- হোম
- >
- বাংলা ও বাঙালি
- >
- অগ্নিযুগের মহাবিপ্লবী মাস্টারদা সূর্য সেন
মহাপ্রয়াণ দিবসে সশ্রদ্ধ স্মরণ
অগ্নিযুগের মহাবিপ্লবী মাস্টারদা সূর্য সেন
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি, ২০১৬
প্রিন্টঅঅ-অ+
অগ্নিযুগের মহাবিপ্লবী মাস্টারদা’ সূর্য সেনের জন্ম হয়েছিল ২২শে মার্চ ১৮৯৪ সালে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়াতে। তার বাবা রমানিরঞ্জন সেন পেশায় ছিলেন শিক্ষক।
১৯১৬ সালে তিনি বহরমপুর কলেজে বিএ পড়তে যান। সেখানেই এক শিক্ষকের সাহচর্যে ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন সম্পর্কে ক্রমশ জ্ঞানলাভ করেন। তখন থেকেই তিনি বিপ্লবী আদর্শের প্রতি আগ্রহী হন এবং ফলস্বরূপ তিনি ‘অনুশীলন সমিতি’তে যোগদান করেন। পড়াশোনা শেষ করে তিনি নন্দনকানন জাতীয় বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। সেটা ছিল ১৯১৮ সাল। বিদ্রোহের আগুন তখনও তার মনে জ্বলছে।
অগ্নিযুগের মহাবিপ্লবী মাস্টারদা' সূর্য সেন ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল একটি বিপ্লবী দলের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের পুলিশ বাহিনী এবং তাদের সহায়ক বাহিনীর অস্ত্রাগার লুট করেন। সেখানেই থেমে থাকেন নি তারা। সেখান থেকে বিদ্রোহ দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন অস্ত্রাগার লুট, টেলিফোন, টেলিগ্রাফ, রেলওয়ে ইত্যাদি সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিন্ন করে চট্টগ্রামকে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত করে ফেলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের, অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র লুট করতে পারলেও তারা কোনো গোলাবারুদ পান নি। এজন্য অস্ত্রাগার লুট করার পর সেখানে স্বাধীন দেশের (প্রস্তাবিত) জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে তারা গা ঢাকা দিতেন।
ভাগ্য সহায় হয় নি। কিছুদিন বাদেই ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনী জালালাবাদের কাছে সূর্যসেনের ‘রিপাবলিকান আর্মি’র একটি দলকে কোণঠাসা করে ফেলে ১২ জন বিপ্লবীকে হত্যা করে, অনেককে গ্রেপ্তার করে। তবে সেই খণ্ডযুদ্ধ থেকে মাস্টারদা’ সূর্য সেন অল্প কয়েকজন বিপ্লবী নিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
এরপর তিনি ব্রিটিশদের রোষানল থেকে বাঁচতে কখনও শ্রমিক, কখনও কৃষক, কখনও পুরোহিত এমনকি কখনও ধার্মিক মুসলমানের ছদ্মবেশে লুকিয়ে থাকতে লাগলেন। কিন্তু ধরা পড়ে গেলেন। হিংসা আর অর্থের লোভে নেত্র সেন নামে এক লোক তাকে ধরিয়ে দিল।
কনডেম্ড সেলে সূর্য সেনকে কড়া পাহারায় নির্জন কুঠুরিতে রাখা হতো। একজন কয়েদি মেথর মাস্টারদা’ সূর্য সেনের লেখা চিঠি ময়লার টুকরিতে নিয়ে জেলের বিভিন্ন ওয়ার্ডে বন্দী বিপ্লবীদের দিয়ে আসতো।
মৃত্যুর আগে জেলে আটক বিপ্লবী কালীকিঙ্কর দে’র কাছে সূর্য সেন পেন্সিলে লেখা একটি বার্তা পাঠান। সে বার্তায় তিনি লেখেন “আমার শেষ বাণী-আদর্শ ও একতা”। তিনি স্মরণ করেন তাঁর স্বপ্নের কথা— স্বাধীন (অবিভক্ত) ভারতের স্বপ্ন যার জন্য জীবনভর উৎসাহ ভরে ও অক্লান্তভাবে পাগলের মতো তিনি ছুটেছেন। তাঁর ভাষায় “স্বাধীনতার বেদীমূলে যেসব দেশপ্রেমিক জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের নাম রক্তাক্ষরে অন্তরের অন্তরতম প্রদেশে লিখে রেখো।” তিনি সংগঠনে বিভেদ না আসার জন্য একান্তভাবে আবেদন করেন।
সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশরাজ মাস্টারদা’ সূর্য সেনকে এবং তারকেশ্বর দস্তিদারকে সেনারা নির্মমভাবে অত্যাচার করে। হাতুড়ি দিয়ে তাঁর দাঁত ভেঙে দেয় এবং তাঁর হাড়ও ভেঙে দেয়। হাতুড়ি দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে অত্যাচার করা হয়। এরপর তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। অজ্ঞান অবস্থাতেই তাকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলানো হয়।
মহাবিপ্লবী সূর্য সেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারের লাশ আত্মীয়দের হাতে হস্তান্তর করা হয় নি। হয় নি তাঁদের ধর্মীয় আচারমতে সৎকারও। ফাঁসির পর লাশ দুটো জেলখানা থেকে ট্রাকে করে ৪ নম্বর স্টিমার ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর মৃতদেহ দুটোকে ব্রিটিশ ক্রুজার “The Renown”-এ তুলে নিয়ে বুকে লোহার টুকরো বেঁধে বঙ্গোপসাগর আর ভারত মহাসাগরের সংলগ্ন একটি স্থানে ফেলে দেওয়া হয়।
ইতিহাসে আজকের দিনটি এই মহান বিপ্লবীর মহাপ্রয়াণ দিবস। ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি তিনি চলে যান মহালোকের ওপারে।
তার এই মহাপ্রয়াণ দিবসে আমাদের সশ্রদ্ধ বিপ্লবী সালাম।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।