রায়পুরে মাদক ও নারী নির্যাতন বেড়েছে
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ২০১৫ সালে পৌর শহরসহ ১০টি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা উদ্বেগজনক ছিল। পুরো বছর জুড়ে ৫টি হত্যা, প্রায় অর্ধশত ডাকাতি, প্রায় ২ শতাধিক চুরি, ৪০টি ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, ২ সহস্রাধিক নারী ও শিশু নির্যাতনের ছোট বড় ঘটনা ঘটেছে।
রায়পুর থানা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী ২০১৫ সালে ৫টি হত্যা, ৫টি ডাকাতি, ৩টি চুরি, ৪টি ছিনতাই, ৭১টি মাদক, ৫টি অস্ত্র উদ্ধার, ৩০টি নারী নির্যাতনসহ গত এক বছরে ৩শ ৯টি মামলা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে হত্যা মামলায় ১০ জন, ডাকাতি মামলায় ২৪ জন, চুরির মামলায় ৩৪ জন, ছিনতাইয়ের মামলায় ১৫ জন, মাদকের মামলায় ৮০ জন, অস্ত্র মামলায় ৯ জন, নাশকতাকারী মামলায় ৭২ জন এবং অন্যান্য মামলায় ৩২৮ জনসহ ৫৭২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত কয়েক মাস মাদক নিয়ন্ত্রণে থাকলেও পারিবারিকভাবে নারী নির্যাতন বেড়ে যাওয়ায় চরম উদ্বিগ্ন রয়েছেন অভিভাবকগণ।
এ ছাড়াও পুরো বছর জুড়ে ১২৬৪ পিস ইয়াবা, ৯ কেজি গাজা, ২৫৮ লিটার চোরাই মদ, ৭টি চোরাই মটর সাইকেল ও ১টি সিএনজি উদ্ধার, ৫ শতাধিক অনটেষ্টসহ শতাধিক অবৈধ মটর সাইকেল আটক করা হয়েছে। দেশীয় এলজি ২টি , পিস্তল ১টি (ইউএও), ১টি পাইপগান, রিভলভারের গুলি ৫ রাউন্ড, পিস্তলের গুলি ৩ রাউন্ড, কার্টুজ ৫ রাউন্ড উদ্ধার করা হয়েছে। বিভিন্ন মামলায় ৪৮ জন সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে গ্রেপ্তার এবং ১০২ জন পলাতক আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি রয়েছে।
উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর মধ্যে ৩০ জানুয়ারি রিমি আক্তার নামে এক গৃহবধু অপহরণ, ২১ ফেব্রুয়ারি সৎ মায়ের নির্যাতনে তানিয়া আক্তার নামে ১৬ বছরের তরুনীর লাশ উদ্ধার, ১৩ জুন সামিয়া আক্তার নামে এক স্কুল ছাত্রী অপহরণ, ৯ সেপ্টেম্বর শ্বশুর বাড়ী থেকে হামদ্ রাব্বি নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার, ২৬ অক্টোবর রায়হান নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার, ৪ নভেম্বর খায়ের পাটওয়ারী নামে ১ বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার, ২৩ নভেম্বর মোল্যার হাট এলাকায় এক প্রতিবন্ধি তরুনী ধর্ষণ ও ১৮ জুন চরবংশী গ্রামে ১৮ বছরের এক প্রতিবন্ধি যুবতী একই এলাকার দেলোয়ার ও জিল্লুরসহ ৩ ধর্ষকের দ্বারা গণধর্ষণের স্বীকার। ১৭ জুন বিবি মরিয়ম বেগম নামে এক গৃহবধুর লাশ উদ্ধার। এছাড়াও প্রতিদিন পারিবারিক কলহের জের ধরে প্রতি মাসে আত্মহত্যা চেষ্টাকারী গড়ে ২-৩ জন করে তরুনী ও গৃহবধুরা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এ নিয়ে গত বছর প্রায় ১০ জন আত্মহত্যা করেন।
নারী নির্যাতন বিষয়ে মনোয়ারা বেগম ও শামছুন নাহার নামে দুই স্কুল শিক্ষিকা জানান, সমাজে যৌতুক আর কুসংস্কারের কারণে প্রায় পরিবারে নারী ও শিশু নির্যাতন বেড়েই চলেছে। এসব বন্ধ করতে হলে আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে বলে তারা মতামত দেন।
রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোস্তাফা খালেদ বলেন, রায়পুর উপজেলায় গড়ে প্রতি মাসে শিশু ও মহিলা ১৫০ জন করে নারী নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। গত বছর প্রায় দুই সহস্রাধিক শিশু ও নারী নির্যাতন হয়েছে বলে দাবি করেছেন।
লক্ষ্মীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এড. মিজানুর রহমান মুন্সি বলেন, গত কয়েক বছর রায়পুরে মাদকের বিস্তার লাভ করেছে। গত তিন মাস মোটামুটি মাদক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে তার ধারনা। সকলের সম্মলিত প্রচেষ্টায় মাদক বন্ধ করা সম্ভব।
রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ লোকমান হোসেন বলেন, গত ৪ মাস আগে এ থানায় যোগদান করেছি। মাদক ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জনবল ও যানবাহনের সংকট থাকায় অধিকাংশ স্থানে ঘটনার সাথে সাথে পুলিশ টহলের আগেই সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনে রাখতে পুলিশ প্রশাসন তৎপর রয়েছে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।