প্রচারণা শেষ, এখন অপেক্ষা ভোটের
আসন্ন ৩০ ডিসেম্বর পৌর নির্বাচনে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন ২৩৪ পৌরসভার ৭১ লাখ ভোটার। তিন সহস্রাধিক পদের জন্য ১২ হাজারেরও বেশি প্রার্থী প্রতিদন্দীতা করছে নির্বাচনে।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানিপপ চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, এবার দলভিত্তিক নির্বাচন হওয়ায় ভোটে ভিন্ন আমেজ এনেছে। পাশাপাশি দলগুলোর মধ্যেও বিরাজ করছে অনেকটা মর্যাদার লড়াইয়ের মতো।
বিএনপির কাছেও এই নির্বাচন আন্দোলনের একটি অংশ। অন্যদিকে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের কাছে তা নিজেদের জনপ্রিয়তা প্রমাণের লড়াই।
নির্বাচন কমিশন জানায়, সব প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। মাঠে রয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগন। মঙ্গলবার(২৯ ডিসেম্বর) ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা পাহারায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ও নির্বাচনী সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হবে।
এবার ২০টি রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনী এলাকায় ছিল একেবারেই ভিন্ন আমেজ। সেই সঙ্গে নৌকা-ধানের শীষের লড়াইও হচ্ছে প্রায় সাত বছর পর। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট হলেও বিএনপি ও জাতীয় পার্টি সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে। বিধি লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোতে শক্ত হতে না পারার সমালোচনাবিদ্ধ নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ প্রচারের শেষ দিনেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অনেকটা অসহায় কণ্ঠেই রাজনৈতিক দলগুলোর সহায়তা চেয়েছেন।
সবার প্রতি সমান আচরণ করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন সিইসি। মারধর, হামলার ঘটনা ঘটলেও পরিস্থিতি অনেক এলাকায় ভালো বলেও তিনি মনে করেন। দশম সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দেওয়ায় জমে উঠেছে এই ভোট। অর্ধশতাধিক পৌরসভায় দলীয় নেতাকর্মী-প্রার্থীদের মধ্যে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
নির্বাচন কমিশনার মোঃশাহনেওয়াজ বলেন, নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। এখন ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোট দেওয়ার পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে। সেই সঙ্গে অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইসি সচিব মোঃসিরাজুল ইসলাম জানান, দলভিত্তিক ভোট হওয়ায় এবারের চ্যালেঞ্জটাও রয়েছে তাদের। তবে সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের আশা প্রকাশ করেন তিনি। সোমবার মধ্যরাতে প্রার্থীদের সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। ফলে প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি সোমবার মধ্যরাতের পর কোনো ধরনের প্রচারণা চালাতে পারবেন না।
এখন শুধু প্রার্থীদের ভোটের হিসাব-নিকাশ মেলানোর পালা। ঘরে ঘরে ভোট চাওয়া শেষে নির্বাচনী এজেন্ট ও ভোট সংশ্লিষ্টদের নিয়ে পরিকল্পনায় বসছেন তারা। প্রার্থীদের ভোটের হিসাব-নিকাশের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লক্ষাধিক সদস্যকে মাঠে রেখেছে।
ইসির উপ সচিব সামসুল আলম জানান, পুলিশের প্রায় ৪৫ হাজার সদস্য, বিজিবির ৯ হাজার ৪১৫ সদস্য, র্যাবের ৮ হাজার ৪২৪ সদস্য, কোস্টগার্ডের ২২৫ সদস্য, আনসার-ভিডিপির ৪৯ হাজার ৭২৮ সদস্য এবং ব্যাটালিয়ন-আনসারের ৪ হাজার ৫১২ সদস্য চার দিনের জন্য মাঠে রয়েছে। সব মিলিয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মোট ১ লাখ ১৭ হাজার ৩০৪ সদস্য মাঠে থাকছে বলে জানান তিনি।
এছাড়া সোমবার থেকে মাঠে রয়েছে ১ হাজার ২০৪ জন নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম।
ভোটের দিন ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২০ জন ও সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন নিরাপত্তা সদস্য নিয়োজিত থাকবে। এসব পৌরসভায় মোট ভোটকেন্দ্রের এক-তৃতীয়াংশ ভোট কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ।
বিএনপির সেনা মোতায়েনের দাবি প্রত্যাখ্যান করেই সিইসি কাজী রকিব বলেন, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য ভোটের মাঠে কাজ করছে।
এদিকে সোমবার রাত ১২টার পর বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকা ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সোমবার থেকে এক সপ্তাহ পর্যন্ত অস্ত্রের লাইসেন্সধারীদের সবধরনের অস্ত্র বহন ও প্রদর্শনও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ সচিব সামসুল আলম জানান, ২৩৪ পৌরসভা নির্বাচনে ২০টি দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে মেয়র পদে ৯৪৫ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন।
এরমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের সাত মেয়র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৮ হাজার ৭৪৬ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ৪৮০ জন। তবে এদের মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র পদে ৭ জন এবং কাউন্সিলর পদে ৯৪ জন ও নারী কাউন্সিলর পদে ৪০ জন নির্বাচিত হয়েছেন।
ইসির উপ সচিব সামসুল আলম জানান, এবার মেয়র পদে আওয়ামী লীগের ২৩৪ জন, বিএনপির ২২৩ জন, জাতীয় পার্টির ৭৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন। দলীয় প্রার্থী ৬৬০ জন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে ২৮৫ জন। এতে অর্ধশতাধিক আওয়ামী লীগ-বিএনপির বিদ্রোহীরা স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এছাড়া এলডিপির ১ জন, জেপির ৬ জন, সিপিবির ৪ জন, ন্যাপের ১ জন, ওয়ার্কার্স পার্টির ৮ জন, বিকল্পধারার ১ জন, জাসদের ২১ জন, বাসদের ১ জন, তরীকত ফেডারেশনের ১ জন, এনপিপির ১৭ জন, পিডিপির ১ জন, ইসলামী ঐক্যজোটের ১ জন, খেলাফত মজলিসের ১ জন, ইসলামী আন্দোলনের ৫৭ জন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ১ জন মেয়র প্রার্থী রয়েছেন।
২৩৪ পৌরসভার ৩ হাজার ৫৫৫টি ভোটকেন্দ্রে ভোট হবে। এসব ভোটকেন্দ্রে ভোটকক্ষ থাকছে ২১ হাজার ৭১টি। রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা থাকবেন প্রতিটি পৌরসভায়। ৬৬ হাজার ৭৬৮ জন রয়েছেন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা।
প্রতি কেন্দ্রে ১ জন করে ৩ হাজার ৫৫৫ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, প্রতি বুথে ১ জন করে ২১ হাজার ৭১ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এবং প্রতি ভোটকক্ষে ২ জন করে ৪২ হাজার ১৪২ জন পোলিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এই ২৩৪ পৌরসভায় মোট ভোটার রয়েছে ৭০ লাখ ৯৯ হাজার ১৪৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩৫ লাখ ৫২ হাজার ২৮৪ জন এবং নারী ভোটার ৩৫ লাখ ৮৬ হাজার ৮৬০ জন।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।