কপোতাক্ষ নদ খননের নামে গতিপথ পরিবর্তনের চেষ্টা
আকরামুল ইসলাম
প্রিন্টঅঅ-অ+
মহাকবি মাইকেল মধুসুধন দত্তের স্মৃতি বিজড়িত কপোতাক্ষ নদ আজ নদী খোকোদের পেটে। যশোর-সাতক্ষীরা-খুলনা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এ নদের তীরে প্রায় ৫০ লাখ মানুষের বসতি। ২০০০ সাল থেকে কপোতাক্ষের উপচে পড়া পানি আর ২০০৭ সাল থেকে পানি নিস্কাশিত না হতে পেরে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা। কয়েক বছরের ব্যাবধানে কপোতাক্ষ নদ আর্শিবাদ থেকে অভিশাপে রুপ নেয়। ‘কপোতাক্ষ বাঁচাতে মানুষ বাঁচাও কপোতাক্ষ খনন কর’ নামে সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান শুরু করে দক্ষিনাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ।
অবশেষে ২০০৯ সালের সংসদ নির্বাচন পূর্বে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ঘোনা হাইস্কুল মাঠে এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কপোতাক্ষ নদ খননের প্রতিশ্রুতি দেন। আশায় বুক বাঁধা এসব মানুষের স্বপ্ন পূরণ ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নে ২০১১ সালের জুলাই মাসে ২৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে চার বছর মেয়াদি কপোতাক্ষ নদ খনন প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। ৪ বছর মেয়াদী খনন প্রকল্পে ১৫টি গ্রুপে কার্যাদেশ দেওয়া হয় ১২টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। তারই মধ্যে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গোপালগজ্ঞের এমটি এ্যান্ড এসএস কনসোটিয়াম। সত্ত্বাধিকারী কামরুজ্জামান শিকদার। এই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির পাঁচটি প্যাকেজে কাজ চলছে কপোতাক্ষ নদে। কত টাকার কাজ চলছে সেটির কোন সঠিক তথ্য দিতে পারেননি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ফাইজুর রহমান।
অভিযোগ উঠেছে এই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নদীর রুট পরিবর্তন করে ভিন্নভাবে খনন কাজ চালাচ্ছেন। যার কারণে ভিটেমাটি ছাড়া হওয়ার মুখোমুখি ৬টি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারসহ হাজারো মানুষ। সাধারণ মানুষের অভিযোগ কপিলমুনি এলাকার নির্মল মজুমদার ও হারুন মেম্বার এই দুই প্রভাবশালী ব্যক্তিস্বার্থ হাচিল করতে স্থানীয় দুই এমপিকে ম্যানেজ করে নদীর গতিপথ ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দিচ্ছেন। এমন অভিযোগ করেন খুলনা জেলার হরিঢালী এলাকার মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নজরুল ইসলামসহ শতাধিক মানুষ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানিয়ে হরিঢালী ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল গফুর মোড়ল বলেন, গত তিন বছর আগে যে নদী খনন হয়েছিল সেটি এখন চলমান। এই চলমান নদী খনন হলে আমাদের কোন আপত্তি থাকবে না। এই চলমান নদীতেই খনন কাজের জন্য টেন্ডার হয়েছে অথচ খনন করা হচ্ছে অন্যস্থানে। ৩০-৪০ বছর পূর্বে ভরাট হয়ে যাওয়া স্থানে। যেখানে আমিসহ আরও ৬টি মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এবং প্রায় দেড় হাজার সাধারণ মানুষের বসতি।
তিনি আরও বলেন, পুরানো নদী খননের জন্য কপিলমুনি এলাকার নির্মল ঠাকুর ও হারুন মেম্বার দুইজন থেকে নানাভাবে পায়তারা চালাচ্ছে। তার মূল কারণ সিএস ম্যাপ অনুযায়ী (পুরাতন নদী) খনন করতে পারলে তারা দুইজন চলমান এই নদীতে ঘের করবে। ইতিমধ্যে তারা দুই তিনটা ডিট করে ফেলেছে। এই তাদের ধ্যান ধারণা। এদিকে আমরা ভিটেবাড়ি ছাড়া হয়ে যাবো।
কপিলমুনি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক রাজু বলেন, সব জায়গায় চলমান নদীর উপর দিয়ে খনন করা হচ্ছে। কিন্তু দুইটি ব্যক্তির নিজস্বার্থ হাছিলের জন্য তালার জেঠুয়া বাজার এলাকা থেকে হরিঢালী পর্যন্ত ৮ কিঃমিঃ নদী পুরাতন এসএ খতিয়ান অনুযায়ী খনন অপচেষ্টা করা হচ্ছে। টেন্ডার হয়েছে চলমান নদীর উপর। অথচ যেখানে খনন করা হচ্ছে সেখানে কোন কাজের টেন্ডার হয়নি। কাজের স্টিমেট নেই। তাছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন টাস্কফোর্সের অনুমোদনও সেখানেই নেই। অবৈধভাবে হাজার হাজার মানুষকে গৃহহীন করার পায়তারা চালানো হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, যে স্থান দিয়ে খননের চেষ্ট হচ্ছে সেখানে দুইটি গুচ্ছগ্রাম রয়েছে। সেখানে ৪ শতাধিক মানুষ বাস করে।
অপরদিকে, কপিলমুনি এলাকার নির্মল মজুমদার চলমান নদীতে ঘের বা ডিড করার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, চলমান নদী ভরাট করে আমরা বসতি গড়ে তুলবো। ওটা আমাদের নিজস্ব জমি। ওখানে কোন নদী ছিল না।
এদিকে, গুচ্ছগ্রামের বসবাসরতরা জানান, সরকার আমাদের এখানে থাকতে দিয়েছে। এখন যদি উচ্ছেদ করে দেয় তবে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো।
তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এমটি এ্যান্ড এসএস কনসোটিয়ামের ম্যানেজার ফাইজুর রহমান জানান, পুরাতন নদীতে খননের কোন কার্যাদেশ আমরা এখনও পায়নি। তবে পেয়ে যাবো। এখনও টাস্কফোর্সের অনুমোদন হয়নি। টাস্কফোর্সের টিম খুব শিগ্রই এটি পরিদর্শন করবেন। তবে তিনি এসব কথাগুলো প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ জানান।
কার্যাদেশ না পেয়ে খনন কাজ শুরু করলেন কিভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কাজের উদ্বোধন করেছেন।
এসব বিষয়ে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, পূর্বের নদী বা চলমান নদী কোনটিই কাউকে দখল করতে দেওয়া হবে না। গুচ্ছগ্রামটি রক্ষার জন্য নদী ওখান থেকে ঘুরিয়ে অন্যপাশ দিয়ে খনন করা যায় কিনা সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে, কেউ যদি নদী দখল বা ঘের করার উদ্যোগ গ্রহন করে তবে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
অন্যদিকে, এ ব্যাপারে বৃহৎস্বার্থে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।