চাঁন্দপুরে ভূমিরক্ষা আন্দোলনে চা বাগান শ্রমিকরা
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার চাঁন্দপুর চা বাগানের নামে ইজারা নেওয়া জমিতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করার উদ্যোগের প্রতিবাদে ভূমিরক্ষা আন্দোলন করেছেন প্রায় ১৬ হাজার শ্রমিক।
২০ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে আন্দোলনরত শ্রমিকরা সাত দিনের মধ্যে তাদের দাবি মেনে না নিলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার আলটিমেটাম দেন। পরে তারা জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপি দেন।
গতবছর সরকার দেশের ১০০টি স্থানে স্পেশাল ইকোনোমিক জোন প্রতিষ্ঠার ঘোষণার পর চাঁন্দপুরের ৫১১.৮৩ একর জমি ফিরিয়ে নিয়ে শিল্পাঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করে বাংলাদেশ ইকোনোমিক জোন অথরিটি বেজা।
প্রায় দেড়শতক ধরে কৃষিকাজে ব্যবহৃত ওই জমিতে শিল্পাঞ্চল গড়ার পরিকল্পনার কথা জানতে পেরে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা শুরু করেন ডানকান ব্রাদার্স এর ওই চা বাগানের শ্রমিকরা। এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ১ ডিসেম্বর ভূমিরক্ষা কমিটি গঠিত হয়।
কিন্তু ১২ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষ থেকে ওই জমিতে খুঁটি গেড়ে শিল্পাঞ্চলের জন্য দখল নেওয়ার কথা জানানো হয়।
এই প্রেক্ষাপটে ১৩ ডিসেম্বর সকাল থেকে চাঁন্দপুর বাগান ও চাঁন্দপুর ফাঁড়ির অন্তর্ভুক্ত বেগমখান, জোয়ালভাঙা ও রামগঙ্গা চা বাগানের শ্রমিকেরা ওই জমিতে অবস্থান নিয়ে কর্মবিরতি পালন করে। কর্মবিরতিতে যোগ দেন ২৩টি চা বাগানের শ্রমিকরা পরদিন হবিগঞ্জ সদরে তারা বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ করে।
আন্দোলন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক কাঞ্চন পাত্র এই জমি নেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল ও দীর্ঘদিন ধরে ভোগ করে আসা তাদের বসতবাড়িসহ ক্ষেতল্যান্ড তাদের নামে রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার দাবি জানান।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও তাদের ভূমির অধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ২০১২ সালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে একই দাবি জানিয়ে এসেছিলেন চা শ্রমিকদের একটি প্রতিনিধিদল। আর সাম্প্রতিক আমরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য আবারও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবরে একটি আবেদনপত্র পাঠিয়েছি।
শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা সরকারের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে নন। কিন্তু মাত্র ৬৯ টাকা দৈনিক মজুরি নিয়ে শিক্ষা, বাসস্থান ও চিকিৎসার মত সেবা থেকে প্রায় বঞ্চিত এই জনগোষ্ঠী তাদের এই ভূমির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। এ জমির বদলে চুনারুঘাটের অন্য পতিত জমিতে শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার দাবি জানান ভূমি আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব নৃপেণ পাল।
তিনি বলেন, স্মারকলিপিতে সাতদিনের আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে। এই সময়ের মাঝে দাবি পূরণ না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব আমরা।
শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে চুনারুঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুল কবির বলেন, ১৯৭২ সালে এই চা বাগানগুলোর জমি ইজারা দেওয়া হয়। ওই জমিতে চা চাষ করার কথা থাকলেও, ইজারাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানটি পুরো জমিতে তা করছে না। বরং ওই জমির একটি অংশ মৌখিক চুক্তির ভিত্তিতে শ্রমিকদের ব্যবহার করতে দিয়েছে তারা। জমিগুলো মূলত নিচু ও অনাবাদি। গত কয়েক বছরে অল্প আবাদ হচ্ছে। আর ইকোনোমিক জোন হলে যে তারাও লাভবান হবে এ কথা কোনো এক কারণে তারা বুঝতে পারছেন না।
সাহস২৪ ডটকম-এর প্রকাশিত প্রচারিত কোনো সংবাদ তথ্য, ছবি, রেখাচিত্র, ভিডিও, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর একান্তই নিজস্ব। সাহস২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে এসব মন্তব্যের কোনো মিল নাও থাকতে পারে। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে সাহস২৪ ডটকম-এর কর্তৃপক্ষ আইনগত বা অন্য কোনো দায় নেবে না।