কিশোরীর পেট থেকে ২ কেজি চুলের কুণ্ডলী উদ্ধার!
অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীর পাকস্থলী থেকে জমাট চুলের একটি কুণ্ডলী বের করেছেন চিকিৎসকেরা। দেখতে কিছুটা লম্বাটে এ কুণ্ডলীর ওজন ছিল প্রায় দুই কেজি। এটি পাকস্থলী এবং এর নিচের অংশ (ডিওডেনাম) পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সার্জারি বিভাগে এই অস্ত্রোপচার করা হয়। চিকিৎসকেরা বলছেন, খাদ্যদ্রব্য ছাড়াও নানা ধরনের জিনিস খাওয়ার অভ্যাস থাকে কারও কারও। মনস্তাত্ত্বিক কিছু কারণে এমন সমস্যা হয়ে থাকে। তবে দীর্ঘদিন চুল খেতে খেতে পাকস্থলীর মধ্যে জমাট বাঁধা চুল পাওয়ার ঘটনা বাংলাদেশে বিরল।
পরীক্ষা-নিরীক্ষায় পাকস্থলীতে চুলের অস্তিত্ব পাওয়ার পর মেয়েটি চিকিৎসকদের জানিয়েছে, সে নিজের চুল নিজেই খেত। হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগের রেজিস্ট্রার মো. রশিদুল হক বলছেন, নিজের মাথার চুল অস্বাভাবিকভাবে তুলে ফেলার এ মানসিক সমস্যার নাম ট্রাইকোটিলোম্যানিয়া।
চিকিৎসকেরা জানান, মেয়েটির বাড়ি গাজীপুরে। অস্ত্রোপচারের ২০ দিন আগে সে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। চিকিৎসা নিতে আসার আগে দুই মাস ধরে পেটব্যথা হতো তার। খাবার খেলেই বমি হতো। হাসপাতালে আসার পর চিকিৎসকেরা তার পেটে একটি চাকার অস্তিত্ব শনাক্ত করেন। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়, পাকস্থলীর ভেতরে চুল জমাট বেঁধে যাওয়ার কারণেই সে এসব সমস্যায় ভুগছে।
দেড় ঘণ্টা ধরে চলা এই অস্ত্রোপচারের নেতৃত্ব দেন হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক তপন কুমার সাহা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এর আগে রোগীদের নানান ধরনের অস্বাভাবিক জিনিস খেতে দেখলেও দীর্ঘ চিকিৎসাজীবনে কখনোই এমন হেয়ার বল (চুলের কুণ্ডলী) দেখিনি। মনস্তাত্ত্বিক সমস্যার কারণে মানসিক রোগ বিভাগ থেকেও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে তাকে। অস্ত্রোপচারের পর মেয়েটি ভালো আছে। আশা করা যাচ্ছে, কিছুদিনের মধ্যেই সে স্বাভাবিকভাবে খাবার খেতে পারবে।’
অস্ত্রোপচার দলটিতে আরও ছিলেন সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক নাজমুল হাকীম, রাজিবুল হক, তানভীর শুভ, সঞ্জিত বণিক, তুহিন তালুকদার, হোসনি মোবারক, কাজী মাজহার ও নাসের সায়েম।
ডা. তানভীর শুভ জানালেন, মেয়েটি দীর্ঘদিন ধরেই নানান সমস্যায় ভুগছিল। অল্প পরিমাণ খাবার খেলেই পেট ভরে যেত তার। ১০ বছর বয়স থেকে নিজের চুল ছিঁড়ে খেয়ে নিত সে। তবে তার মা-বাবা এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা ভাবতেন, চুল ছিঁড়ে মুখে দেওয়ার পর সে মুখ থেকে তা বের করে ফেলত।
কিশোর-তরুণদের মাঝে এমন মানসিক সমস্যা বেশি হয়ে থাকে বলে উল্লেখ করেন ডা. মো. রশিদুল হক। তিনি বলেন, চুল তুলে না ফেললে তাদের মধ্যে অসহনীয় একধরনের দুশ্চিন্তা তৈরি হয়। সাধারণত অন্য কারও সামনে তারা এ কাজ করে না। এ সমস্যায় আক্রান্তদের একটি বড় অংশ নিজেদের তুলে ফেলা চুলগুলো খেয়ে ফেলে। চুল হজম হয় না বলে তা পাকস্থলীতে জমা হতে থাকে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে চুল জমাট বেঁধে গিয়ে পেটব্যথা ও বমি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
তাই পরিবারের কোনো সদস্যকে অস্বাভাবিক হারে নিজের চুল কিংবা ভ্রু টেনে ছিঁড়তে দেখলে কিংবা অস্বাভাবিকভাবে কারও চুল কমে যেতে দেখলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. রশিদুল হক। চিকিৎসা নিলে এ রোগ সম্পূর্ণভাবে ভালো হয়ে যায়। তবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় কেউ দু-একটি চুল তুলে ফেললে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এ ছাড়া মাটি, কাঠ, কলমের কালি প্রভৃতি খাওয়ার স্বভাব থাকতে পারে, এই সমস্যাটির নাম পিকা। এমনটা হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তবে বেড়ে ওঠার বয়সে অনেক শিশু মাটি, কাঠ বা খেলনা মুখে দিয়ে খেতে পারে। এটি কোনো রোগ নয়। এ নিয়ে ভয় পাওয়ারও কিছু নেই।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।