- হোম
- >
- কৃষিজ ও প্রাণিজ
- >
- ছাতকে মৌসুম ছাড়া ধান উৎপাদনে কৃষক ছাদিকের চমক
ছাতকে মৌসুম ছাড়া ধান উৎপাদনে কৃষক ছাদিকের চমক
নুর উদ্দিন
প্রিন্টঅঅ-অ+
ছাতকে পরিক্ষামুলকভাবে মৌসুম ছাড়া ধান উৎপাদন করে চমক দেখালেন গোবিন্দগঞ্জ সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের বদিরগাঁও গ্রামের মরহুম আবদুল হাই এর ছেলে কৃষক মতিউর রহমান ছাদিক।
সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তাদের সু-পরামর্শে ২০০৫ সাল থেকে কৃষি কাজ করে যাচ্ছেন। চাষাবাদে তিনি কোন কোন সময় ভালো ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। তার বিশ্বাস সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার আর্থিক সহযোগিতা পেলে আধুনিক ব্রি-হাইব্রিড ও ব্রি জাতের উচ্চ ফলনশীল ধান উৎপাদনে বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম হবেন।
গত আমন মৌসুমে ছাতকে পর পর তিনবার বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে রোপণ করা ধান সম্পূর্ণ রুপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সম্পূর্ণ ক্ষতির পরও হাল ছাড়েননি ছাদিক।
দুর্যোগে চাষকৃত ৫০বিঘা জমির ধান গাছ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াতে তার প্রায় ২লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়। এর পর পরিক্ষামুলক ভাবে কার্তিক মাসের শেষ ভাগে বিআর ২২ (কিরণ), ব্রি-ধান ৪৬ জাতের চারা ৪০বিঘা জমিতে রোপণ করেন। এ ধান মাঘ মাসের প্রথম দিকে পেকে যায়। শ্রমিক সঙ্কটের কারণে ৪০ বিঘার মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ বিঘা জমির পাকা ধান এখনও মাঠে পড়ে আছে। ধান কর্তনের মেশিনের জন্য স্থানীয় কৃষি বিভাগের সাথে বার বার যোগাযোগ করেও কর্তনের মেশিন প্রদান করা হয়নি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ২০ জানুয়ারি দিনব্যাপী বৃষ্টিতে পাকা ধানের ক্ষতি সাধিত হয়েছে। পরিক্ষামূলক ধান চাষের জমিতে গৃহপালিত পশুর মাধ্যমে ক্ষতির পরও প্রতি বিঘাতে ১০ মন করে ধান উৎপাদন হচ্ছে। এতে ক্ষতির পরিবর্তে লাভবান। অনাবাদি ১৫বিঘা জমিতে গম ও ভুট্রা চাষ করেছেন। চলতি বোর মৌসুমে ৩০ বিঘা জমিতে বিআর ১৭, ব্রি-ধান ২৮, ২৯, ৫৮, ৬৩ ও ৬৪, ব্রি-হাইব্রিড ৫ (প্রস্তাবিত) এ ৭জাতের ধান চাষাবাদ অব্যাহত রয়েছে। অনাবাদি আরো ৬০ বিঘা জমিতে ডেঢ়স, সোয়াবিন, তীল, মোঘ ডাল, মাসকলাই ও দেশি জাতের পাট চাষের উদ্যোগ নিয়েছেন।
জানা যায়, ২০১৪ সালে রোপা আমন মৌসুমে প্রথম বারের মতো বৃহত্তর সুনামগঞ্জ জেলায় ব্রি-হাইব্রিড ধান-৪ এফ ওয়ান জাতের ধান পরীক্ষামূলক ভাবে চাষ করে ৬৫ শতাংশ ফলন হয়েছিল। পর পর দু’বন্যা এবং খড়ায় ৩৫ শতাংশ ক্ষতি হয়। ক্ষতি না হলে প্রতি বিঘা জমিতে ২১ মন ধান উৎপাদন হতো। ব্রি হাইব্রিড জাতের ধান বন্যা মুক্ত এলাকায় রোপা আমন চাষের অনুকূল পরিবেশে চাষাবাদের জন্য উপযোগী।
কৃষক মতিউর রহমান ছাদিক জানান, সরকারি ও বেসরকারির বিভিন্ন সংস্থার আর্থিক সহযোগিতা পেলে আরো অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনা যেতো। আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি রাইছ ট্রান্সপ্লান্টার, ভেনটিলেং ড্রায়ার, পাওয়ার টিলার, ভাসটাইল মাল্টিক্রপ প্লান্টার (ভিএমপি) ও পাওয়ার রিপারের অভাবে প্রজেক্টটির ব্যঘাত ঘটছে। এগুলো থাকলে প্রজেক্টটিকে দ্রুত এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। নিজস্ব যন্ত্রপাতি ও কৃষি অফিসের দেওয়া পানির পাম্প দিয়ে কোন মতে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
মৌসুম ছাড়া অসময়ে ধান উৎপাদন ও অনাবাদি জমিতে চাষাবাদের প্রজেক্টটি মাঠ পর্যায়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে পরিদর্শনে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুজ্জান, উপজেলা কৃষি অফিসার জগলুল হায়দার, উপজেলা প্রকৌশলী সমেরেন্দ্র তালুকদার, উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসার মুনিরুজ্জামান, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল মালেক, উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা দেলওয়ার হোসেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রজেক্টটি সরেজমিন ঘুরে সন্তোষ প্রকাশ করে উৎসাহ প্রদান করেন। পাশাপাশি বদিরগাঁও গ্রামের পাকা রাস্তার মুখ থেকে কৃষক ছাদিকের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তাটি পাকা করণ ও গৃহপালিত পশু থেকে ফসল রক্ষাসহ প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন ইউএনও। ধান চাষের জমি দিন দিন কমছে আর বাড়ছে জনসংখ্যা। প্রতি বছর প্রাকৃতিক বন্যা ও খড়ার কারণে কৃষক প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আরেক দিকে কৃষকদের কৃষি কাজে খরচ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাঙ্খিত ফল না পাওয়ার কারণে অনেকেই কৃষি থেকে সরে যাচ্ছে।
এলাকার মাটি ও পরিবেশ, আর্থ সামাজিক অবস্থায় যুগ-উপযোগি ও সঠিক মানের অনেকগুলো জাতের ধান নির্বাচন করে চাষ করলে রোগ-বালাই এবং প্রতিকূল আবহাওয়া মোকাবেলা করে ফলন ভাল হয়। এ কথাগুলো ভেবে চিন্তে আধুনিক চাষ পদ্ধতির ও উন্নত মানের বীজের মাধ্যমে অধিক পরিমান ধান ফলনের বিপ্লব ঘটাতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষক ছাদিক।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।