্ত জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। অধিগ্রহণকৃত জমিতে পরবর্তীতে বিনিয়োগকারীদের প্রকল্প বাস্তবায়নের সুযোগ করে দেওয়া হবে। এছাড়াও মহেশখালী দ্বীপে স্থাপন করা হবে আমদানী করা গ্যাস ও তেলের ডিপো এবং পাইপ লাইন। মহেশখালী দ্বীপ থেকে ৩২ কিলোমিটার দুরে চট্টগ্রামের আনোয়ারা পর্যন্ত স্থাপন করা হবে এসব পাইপ লাইন। এসব প্রকল্প ছাড়াও মহেশখালী চ্যানেলের পুর্ব তীরে পেকুয়ায় আরো একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রাথমিক কাজও চলছে। সেই সাথে পেকুয়ায় মগনামায় বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর একটি সাব মেরিন ঘাঁটিও স্থাপন করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার।
মহেশখালী ছাড়াও টেকনাফের বিভিন্ন আকর্ষণীয় এলাকা নিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে পর্যটন শিল্প।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।