২০১৫-তে কর্মক্ষেত্রে প্রাণ গেছে ৩৭৩ শ্রমিকের
২০১৫ সালে সারাদেশে শুধু কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৩৭৩ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। মোট ২৮২টি কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় এসব শ্রমিকের মৃত্যু হয়। ২০১৪ সালে ২৭১টি কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় ৩২০ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছিল। সংবাদপত্রের ওপর পরিচালিত এক জরিপে পাওয়া এ তথ্য প্রকাশ করেছে বেসরকারি সংস্থা সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি। তারা ২৬টি দৈনিক সংবাদপত্র মনিটরিং করে এক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্মাণ খাতে মৃত্যুর সংখ্যা সর্বাধিক ১৪৭ জন, যা মোট মৃত্যুর প্রায় ৪০ শতাংশ। এর পরেই রয়েছে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান যেমন- হোটেল, ওয়ার্কশপ, ইত্যাদিতে ১০১ জন। কল-কারখানা ও অন্যান্য উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানে মৃত্যুর সংখ্যা ৯৩ জন। এছাড়া কৃষিতে ৬ জন এবং পরিবহন খাতে ২৬ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
জরিপে আরও উল্লেখ করা হয়, সবচে বেশি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে, যার সংখ্যা মোট ১১০ জন। এছাড়া আগুনে পুড়ে ৩১ জন। শক্ত বা ভারী কোন বস্তুর দ্বারা আঘাত বা তার নিচে চাপা পড়ে ৪৭ জন। ছাদ, মাঁচা বা ওপর থেকে পড়ে ৪৪ জন, ছাদ বা দেয়াল ধ্বসে ২৩ জন এবং সেপটিক ট্যাঙ্ক বা পানির ট্যাঙ্কের বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে ২৩ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া অন্যান্য কারণে ৯৫ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, বয়লার, কেমিক্যাল বা গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরণ, মেশিনে বা ফিতায় জড়িয়ে যাওয়া, সড়ক দুর্ঘটনা, ভূমিধ্বস, পানিতে ডুবে যাওয়া এবং বজ্রপাত প্রভৃতি।
সেইফ্টি এন্ড রাইটস সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক সেকেন্দার আলী মিনা বলেন, ‘এ জরিপ প্রতিবেদনে মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা পাওয়া যায়নি কারন অনেক দুর্ঘটনারই সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় না। তাছাড়া কখনও মনে হয় শ্রমিকদের মৃত্যু যেন কোন ঘটনাই নয়। কেননা তেমন কোন খরচ ছাড়া শুধু সচেতনতার মাধ্যমেই এসব মৃত্যু প্রতিহত করা সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স গার্মেন্টস-এর নিরাপত্তার বিষয়ে কাজ করছে। অনুরূপ উদ্যোগ প্রতিটি সেক্টরের জন্য নেয়া প্রয়োজন।’
কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সেফটি অ্যান্ড রাইটস প্রতিবেদনে সুপারিশ করে, শ্রম আইন অনুসরণ করে প্রতিটি কারখানায় বা শিল্প প্রতিষ্ঠানে সেফটি কমিটি গঠন করা দরকার। এছাড়া মহামান্য হাইকোর্ট এর রায় মেনে কোড এনফোর্সমেন্ট অথরিটি গঠনপূর্বক বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ২০০৬ যথাযথ বাস্তবায়ন করা, আইন বাস্তবায়নে রাজউক ও কল-কারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরসহ অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্য নীতি প্রণয়ন করা, নির্মাণ কাজ শুরুর পূর্বে নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও অনুসরণ করা, বিনামূল্যে কর্মরত শ্রমিকদের যথাযথ ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম প্রদান করা, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান এবং যথাযথভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা।
কর্মক্ষেত্রে আহত বা নিহত শ্রমিক বা যারা কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ঝুঁকিতে রয়েছে তাদের আইনি অধিকার নিশ্চিত করতে সেফটি অ্যান্ড রাইটস বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। দুর্ঘটনা সংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি উক্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।