নারী কৃষকের উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্য বাজারে অবাধে বিক্রি, নারী খুচরা কৃষি উপকরণ বিক্রেতাদের প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি এবং বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটিতে কোঠাভিত্তিক অন্তর্ভুক্তিকরণের দাবিতে নারী কৃষক ফোরামের সাথে বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (৬ জানুয়ারি) দাতা সংস্থা গ্রো এবং অক্সফ্যাম এর আর্থিক সহায়তায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আভাস, বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উচাপুল বাজারের ব্যবস্থাপনা কমিটি এবং এলাকার নারী কৃষক ফোরামের মধ্যে আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এর আগে গত ৩০ ডিসেম্বর বরিশাল সদর উপজেলার কাগাশুরা বাজার কমিটি ও গৌরনদী উপজেলাধীন বাটাজোর দেওপাড়া শাহী বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাথে দুটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বরিশাল সদর উপজেলা নারী কৃষক ফোরামের সাথে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন কাগাশুরা বাজার কমিটির সভাপতি এমডি শাহআলম দিদার, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ইউপি মেম্বার মনির সরদার।

দেওপাড়া শাহী বাজারে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন দেওপাড়া শাহী বাজার কমিটির সভাপতি মোঃ মুজিবর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউপি সদস্য মায়া বেগম, খোকন শিকদার এবং শহিদুল ইসলাম।

ইচাপুল বাজারের সভায় সভাপতিত্ব করেন মোঃ ইয়াকুব মৃধা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুরষ্কারপ্রাপ্ত নারী কৃষক পারুল বেগম এবং আভাসের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সিরাজুল ইসলাম। সভা পরিচালনা করেন আভাসের প্রজেক্ট অফিসার খায়রুল ইসলাম সুমন।

আলোচনাসভায় বক্তারা বলেন, নারী কৃষকের অধিকার প্রতিষ্ঠা, খাদ্য নিরাপত্তায় তাদের অবদানের স্বীকৃতি আদায়, নারী কৃষকবান্ধব আইন ও নীতি প্রণয়ন এবং নারী বান্ধব বাজার ব্যবস্থা করার দাবি জানান। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ‘বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তায় নারী কৃষকদের অধিকার সংরক্ষণে জাতীয় প্রচারাভিযান’ কার্যক্রম ২০১৪ সাল থেকে বরিশাল জেলা নারী কৃষক ফোরামের সদস্য, সিভিল সোসাইটি প্রতিনিধি, গণমাধ্যম, সিএসআরএলর মেম্বার এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ও স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সহযোগিতায় বাস্তবায়ন করে আসছে।

বাংলাদেশের তৃণমূল পর্যায়ের নারী কৃষকগণ তাদের অধিকার এবং দাবি-দাওয়া বিষয়ে সরাসরি নীতি নির্ধারকদের কাছে তাদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারে না। তাই নারী কৃষক প্রচারাভিযান কার্যক্রম নীতি নির্ধারক, সাংসদ ও নাগরিক সমাজের মধ্যে একটি যোগাযোগ স্থাপন করতে সহায়তা করবে। যাতে নারী কৃষকের প্রয়োজনগুলো নীতি আকারে নিয়ে আসা যায় এবং তা আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে নেয়া সম্ভব হয়। 

সভায় তুলে ধরা লিখিত দাবিসমূহ হলো:

১. নারী বান্ধব বাজার অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।

২. বাজারের নারী ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের জন্য আলাদা জায়গা রাখতে হবে এবং বাজারের দোকান বরাদ্দের সময় নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে।

৩. বাজারে বাধ্যতামূলকভাবে টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে।

৪. বাজার কমিটিতে নারী দোকানদারদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

৫. বাজার থেকে মধ্যস্বত্তভোগীদের দৌরাত্ম দূর করতে হবে।

৬. বাজার লিংকেজ ব্যবস্থা উন্নয়ন এবং অনলাইন/ই-মার্কেট ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

৭. যে সকল বাজারে নারী ব্যবসায়ীদের দোকান আছে সে সকল বাজারগুলোতে সরকারি সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি এবং আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।

৮. দোকান বরাদ্দের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী নারীদের জামানত পুরুষদের চেয়ে কম করতে হবে এবং ব্যাংকিং সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে।

৯. নারী কৃষকরা যাতে বিনা বাঁধায় অর্থাৎ সরাসরি বাজারে উৎপাদিত পণ্য এনে বিক্রি করতে পারে তার সুব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

১০. প্রতিটি বাজারে মালামাল রাখার জন্য হিমাগারসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

১১. সরকারি-বেসরকারি সংস্থা যারা নারী উন্নয়ন এবং নারী কৃষকদের অধিকার নিয়ে কাজ করে তাদেরকে গ্রাম পর্যায়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে এবং নারীদের সংগঠিত করতে হবে।