প্রতিবন্ধী আব্দুল মোতালেব বেঁচে থাকার সংগ্রাম
খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার বেলছড়ি এলাকার একটি ইট ভাটায় বাস করে বেল্লাল হোসেন (২৮)। বেল্লালের বৃদ্ধ পিতা মো. আব্দুল মোতালেব মাসিক দুই হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন ওই ইটভাটাতে। সেই সুবাদে সেখানেই বসতি তাদের। ছয় বোন আর এক ভাইয়ের মধ্যে তৃতীয় বেল্লাল। অন্য দশজনের মতো স্বাভাবিক নয় তাঁর হাত। বেল্লাল হোসেনের দুটো হাতই বেঁটে। কনুই থেকে কব্জি পর্যন্ত মাত্র ৬ ইঞ্চি। কব্জির পরের অংশও উল্টানো। আর এক হাতে আঙ্গুলও চারটি করে। তবে এই প্রতিবন্ধকতা দমাতে পারেনি তাঁকে।
ব্যাটারীচালিত ইজিবাইক (অটো রিক্সা) চালিয়েই সংসারের ভরন-পোষণ করে সে। কষ্টে অর্জিত টাকা দিয়ে ইতিমধ্যে তিন বোনকে বিয়ে দিয়েছে। এছাড়া ছোট এক বোন এবং নিজের দুই সন্তানের পড়াশুনাও চালিয়ে যাচ্ছে সে।
অভাবের দরুণ খুব বেশী পড়াশুনা করা হয়নি তাঁর। ৮ম শ্রেণিতেই থেমে গিয়েছিল শিক্ষার চাকা। স্কুল ছেড়েই সংসারের হাল ধরতে হয়েছিল প্রতিবন্ধী বেল্লালকে। তবে প্রতিবন্ধী হলেও কখনো কারো কাছে হাত পাতেনি সে। সে সময় বাবার সাথে পাহাড়ে গিয়ে বাঁশ, বাঁশের শন এনে বাজারে বিক্রি করতো। সাত বছর আগে কুমিল্লায় মাস তিনেক ব্যাটারীচালিত ইজিবাইক (অটোরিক্সা) ভাড়ায় নিয়ে চালায় সে। পরে দীঘিনালায় ফিরে এসে জীবন-জীবিকায় বেছে নেয় সেই পেশা। কিছুদিন আগে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকার কিস্তিতে একটি ইজিবাইক (অটোরিক্সা) নেয় বেল্লাল। ইতোমধ্যে কিস্তির ৫৫ হাজার টাকা পরিশোধও করা হয়েছে। পাশাপাশি নিজের কষ্টার্জিত উপার্জন থেকে তাঁর ছোট তিন বোনকে বিয়ে দিয়েছে। সবার ছোট বোনটি এখন পড়ছে ৭ম শ্রেণিতে। নিজে বিয়ে করে সংসারিও হয়েছে, এখন সে তিন সন্তানের জনক। সন্তানদের মধ্যে বড় মেয়ে ৪র্থ শ্রেণি আর মেজ ছেলে ২য় শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।
অদম্য বেল্লাল হোসেন জানায়, নিজের কোন জমি-জমা না থাকলেও মনে তাঁর সুখ আছে। কারো কাছে হাত না পাতার সুখ। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সুখ। প্রতিবন্ধীতাকে জয় করবার সুখ।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।