রাজীব হত্যার রায়ে উদীচীর অসন্তোষ
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫
প্রিন্টঅঅ-অ+
মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে বাংলাদেশের বিরোধীতাকারী জামায়াত-শিবির চক্র এবং যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ মাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালের ০৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে গড়ে ওঠা তরুণদের ঐতিহাসিক আন্দোলন গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক, বিশিষ্ট মুক্তমনা লেখক এবং প্রতিভাবান প্রকৌশলী আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন হত্যা মামলার রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
এক বিবৃতিতে উদীচীর সভাপতি কামাল লোহানী ও সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার বলেন, এই রায় সকল ন্যয়বিচার প্রত্যাশীকে হতবাক করেছে। হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী এবং সরাসরি হত্যায় অংশ নেওয়া আট আসামীর মধ্যে মাত্র দু’জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া, হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী এবং প্রধান উস্কানিদাতা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি মো. জসীমউদ্দিন রাহমানীর মাত্র পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। দেশের প্রতিভাবান সন্তানদের হত্যার পরিকল্পনাকারীকে এভাবে স্বল্প সাজা দেয়া হলে ভবিষ্যতে এধরনের হত্যাকাণ্ডে প্ররোচনা দিতে মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক ঘাতক চক্র আরো বেশি উৎসাহিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে উদীচী।
বিবৃতিতে উদীচীর নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, মামলায় অভিযুক্ত নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্রই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও তাদের মধ্যে মাত্র দু’জনের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়ায় বাকিরা অপরাধের তুলনায় অনেক কম শাস্তি ভোগ করছে বলে মনে করে উদীচী। অবিলম্বে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের দেয়া এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করার মাধ্যমে রাজীব হায়দার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও উস্কানিদাতা মুফতি মো. জসীমউদ্দিন রাহমানীসহ সকল আসামীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা এবং দ্রুত তা কার্যকর করার মাধ্যমে দেশের প্রগতিশীল, মুক্তিযুদ্ধে স্বপক্ষের জনতার প্রত্যাশা পূরণের উদ্যোগ নিতে সরকার ও প্রশাসনের প্রতি আহবানও জানান উদীচীর সভাপতি কামাল লোহানী এবং সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার।
বিবৃতিতে কামাল লোহানী এবং প্রবীর সরদার আরো বলেন, আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন ছিলেন একজন মুক্তমনা, প্রগতিশীল লেখক এবং এদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের বিভিন্ন আন্দোলনের অগ্রসৈনিক। তাঁর লেখনী এবং যুক্তিশীল চিন্তা-চেতনার মাধ্যমে তিনি নতুন প্রজন্মকে প্রগতির পথে চলার ক্ষেত্রে বারবার অনুপ্রেরণা জানিয়েছেন।
২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে যে প্রক্রিয়ায় কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়েছিল, সেই একই পদ্ধতিতে ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি হত্যা করা হয় রাজীব হায়দারকে। এরপর গত প্রায় তিন বছরে একে একে হত্যা করা হয়েছে মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা, বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়, তরুণ লেখক ওয়াশিকুর রহমান বাবু, সিলেট গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী অনন্ত বিজয় দাস, লেখক নীলয় নীলসহ আরো অনেককে। এসব হতাকাণ্ডের যথাযথ বিচার নিশ্চিত করার মাধ্যমে হত্যাকারীদের যথোপযুক্ত শাস্তি প্রদান করার জন্য আবারো দাবি জানান উদীচীর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
উগ্র জঙ্গীবাদীদের হামলায় এদেশের মুক্তমনা ও প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার মানুষ বারবার নিহত হলেও এখনও সরকার কেন দেশে উগ্র জঙ্গিবাদের প্রধান মদতদাতা সংগঠন, মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে বিরোধিতাকারী জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করছে না সে প্রশ্নও তোলেন কামাল লোহানী ও প্রবীর সরদার।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্য
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।