নারী শ্রমিক রপ্তানি বাড়ছে
বিদেশে নারী শ্রমিক হয়রানি কমে যাওয়ায় ক্রমাগত শ্রমিক রপ্তানির হার বাড়ছে বলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এক সময় সৌদি আরবসহ অন্যান্য মুসলিম দেশে নারী শ্রমিক নির্যাতনের শিকার হতেন। এতে করে ওইসব দেশে নারী শ্রমিক রপ্তানির ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। সম্প্রতি দেশগুলোর সরকার গৃহকর্মী নির্যাতন ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এ কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে নারী শ্রমিক রপ্তানি বেড়েছে।
এরইমধ্যে বাংলাদেশ থেকে ১০ হাজার নারী শ্রমিক নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে সৌদি আরব। আর এর ইতিবাচক প্রভাব রেমিটেন্সের ওপরও পড়বে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে প্রথম নারী শ্রমিক যাওয়া শুরু হয় ১৯৯১ সালে। ওই বছর মোট দুই হাজার একশ ৮৯জন নারী কর্মী বিদেশে যান। এরইমধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতে চারশ ১৬জন, কুয়েতে চারশ ১৭জন, সৌদি আরবে ২৯জন, ওমানে ১৭জন, বাহরাইনে একশ ৪৩জন, লেবাননে ২৫জন, মালয়েশিয়ায় নয়শ ২৬জন, মৌরিতাসে একশ ৭৮জন, ব্রুনাইয়ে আটজন, সিঙ্গাপুরে একজন, যুক্তরজ্যে একজন ও পাকিস্তানে তিনজন কর্মী রপ্তানি হয়।
সূত্র জানায়, ১৯৯১ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত নারী কর্মী রপ্তানি বাড়েনি। তবে কোনো কোনো বছর এ হার কমেছে। ২০০৪ সালে নারী শ্রমকি রপ্তানি কিছুটা গতি পায়। এ বছর বাংলাদেশ থেকে মোট ১১ হাজার দুইশ ৫৯জন নারী কর্মী রপ্তানি হয়েছে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও গত কয়েক বছর এ ধারা অব্যাহত। গত পাঁচবছর বাংলাদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী শ্রমিক বিভিন্ন কাজ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গেছেন।
সরকারের নানা পদক্ষেপের কারণে এখন বিদেশে নারী কর্মী হয়রানি কমে গেছে। এ কারণে ক্রমাগত নারী শ্রমিকদের বিদেশে যাওয়ার হার বাড়ছে বলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এতদিন শুধু অদক্ষ নারী শ্রমিক বিশেষ করে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে বিদেশ যেতেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের নারী কর্মীদের তুলনায় কম বেতন পেতেন। সম্প্রতি সরকার অদক্ষ নারী কর্মী পঠানোর ওপর কড়াকড়ি আরোপ করায় এখন বাংলাদেশ থেকে যেসব কর্মী যাচ্ছেন তাদেরকে সংশ্লিষ্ট দেশের ভাষা, সে দেশের আচার-আচরণসহ প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠানো হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. সি আর আবরার বলেন, বিদেশে আমাদের দূতাবাসগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখলে, বেশ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি সংখ্যক নারী শ্রমিক পাঠানো সম্ভব হবে৷ এতদিন নারীরা যেত মূলত গৃহকর্মী হিসেবে৷ এখন গৃহকর্মী ছাড়াও তৈরি পোশাক শিল্প কর্মী হিসেবেও নারী শ্রমিক যাচ্ছেন। এর প্রভাব পড়ছে রেমিটেন্স প্রবাহের ওপর।
সরকারি মালিকানাধীন জনশক্তি রপ্তানি প্রতিষ্ঠান বোয়েসেলের একজন কর্মকর্তা বলেন, জর্ডান, ওমান ও কাতারে বাংলাদেশ থেকে যেসব নারী কর্মী যাচ্ছেন, তাদের সপ্তাহে ছয়দিন দিনে আট ঘণ্টা করে কাজ করতে হয়৷ চাইলে ওভারটাইমও তারা করতে পারেন৷ চাকরির শর্তানুযায়ী শ্রমিকের থাকা, তিন বেলা খাওয়াসহ প্রাথমিক চিকিৎসা, এমনকি আসা-যাওয়ার বিমান ভাড়াও বহন করে নিয়োগকর্তা অর্থাৎ কোম্পানি৷
তিনি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী কর্মীরা তিন বছর সেখানে কাজ করতে পারেন৷ আর এরপর চাইলে কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করে মেয়াদও বাড়ানো যায়। অনভিজ্ঞ শ্রমিকরা অপারেটর হিসেবে মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পাচ্ছেন। অন্যদিকে দক্ষ শ্রমিকরা পাচ্ছেন ২৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরো বেশি।
তিনি বলেন, চাকরিদাতা কোম্পানি প্রত্যেকের বেতন থেকে ভবিষ্যৎ তহবিল হিসেবে ছয় শতাংশ কেটে রাখবে। এরপর এটি একটি তহবিলে জমা হবে। এর পাশাপাশি কোম্পানি দেবে ১২ শতাংশ। তার ওপর যোগ হবে লাভ। সব মিলিয়ে প্রতি মাসে বেতনের ১৮ শতাংশ টাকা জমা হবে নারী কর্মীদের। শ্রমিকরা দেশে ফিরে আসার সময় এই টাকা নিয়ে আসতে পারছেন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।